নিপাহ ভাইরাস নিয়ে ভয়াবহ সতর্কতা দিয়েছেন ভারতের শীর্ষ মহামারি বিশেষজ্ঞরা। এর মধ্যে আছেন ড. রমন গঙ্গাখেদকর ও ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিকেল রিসার্সের (আইসিএমআর) মহাপরিচালক ড. রাজিব বাহল। তারা বলেছেন, করোনা ভাইরাসের চেয়ে এই ভাইরাস অধিক হারে প্রাণঘাতী। ডা. রমন বলেছেন, এই ভাইরাসের বাংলাদেশি স্ট্রেইনে আক্রান্ত ১০ জন মানুষের মধ্যে ৯ জন মারা যেতে পারেন। তিনি এই ভাইরাসের বিস্তার রোধে এর উৎস খুঁজে বের করার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, অগ্রাধিকার দিতে হবে নিপাহ ভাইরাসের উৎস খুঁজে বের করায়, চারপাশের সব প্রাণির পরীক্ষা করায়, লোকজনের চলাফেরায় এবং চিকিৎসা ব্যবস্থা প্রস্তুত রাখায়। ২০১৮ সাল থেকে ভারতের কেরালা রাজ্যে চতুর্থ দফায় এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। রাজ্য এখন এর বিরুদ্ধে লড়াই করছে। বন্ধ করে দেয়া হয়েছে এ রাজ্যের সব স্কুল, কলেজ। সোমবার থেকে সেখানে অনলাইনে ক্লাস করানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এখন পর্যন্ত এই রাজ্যে ৬ জনের শরীরে নিপাহ ভাইরাস শনাক্ত করা হয়েছে। এ বছর সেখানে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন দু’জন। কয়েকদিন আগে রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী বীণা জর্জ বলেছেন, রাজ্যে যে নিপাহ ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে তা বাংলাদেশি স্ট্রেইন।
ড. রমন গঙ্গাখেদকর বলেন, বাংলাদেশি যে স্ট্রেইন তা উচ্চমাত্রায় প্রাণঘাতী। আক্রান্ত ১০ জনের মধ্যে এতে ৯ জন মারা যেতে পারেন। তিনি আরও বলেন, ২০১৮ সালে এতে আক্রান্ত হয়েছিলেন ২৩ জন। তার মধ্যে শতকরা ৮৯ ভাগ রোগী মারা গেছেন। এ বিষয়ে আরও ভয়ানক কথা বলেছেন ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিকেল রিসার্সের (আইসিএমআর) মহাপরিচালক ড. রাজিব বাহল। শুক্রবার তিনি বলেছেন, করোনা ভাইরাসের চেয়েও অনেক বেশি নিপাহ ভাইরাসে মৃত্যুর হার।
তিনি কোজিকোড়েতে সাংবাদিকদের বলেছেন, যারা নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন তাদের মধ্যে মৃত্যুর হার অনেক বেশি। তা শতকরা ৪০ থেকে ৭০ ভাগের মধ্যে। অন্যদিকে করোনায় মৃত্যুর হার ছিল শতকরা ২ থেকে ৩ ভাগের মধ্যে।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে কেরালার কোজিকোড়েতে প্রথম নিপাহ ভাইরাস শনাক্ত হয়। ২০১৯ সালে তা শনাক্ত হয় এরনাকুলামে। আবার ২০২১ সালে এই ভাইরাস সংক্রমণ দেখা দিয়েছে কোজিকোড়েতে। বর্তমানে এই রাজ্যে নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্তের ৬টি ঘটনা নিশ্চিত হওয়া গেছে। এর মধ্যে দুজন মারা গেছেন। ফলে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো ৪।
কেরালা সরকারের জন্য স্বস্তির খবর হলো শনিবার নতুন করে নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্তের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। তবে এই ভাইরাসে আক্রান্ত এমন ব্যক্তিদের সংস্পর্শে গিয়েছিলেন এমন ৫ জনের মধ্যে কিছুটা লক্ষণ দেখা দিয়েছে। তাদেরকে বিচ্ছিন্ন করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এই ভাইরাসের বিস্তার রোধে রাজ্য সরকার সব স্কুল ও কলেজ বন্ধ ঘোষণা করে ১৮ই সেপ্টেম্বর থেকে অনলাইনে ক্লাস চালু রাখার নির্দেশ দিয়েছে।
আপনার মতামত জানানঃ