চীনের রকেট মানেই যেন এক আতঙ্কের নাম। গত বছর মহাকাশ গবেষণার কাজে উৎক্ষেপণ করা এক চীনা রকেটের ধ্বংসাবশেষ ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পৃথিবীতে ফিরে আসে। এবার চাঁদে চীনের নভোযান পৌঁছে দেওয়া আরেক রকেটের ধ্বংসাবশেষ ছিটকে পড়তে যাচ্ছে পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহটিতে।
সূত্র মতে, আগামী মাসে চাঁদের বুকে আছড়ে পড়বে নিয়ন্ত্রণহীন একটি রকেটের অংশবিশেষ। চাঁদের বুকে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে এটি বিস্ফোরিত হবে। এটি ৩ থেকে ৪ টন ওজনের ১৫ মিটার দীর্ঘ একটি রকেট। চাঁদের বুকে অনিয়ন্ত্রিত রকেটের বিস্ফোরণের ঘটনা এটাই হবে প্রথম।
প্রথমে ধারণা করা হয়েছিল, রকেটটি প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ইলন মাস্কের কোম্পানি স্পেস এক্সের পাঠানো। তবে এখন বিজ্ঞানীরা বলছেন, এটি স্পেস এক্সের কোনো অভিযানের অংশ নয়।
বিবিসির খবরে বলা হয়, এটি একটি চীনা রকেটের ধ্বংসাবশেষ। ২০১৪ সালে চন্দ্র অভিযানের অংশ হিসেবে ওই রকেট পাঠিয়েছিল চীন। বিজ্ঞানীরা বলছেন, রকেটের ধ্বংসাবশেষ চাঁদের পৃষ্ঠে আঘাত করলেও, এর প্রভাব হবে খুব সামান্য।
জানা গিয়েছে, ২০১৪ সালে চিনের মহাকাশযান টি১-কে উৎক্ষেপণ করা হয়। চিনের চন্দ্রাভিযানের অংশ ছিল ওই মহাকাশযান। সেটিরই বুস্টার ছিল ০৬৫বি নামের ওই রকেট।
এবার সেটিই আছড়ে পড়বে চন্দ্রপৃষ্ঠে। গত মাসে নাসা জানিয়েছিল, তারা ওই রকেটটির দিকে নজর রেখেছে। সেটি চাঁদে আছড়ে পড়লে যে গহ্বরটি তৈরি হবে সেটিও খতিয়ে দেখা হবে বলে জানাচ্ছে মার্কিন মহাকাশ সংস্থা।
গত জানুয়ারি মাসে জ্যোর্তিবিদেরা প্রথম চাঁদের দিকে একটি বস্তু ধেয়ে আসতে দেখেন। তাদের হিসাব অনুযায়ী, আগামী ৪ মার্চ রকেটের ওই ধ্বংসাবশেষ চাঁদের বুকে আছড়ে পড়বে।
মহাকাশে কোনো মিশন শেষ করার পর যেসব যন্ত্রাংশ অকেজো হয়ে পড়ে এবং তা আর পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনা যায় না, তখন তা মহাকাশ আবর্জনা বা বর্জ্য হিসেবে পরিচিত।
মার্কিন তথ্য বিশ্লেষক বিল গ্রে প্রথমে রকেটের ধ্বংসাবশেষকে ২০১৫ সালে স্পেস এক্সের পাঠানো ফ্যালকন নাইন রকেটের অংশ হিসেবে তুলে ধরেন। স্পেস এক্স মঙ্গল গ্রহে মানববসতি তৈরির লক্ষ্যে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
পরে বিল গ্রে জানান, তার হিসাবে কিছুটা ভুল হয়েছে। চাঁদের বুকে আছড়ে পড়তে যাওয়া রকেটের অংশটি চীনের চ্যাংগি ৫-টিআই মিশনের অংশ।
যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড-স্মিথসোনিয়ান সেন্টার ফর অ্যাস্ট্রোফিজিকসের অধ্যাপক জোনাথন ম্যাকডওয়েল বলেন, তিনি বিল গ্রের নতুন হিসাবটির সঙ্গে একমত। মহাকাশ বর্জ্য শনাক্তের ক্ষেত্রে অনেক অনিশ্চয়তা থেকে যায়, যা থেকে ভুল হতে পারে।
মহাকাশ বর্জ্য পর্যবেক্ষণের জন্য সম্পদ সীমিত। ম্যাকডওয়েল বলেন, ‘মহাকাশ বর্জ্য পর্যবেক্ষণে আমরা স্বেচ্ছাসেবকদের একটি ছোট দলের ওপর নির্ভর করে থাকি। তাদের নিজস্ব সময়ে তারা এ কাজ করে থাকে। এ বিষয়ে তাই একাধিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুযোগ সীমিত।’
পৃথিবীর খুব কাছাকাছি থাকা মহাকাশ বর্জ্যগুলো মার্কিন সেনাবাহিনীর স্পেস ফোর্সের একটি দল পর্যবেক্ষণ করে থাকে। তবে মহাকাশের অনেক দূরে থাকা বস্তুগুলো পর্যবেক্ষণের বাইরে থেকে যায়।
ম্যাকডওয়েল বলেছেন, তিনি ৮০ ভাগ নিশ্চিত যে চাঁদে আঘাত হানতে যাওয়া বস্তুটি ২০১৪ সালের চীনা রকেটের অংশ। বস্তুটি যখন প্রথমবারের মতো শনাক্ত হয়; তখন ম্যাকডওয়েল বলেছিলেন, চাঁদে অনিয়ন্ত্রিত কোনো রকেটের ধ্বংস হতে যাওয়ার ঘটনা এটাই প্রথমবার জানা যাচ্ছে। চাঁদের পৃষ্ঠের সংস্পর্শে আসামাত্রই রকেটটির বিস্ফোরণ ঘটবে।
এমনভাবে কোনও রকেটের চাঁদের মাটিতে আছড়ে পড়ার ঘটনা বেশ বিরল। তবে এর আগেও এমন ঘটেছে। তবে সেক্ষেত্রে পৃথিবীর আবহাওয়ামণ্ডলে অনেক সময় কোনও রকেট ঢুকে পড়ার সম্ভাবনা থাকলে সেটিকে চাঁদের মাটির সঙ্গে সংঘর্ষ ঘটানো হয়।
তবে সেটি যেহেতু নিয়ন্ত্রিত সংঘর্ষ, তাই তেমন আশঙ্কা তৈরি হয়নি কখনওই। তাই এবারের সংঘর্ষের দিকে বিশেষ নজর থাকবে বিজ্ঞানীদের। যদিও তেমন বড় দুর্ঘটনার সম্ভাবনা নেই। তবুও সতর্ক থাকতে চাইছেন তারা।
এসডব্লিউ/এসএস/২২২৫
আপনার মতামত জানানঃ