গোটা পৃথিবী এই মুহূর্তে হিমসিম খাচ্ছে করোনার ঠেলা সামলাতে। এই মারণ ভাইরাসের প্রকোপ কাটিয়ে বিশ্বকে করোনা মুক্ত করার জন্য চালানো হচ্ছে গ্লোবাল ভ্যাকসিনেশন। পাশাপাশি আরও বেশি করে করোনা প্রতিরোধ করতে অধিকাংশ দেশ হেঁটেছে করোনার বুস্টার ডোজ প্রদানের পথেও। কিন্তু এরই মাঝে এবার জুড়ে বসল লাসা জ্বর। মূলত ইঁদুর বাহিত এই জ্বরে আক্রান্ত ও মৃত্যুর হওয়ার খবর সামনে এসেছে। আর এই ঘটনার পরেই ফের বিশেষজ্ঞদের কপালে চিন্তার ভাঁজ দেখা দিল।
করোনাভাইরাস মহামারিতে বিপর্যস্ত বিশ্বে নতুন একটি ভাইরাসের বিস্তারের খবর উদ্বেগ তৈরি করেছে। লাসা ভাইরাস নামের এই ভাইরাস যুক্তরাজ্যে তিনজনের প্রাণ কেড়ে নেওয়ায় দেশটির স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলেছেন, এই ভাইরাসের ‘মহামারির সম্ভাবনা’ আছে।
১৯৮০’র দশকের পর থেকে যুক্তরাজ্যে লাসা জ্বরে আক্রান্ত হয়েছিলেন মোট ৮ জন। এর মধ্যে সর্বশেষ দু’জনের এই ভাইরাস শনাক্ত হয়েছিল।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, লাসা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে যেসব উপসর্গ দেখা যায়, তার সঙ্গে করোনা উপসর্গের অনেকটাই মিল রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, এই ভাইরাসটি ছড়ায় ইঁদুর থেকে। লাসায় আক্রান্ত ইঁদুরের মল-মূত্র কোনো খাবারে বা বাড়িতে ব্যবহৃত জিনিসপত্রে মিশে গেলে সেটি ব্যবহারে ভাইরাসটি ছড়াতে পারে। লাসা ভাইরাসের কিছু উপসর্গের সঙ্গে করোনার উপসর্গের মিল রয়েছে। লাসায় আক্রান্তদের উপসর্গের মধ্যে রয়েছে মাথা ব্যথা, বমিভাব ও মুখ-নাক থেকে রক্তক্ষরণ।
যুক্তরাজ্যের হেলথ সিকিউরিটি এজেন্সির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ব্রিটেনে এই ভাইরাসে এখন পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে তিনজন। আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তির সংস্পর্শে যারা এসেছেন, তাদের সবার সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। তাদের প্রত্যেকের শারীরিক অবস্থার ওপর নজরদারি চালানো হচ্ছে।
এই ভাইরাস সম্পর্কে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, পশ্চিম আফ্রিকায় ইঁদুরদের শরীরে এই ভাইরাস পাওয়া যেত। কিন্তু এখন সেটি বেনিন, ঘানা, গিনি, লাইবেরিয়া, সিয়েরা লিওন, টোগো এবং নাইজেরিয়াতে রয়েছে। পশ্চিম আফ্রিকার কিছু দেশে এই ভাইরাসের উপস্থিতি রয়েছে।
করোনাভাইরাস মহামারিতে বিপর্যস্ত বিশ্বে নতুন একটি ভাইরাসের বিস্তারের খবর উদ্বেগ তৈরি করেছে। লাসা ভাইরাস নামের এই ভাইরাস যুক্তরাজ্যে তিনজনের প্রাণ কেড়ে নেওয়ায় দেশটির স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলেছেন, এই ভাইরাসের ‘মহামারির সম্ভাবনা’ আছে।
সর্বশেষ পাওয়া তথ্যমতে, লাসায় আক্রান্তদের মধ্যে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার সম্ভাবনা ১৫ শতাংশ। গবেষণায় দেখা গেছে, পাঁচজন আক্রান্তের মধ্যে একজনের বিভিন্ন অঙ্গ যেমন কিডনি বা লিভারের ক্ষতি হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, লাসা ভাইরাসের ক্ষেত্রেও করোনার মতো একজন থেকে আরেকজনের শরীরে ছড়িয়ে পড়তে পারে। বিশেষত যদি সংক্রমণ ঠেকানোর মতো পর্যাপ্ত পরিকাঠামো না থাকে।
করোনার মতই লাসা জ্বর নিয়ে প্রথম থেকেই বেশ সচেতন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এই ইঁদুর বাহিত ভাইরাস প্রসঙ্গে ‘হু’ জানিয়েছে, এই ভাইরাস প্রধানত আফ্রিকা মহাদেশের পশ্চিমভাগে ইঁদুরের দেহে পাওয়া যেত। কিন্তু বর্তমানে এই ভাইরাস পশ্চিম আফ্রিকার সীমানা ছাড়িয়ে বেনিন, ঘানা, গিনি, টোগো, সিয়েরা লিওন, নাইজেরিয়া, লাইবেরিয়ার মত একাধিক দেশে ছড়িয়েছে। শুধু তাই নয়, সেইসব দেশে এই মুহূর্তে এই ভাইরাস এন্ডেমিক পর্যায়ে রয়েছে। তাই তা চিন্তার বিষয়।
ডব্লিউএইচও এই রোগ সম্পর্কে বলেছে, মানুষ থেকে মানুষে এবং পরীক্ষাগারেও সংক্রমণও ঘটতে পারে। বিশেষ করে স্বাস্থ্যসেবা স্থাপনায় পর্যাপ্ত সংক্রমণ প্রতিরোধ এবং নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা না থাকলে এই ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে।
লাসা জ্বর কি করোনার মতই ছোঁয়াচে? এই প্রশ্নের উত্তরে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, তাদের হাতে যা তথ্য আছে তাতে দেখা যাচ্ছে যে এই লাসা ভাইরাস পার্সন টু পার্সন অর্থাৎ একজনের দেহ থেকে অন্য একজনের দেহে ছড়িয়ে পড়তে সক্ষম। তার উপর যদি এই সংক্রমণ ঠেকানোর জন্য পর্যাপ্ত পরিকাঠামো না থাকে তাহলে সেটি অন্যদের দেহে ছড়াতে পারে।
১৯৬৯ সালে প্রথমবারের মতো এই ভাইরাসটি নাইজেরিয়ার লাসা শহরে শনাক্ত হয়। শারীরিক অসুস্থতা তৈরির জন্য দায়ী এই ভাইরাসের নামকরণ করা হয় লাসা শহরের নাম অনুযায়ী।
সিডিসি বলছে, প্রত্যেক বছর সাধারণত এক লাখ থেকে ৩ লাখ পর্যন্ত মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে থাকেন এবং মারা যান প্রায় ৫ হাজার।
উপসর্গ কী?
একজন মানুষের দেহে এই ভাইরাসে সংক্রমণ ২ থেকে ২১ দিন পর্যন্ত থাকতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, লাসা জ্বরের বেশিরভাগ সংক্রমণ মৃদু এবং অনেক সময় উপসর্গ বোঝা যায় না। এর সংক্রমণ ধীরে ধীরে জ্বর, সাধারণ দুর্বলতা এবং অসুস্থতা তৈরি করে। সংক্রমণ বৃদ্ধির সাথে সাথে রোগীর মাথাব্যথা, গলা ব্যথা, পেশীতে ব্যথা, বুকে ব্যথা, বমি বমি ভাব, বমি, ডায়রিয়া, কাশি এবং পেটে ব্যথা হতে পারে।
লাসায় আক্রান্ত প্রত্যেক ১০ জনের মধ্যে ৮ জনেরই কোনও উপসর্গ দেখা যায় না। তবে লিভার, কিডনি প্রভাবিত হলে; লক্ষণ দেখা দেওয়ার ১৪ দিনের মধ্যে মৃত্যু ঘটতে পারে। অনেকের ক্ষেত্রে প্রাণহানি না ঘটলেও বধির হয়ে যেতে পারেন।
চিকিৎসা কী?
যদি প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নির্ণয় করা যায়, তবে রিহাইড্রেশন এবং উপসর্গগুলোর চিকিত্সাই বেঁচে থাকার সম্ভাবনাকে উজ্জ্বল করে তোলে। এছাড়া অ্যান্টিভাইরাল ড্রাগ রিবাভিরিন লাসা ভাইরাসের বিরুদ্ধে কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে। তবে এটা কীভাবে কাজ করে তা এখনও জানা যায়নি। সংক্রমণ এড়ানোর সবচেয়ে ভালো উপায় ইঁদুরের সংস্পর্শে না আসা।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৩২৭
আপনার মতামত জানানঃ