সম্প্রতি দেশে কনস্টেবল থেকে শুরু করে পুলিশের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ার প্রবণতা বেড়ে গেছে। এসব অপরাধ ও অপকর্মের মধ্যে ক্ষমতার অপব্যবহার, দায়িত্বে অবহেলা ও ঘুষ গ্রহণ ছাড়াও চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, এমনকি ধর্ষণ ও ধর্ষণচেষ্টার মতো ঘৃণ্য অপরাধও আছে।
নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে ছিনতাইয়ের সময় ফেনীর সোনাগাজী মডেল থানার তিন পুলিশ সদস্যকে আটক করেছে স্থানীয় জনতা। এ সময় তাদের কাছ থেকে ছিনতাই করা দেড় লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।
রোববার (২৭ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ১২টায় উপজেলার মুছাপুর ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ড ছোটধ্বলি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
আটকদের মধ্যে একজন হলেন সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মো. জহিরুল হক। আরও দুইজন কনস্টেবল রয়েছেন। তারা ফেনীর সোনাগাজী থানার আদর্শগ্রাম তদন্তকেন্দ্রে কর্মরত রয়েছেন।
মুছাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আইয়ুব আলী গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, রাতে দোকান বন্ধ করে ছোটধ্বলি গ্রামের ব্যবসায়ী শেখ ফরিদ বাড়ি ফিরছিলেন। এ সময় রাস্তার ওপর তিন পুলিশ সদস্য তাকে ইয়াবা ব্যবসায়ী আখ্যা দিয়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় তুলে মারধর শুরু করেন। পরে ব্যবসায়ীর কোমর থেকে দেড় লাখ টাকার বান্ডিল ছিনিয়ে নিয়ে তাকে রাস্তার পাশে ফেলে দেন।
তিনি আরও বলেন, পরবর্তীতে শেখ ফরিদের চিৎকারে আশপাশের লোকজন ধাওয়া করে সিএনজিসহ তিন পুলিশকে আটক করে। পরে ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের কাছ থেকে ব্যবসায়ীর দেড় লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়। ফেনীর পুলিশ সুপারের অনুরোধে তাদের সোনাগাজী থানা পুলিশের হাতে সোর্পদ করি।
শেখ ফরিদের চিৎকারে আশপাশের লোকজন ধাওয়া করে সিএনজিসহ তিন পুলিশকে আটক করে।
সোনাগাজী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাজেদুল ইসলাম পলাশ বলেন, বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। আদর্শগ্রাম তদন্তকেন্দ্রের ৩ পুলিশ সদস্যের সঙ্গে মুছাপুরের স্থানীয় লোকজনের সামান্য ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা চলছে।
এদিকে কদিন আগেই সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটায় ছিনতাইয়ের প্রস্তুতিকালে র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই), এক পৌর কাউন্সিলরসহ পাঁচজনকে রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। সাতক্ষীরার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. সালাহউদ্দিন গত শুক্রবার এ নির্দেশ দেন।
মামলার বিবরণে জানা যায়, আসামিরা দীর্ঘদিন ধরে গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) পুলিশ পরিচয়ে সড়ক-মহাসড়কে ছিনতাই করছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় তারা ১৭ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় সাতক্ষীরা-খুলনা মহাসড়কের পাটকেলঘাটা হারুণ-অর-রশিদ কলেজের পাশে ছিনতাই করার জন্য অবস্থান নেন।
পরে র্যাব সদস্যরা ওই পাঁচজনকে আটক করেন। এ সময় তাদের কাছ থেকে একটি ব্যক্তিগত গাড়ি, একটি মোটরসাইকেল, একটি খেলনা পিস্তল, দুটি পিস্তলের কভার, একটি ওয়াকিটকি সেট, দুটি গোয়েন্দা পুলিশের কটি, দুটি হাতকড়া, দুটি পুলিশ ফিল্ডক্যাপ, একটি পুলিশ বেল্ট, একটি গোয়েন্দা পুলিশের ভুয়া আইডি কার্ড ও একটি পিস্তল বাঁধার চেইন জব্দ করা হয়।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, পুলিশের বিভিন্ন অপকর্মে জড়িয়ে পড়ার হার আশংকাজনক। প্রায় প্রতিদিনই পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসে বিভিন্ন অপকর্মের। এবিষয়ে পুলিশের কর্তৃপক্ষসহ দেশের সরকাকেও নজর বাড়াতে হবে। কেননা, আইন রক্ষাকারী কর্তৃক একেরপর এক আইন বিরোধী কর্মকাণ্ডে দেশের আইনের প্রতি মানুষের অনাস্থা জন্মাবে। ফলশ্রুতিতে দেশে দেখা দিবে বিশৃঙ্খলা।
সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে আইনের খড়্গ চালানোর আগে পুলিশের ওপর চালানো প্রয়োজন বলে মনে করেন তারা। তারা বলেন, আগে পুলিশকে অপরাধমুক্তের চরিত্র অর্জন করতে হবে। নইলে সন্ত্রাসীদের নিকট পুলিশের যে ভাবমূর্তি সৃষ্টি হচ্ছে, এতে পুলিশ আর সন্তাসীদের মধ্যকার তফাৎ ঘুচে যায়।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১২৪৪
আপনার মতামত জানানঃ