অনেক পুরুষই যৌন শক্তি ফিরে পেতে বিভিন্ন ধরনের ওষুধ সেবন করে থাকেন। জানেন কি, এই ওষুধ সেবনই আপনার জীবনে কাল হয়ে দাঁড়াতে পারে। সম্প্রতি কানাডার ইউনিভার্সিটি অফ ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার গবেষকরা এমনটাই দাবি করছেন।
ব্রিটিশ কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই গবেষকরা ২০০৬ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ২ লাখ ১৩ হাজার পুরুষদের মধ্যে এ গবেষণা করে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শক্তি বর্ধক বিভিন্ন ওষুধ সেবনে আপনি অকালেই হারাতে পারেন দৃষ্টিশক্তি।
শক্তি বর্ধক বা ইরেকটাইল ডিসঅফংশানে (ইডি) কার্যকর ওষুধের প্রথম সারিতে রয়েছে ভায়াগ্রার নাম। এছাড়া সিয়ালিস, লেভিট্রা এবং স্পেড্রার মতো জনপ্রিয় ওষুধের সঙ্গেও দৃষ্টিহীনতার বিষয়টি লক্ষ্য করেছেন গবেষকরা।
তারা বলছেন, এই ধরনের ওষুধ শক্তি বর্ধকে কার্যকর হলেও শরীরের অন্যান্য অংশে তা রক্ত চলাচলে বাধা দিতে পারে। এছাড়া নিয়মিত এই ওষুধ সেবনে সেবনকারী আকস্মিক দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলতে পারে, আলোর ঝলকানি বা চোখের মধ্যে ‘ফ্লোটার’ বা কালো দাগের অনুভূতি হতে পারে। এই অবস্থায় চোখের রেটিনা ছিঁড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায় ১৫৮ শতাংশ।
এ বিষয়ে ব্রিটিশ কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ প্রধান গবেষক ডা. মাহিয়ার এটমিনান বলেছেন, যারা নিয়মিত এ ধরনের ওষুধ ব্যবহার করে তাদের দৃষ্টি সমস্যা এড়াতে চিকিৎসা গ্রহণ করা উচিত।
ডা. এটমিনান আরো বলেন, তবে আশার কথা হলো শরীরের প্রতিরোধ কার্যকারিতা অটুট থাকলে ব্যবহারকারীর জন্য এটি হওয়ার ঝুঁকি খুব কম থাকে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি মাসে প্রায় ২০ মিলিয়ন পুরুষের প্রেসক্রিপশন সংগ্রহ করার মাধ্যমে গবেষকরা ধারণা করছেন এই ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় পুরুষদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত হতে পারে।
গবেষণায় আরো দেখা যায়, যারা এই ধরনের ওষুধ সেবন করে চোখের দৃষ্টিক্ষীণতায় ভুগছেন তারা এই ধরনের ওষুধ নিয়মিত ব্যবহার করার আগে কেউই কোনো প্রকার চোখের সমস্যায় ভোগেননি।
এই গবেষণায় এসব ওষুধ ঠিক কোন মাত্রায় কীভাবে সেবন করলে এর প্রতিকার করা যাবে তা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পাওয়ার জন্য আরো গবেষণার প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। আর ততদিনের জন্য ওষুধ কোম্পানিগুলোকে ওষুধের মোড়কের ওপর সতর্কতা লেবেল লাগানোর পরামর্শ দিয়েছেন গবেষকরা।
এদিকে বাংলাদেশে যৌন উত্তেজক ওষুধে ঝুঁকছে যুবকরা। গোপনে চলছে আমদানি ও বিপণন নিষিদ্ধ ওষুধের বাণিজ্য। বিভিন্ন চোরাইপথে বাজারে আসছে এসব ওষুধ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব এক ধরনের মাদক। এগুলো শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কিছু অভিযান চালালেও মূল হোতারা থাকছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন ছাড়া ঢালাওভাবে বিক্রি করায় চিন্তিত চিকিৎসকেরা। বিশেষজ্ঞরা চিকিৎসকের অনুমতি ছাড়া না খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ঢাকা ও সারা দেশ থেকে খুচরা ওষুধ বিক্রেতারা রাজধানীর মিটফোর্ড ও চানখাঁরপুল থেকে দেশি-বিদেশি যৌন উত্তেজক ওষুধ কিনছেন। এরপর তাদের এলাকায় চড়া দামে বিক্রি করছেন।
খুচরা বিক্রেতারা অন্যান্য ওষুধের সঙ্গে মিলিয়ে চাহিদা মতো এসব ওষুধ কিনে নেন। শাহবাগ, আরামবাগ, কলাবাগান, গুলশান-২, কলেজগেট, শ্যামলী, পঙ্গু-শিশু হাসপাতালের সামনের ফুটপাতসহ অনেক জায়গায় এসব খুচরা কিনতে পাওয়া যায়।
মিটফোর্ডের কয়েকজন ওষুধ বিক্রেতা জানান, রাজধানীর অভিজাত এলাকার ওষুধের দোকানে খুচরা বেশি বিক্রি হয়। উচ্চবিত্ত শ্রেণিরা এর বড় ক্রেতা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, আমদানি-নিষিদ্ধ থাকলেও ভারত, পাকিস্তানসহ কয়েকটি দেশ থেকে এসব ওষুধ দেশে আসে। মাঝে-মধ্যেই বিমানবন্দরে ধরা পড়ে চালান। ছোট ছোট ব্যবসায়ীরা ধরা পড়লেও মূল হোতারা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়।
কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রায়ই আমদানি-নিষিদ্ধ ওষুধ জব্দ করা হয়। ২০০৭ সালের ৬ সেপ্টেম্বর বিমানবন্দর কাস্টমস প্রায় সোয়া কোটি টাকার আমদানি-নিষিদ্ধ উত্তেজক ওষুধ জব্দ করে। ২০০৮ সালের ৪ সেপ্টেম্বর কার্গো ভিলেজে পড়ে থাকা পাঁচটি বড় কার্টন কাস্টমস কর্মকর্তারা গোয়েন্দা সংস্থার উপস্থিতিতে খুলে দেখেন কয়েক হাজার পিস উত্তেজক ওষুধ। এ চালান আনা হয় ভুয়া একটি গার্মেন্টের নামে। এর সঙ্গে জড়িত সিদ্দিক নামে এক পাকিস্তানি নাগরিককে গ্রেপ্তার করা হয়।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, উপযুক্ত চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া কোনো উত্তেজক ওষুধ সেবন করা ঠিক নয়। এতে শরীরের স্বাভাবিক ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়।
এ বিষয়ে চর্ম ও যৌনরোগ বিশেষজ্ঞ ডা.মাহমুদ চৌধুরী বলেন, নারী এবং পুরুষদের মধ্যে ২ থেকে ৫ শতাংশের শারীরিক দুর্বলতা থাকতে পারে। বাকিরা বিভ্রান্ত হয়ে উত্তেজক ওষুধ খায়। এসব ওষুধ হৃদরোগ ও কিডনি সমস্যার ঝুঁকি বাড়ায়। দীর্ঘদিন ব্যবহারে দৃষ্টিশক্তি ও স্মৃতিশক্তি কমে যায়। লিভার ও নার্ভ ড্যামেজ হয়ে যাওয়ারও আশঙ্কা থাকে।
ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. রুহুল আমিন বলেন, বিদেশি এ ধরনের কোনো ওষুধ অনুমোদন দেয় না প্রশাসন। আমাদের দেশে এ ধরনের কিছু ওষুধ বিক্রির অনুমোদন থাকা সত্ত্বেও বিদেশি ওষুধ সেবন করছেন কেউ কেউ। যা ডায়াবেটিস ও কিডনি রোগের মতো মারাত্মক রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
এসডব্লিউ/এসএস/২১০৮
আপনার মতামত জানানঃ