সিলেটের বিজ্ঞানলেখক ও ব্লগার অনন্ত বিজয় দাশ (৩২) হত্যা মামলার রায়ে চারজনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এ মামলায় খালাস পেয়েছেন একজন। আজ বুধবার(৩০ মার্চ) সিলেটের সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালের বিচারক নুরুল আমীন বিপ্লব এ রায় ঘোষণা করেন।
দণ্ডপ্রাপ্তরা হলো—আবুল হোসেন, আবুল খায়ের রশীদ আহমেদ, মামুনুর রশীদ ওরফে হারুনুর রশীদ ও ফয়সাল আহমদ। তাদের মধ্যে আবুল খায়ের কারাগারে আছেন। অপর তিন আসামি পলাতক।
এদিকে অপরাধ প্রমাণ না হওয়ায় ফারাবী সাফিউর রহমানকে খালাস দিয়েছে আদালত। কারাবন্দি অবস্থায় এ বি মান্নান ইয়াইয়া ওরফে ইবনে মঈনের মৃত্যু হওয়ায় তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
রাষ্ট্রপক্ষের বিশেষ আইনজীবী মোমিনুর রহমান টিটু এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, ‘এই মামলার চার আসামিকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। রায় ঘোষণার সময় আসামি আবুল খায়ের রশীদ আহমদ এবং শফিউর রহমান ফারাবী উপস্থিত ছিলেন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অপর তিন আসামি পলাতক রয়েছেন। এই রায়ের মাধ্যমে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এ রকম সন্ত্রাস এবং খুন করে কেউ রেহাই পাবে না, তা আবারও প্রমাণ হয়েছে।’
বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনির উদ্দিন বলেন, পলাতকদের বিরুদ্ধে সাজা পরোয়ানা ইস্যু করেছেন আদালত। অনন্ত হত্যা মামলায় ২৯ সাক্ষীর মধ্যে ২৪ জন আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন।
আসামি পক্ষের আইনজীবী আব্দুল আহাদ বলেন, ‘আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে এই রায় দেওয়া হয়েছে। কোনোভাবেই অভিযুক্তদের অপরাধ প্রমাণ করা যায়নি। তাদের সঙ্গে অনন্ত বিজয়ের বিন্দুমাত্র সম্পর্কও পাওয়া যায়নি। আমরা এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাব।’
এর আগে গত ১৪ মার্চ যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে রায়ের তারিখ ঘোষণা করেন সিলেটের সন্ত্রাস বিরোধী ট্রাইব্যুনালের বিচারক নুরুল আমীন বিপ্লব।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালের ১২ মে সিলেট নগরের সুবিদবাজারে নুরানি আবাসিক এলাকার নিজ বাসার সামনে খুন হন অনন্ত। পেশায় ব্যাংকার অনন্ত বিজ্ঞান নিয়ে লেখালেখির পাশাপাশি ‘যুক্তি’ নামে বিজ্ঞানবিষয়ক একটি পত্রিকা সম্পাদনা করতেন। এ ছাড়া বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন তিনি।
হত্যাকাণ্ডের পর অনন্তের বড় ভাই রত্নেশ্বর দাশ বাদী হয়ে সিলেট বিমানবন্দর থানায় অজ্ঞাতনামা চারজনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন। এতে বিজ্ঞান বিষয়ে লেখালেখির কারণে অনন্তকে ‘উগ্র ধর্মান্ধ গোষ্ঠী’ পরিকল্পিতভাবে খুন করেছে বলে অভিযোগ করা হয়।
মামলাটি পুলিশ থেকে অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি) স্থানান্তর করা হয়। সিআইডির পরিদর্শক আরমান আলী তদন্ত করে ২০১৭ সালের ৯ মে সম্পূরক অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করেন। এতে সন্দেহভাজন আটক ১০ জনকে অব্যাহতির সুপারিশ করে ছয়জনকে অভিযুক্ত করা হয়। মামলায় ২৯ সাক্ষীর মধ্যে ২৪ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। পরে ১৪ মার্চ পলাতক তিন আসামির যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে সিলেটের সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালের বিচারক নুরুল আমীন বিপ্লব রায় ঘোষণার জন্য আজকের তারিখ ধার্য করেন।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৫৩৪
আপনার মতামত জানানঃ