স্কুল চত্বরে নামাজ পড়ার অনুমতি দিয়েছিলেন প্রধান শিক্ষিকা। আর এজন্যই কর্ণাটকের কোলার জেলার ওই প্রধান শিক্ষিকাকে বহিষ্কার করল শিক্ষাদফতর।
পাশাপাশি এদিকে হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের সদস্যরা ওই স্কুলে গিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেছিলেন। এরপরই নামাজ পড়ার বিষয়টি সামনে আসে। পরের দিনই প্রধান শিক্ষিকা উমাদেবীকে বহিষ্কার করা হয়।
জানা যায়, কর্নাটকের মুলবাগাল শহরে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে সম্প্রীতির নজির সৃষ্টি করার জন্য জুম্মার নামাজ পড়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই অনুমতির পর স্কুলে ঢুকে বজরং দল বিক্ষোভ দেখায়। সেই ঘটনার পর কর্নাটক সরকার কোলার জেলার সরকারি কন্নড় মডেল হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষিকা উমা দেবীকে বহিষ্কার করল।
এদিকে মোবাইল ফোনে তোলা একটি ভিডিও সম্প্রতি ভাইরাল হয়। এরপরই এনিয়ে হইচই শুরু হয়ে যায়। কেন একপেশে ভাবে স্কুলে এভাবে নামাজ পড়ার অনুমতি দেওয়া হল তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।
বিক্ষোভকারীদের দাবি গত বছর ডিসেম্বর মাস থেকেই স্কুলে এভাবে নামাজ পড়া হচ্ছে। বিক্ষোভকারীদের অন্যতম রামকৃষ্ণ বলেন, কারোর সঙ্গে পরামর্শ না করেই প্রধান শিক্ষিকা স্কুলে নামাজ পড়ার অনুমতি দিয়েছেন। এটা মানা যায় না।
এদিকে ঘটনার কথা জানাজানি হতেই ডেপুটি ডিরেক্টর অফ পাবলিক ইনস্ট্রাকশন ও স্থানীয় আধিকারিকরা স্কুলে যান। এরপর ডেপুটি কমিশনারকে তারা রিপোর্ট জমা দেন। তারপরই তাকে বহিষ্কার করা হয়।
তবে ওই প্রধান শিক্ষিকা জানিয়েছেন, স্কুলে যে প্রার্থনা হয় তিনি জানতেন না। পরে বলেন, এলাকার মুসলিম পড়ুয়াদের আকৃষ্ট করার জন্যই স্কুলের একটি ঘরকে নামাজ পড়ার জন্য ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ওই প্রধানশিক্ষিকা বলেন, স্কুলে নামাজ পড়ার অনুমতি দিয়ে তিনি ভুল করেছেন।
মূলত সম্প্রতি ভারতে ইসলামোফোবিয়া বাড়ছে বলে বিবৃতি প্রকাশ করেছে ইসলামিক কো-অপারেশন। করোনা সংক্রমণ এবং লকডাউনকে কেন্দ্র করে ভারতে মুসলিমবিদ্বেষ বা ইসলামোফোবিয়া বাড়ছে বলে মনে করছেন অনেকেই।
ভারতে গুরুতরভাবে লঙ্ঘিত হচ্ছে ধর্মীয় স্বাধীনতা
গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা বিষয়ক কমিশন (ইউএসসিআইআরএফ) তাদের বার্ষিক প্রতিবেদনে ধর্মীয় স্বাধীনতা লঙ্ঘনের অভিযোগে ভারত, রাশিয়া, ভিয়েতনাম ও সিরিয়াকে কালো তালিকাভুক্ত করার সুপারিশ জানিয়েছে।
এর মধ্যে ভারতে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন ও বৈষম্য ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে সুপারিশ করে বলা হয়, প্রথম চারটি দেশকে ‘বিশেষ উদ্বেগের দেশ’ (সিপিসি) হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া প্রয়োজন।
কমিশনের এই প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতে ধর্মীয় স্বাধীনতা পরিস্থিতি নেতিবাচক অভিমুখ অব্যাহত রেখেছে।
এতে আরও বলা হয়েছে, ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার দেশটিতে হিন্দু জাতীয়তাবাদ প্রচার করেছে, যার কারণে সেখানে নিয়মতান্ত্রিক, চলমান ও গুরুতরভাবে ধর্মীয় স্বাধীনতার লঙ্ঘন হয়েছে।
তার আগের বছর দিল্লির দাঙ্গায় মুসলিমদের বিরুদ্ধে পুলিশি দমন-পীড়নের অভিযোগ এবং মোদির নেতৃত্বে নাগরিকত্ব আইন বিষয়ক উদ্বেগ অব্যাহত থাকার কথাও প্রতিবেদনে বিশেষভাবে উল্লেখ করেছে মার্কিন কমিশন।
গো-হত্যার নামে উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ করেছে। এর ফলে প্রাণহানি পর্যন্ত হয়েছে। ধর্মীয় স্বাধীনতা আরও বেশি ক্ষুণ্ণ হওয়ার ঘটনা সবচেয়ে বেশি বেড়েছে ভারতের ১০ রাজ্যে।
এর মধ্যে রয়েছে, উত্তরপ্রদেশ, অন্ধ্রপ্রদেশ, বিহার, ছত্তীশগড়, গুজরাট, ওড়িষ্যা, কর্নাটক, মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র ও রাজস্থান।
উল্লেখ্য, ইন্দোনেশিয়ার পর ভারতেই মুসলিম জনসংখ্যা সবচেয়ে বেশি৷ দেশটিতে এখন প্রায় সাড়ে ১৯ কোটি মুসলিমের বাস৷
পিউ রিসার্চ সেন্টারের করা এক গবেষণা দেখা গেছে ২০৬০ সালের মধ্যে ভারতে মুসলিম জনসংখ্যা দাঁড়াবে ৩০ কোটিরও বেশি৷ অর্থাৎ মাত্র দুই জেনারেশন পরেই বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ইসলাম ধর্মাবলম্বীর দেশ হবে ভারত৷
মোদির প্রথম শাসনামলে মুসলিমবিরোধী সহিংসতা উগ্র রূপ নিয়েছিল, এ নিয়ে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই৷ গরুর মাংস খাওয়ার অভিযোগে অন্তত ৪০টি হত্যার ঘটনা ঘটেছে৷ এই ঘটনাগুলোর বেশিরভাগেরই কোনো বিচারও হয়নি৷ ফলে সংখ্যালঘুদের ‘চাইলেই নির্যাতন করা যায়’, এমন একটি অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে৷
শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থানের মতো মৌলিক কিছু বিষয়ে মুসলিমদের বিরুদ্ধে কৌশলগতভাবে বৈষম্য তৈরি করা হয়েছে, যা গণমাধ্যমেও ঠিকমতো আসেনি৷ এই বৈষম্য সবসময়ই ছিল, কিন্তু বিজেপির অধীনে তা ভারতের মাটিতে শক্ত অবস্থান তৈরি করেছে৷
এর ফলে বিভিন্ন অঞ্চলের মুসলিমদের মধ্যে নিজেদের অবাঞ্ছিত মনে করার এক ধরনের প্রবণতা তৈরি হয়েছে৷ বিশেষ করে উত্তর ভারতে মুসলিমরা নিজেদের ভিটেমাটিতেই আর নিরাপদ বোধ করেন না৷
এসডব্লিউ/এসএস/১৬০০
আপনার মতামত জানানঃ