বেশ বড় একটা সময় জুড়েই বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী বিলুপ্ত হওয়ার খবর নিয়মিতই আসছে। বিপন্ন প্রজাতির তালিকাটাও বেশ দীর্ঘ। বিশেষত বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বিষয় সামনে আসার পর প্রজাতি বিলুপ্তির বিষয়টি সব সময়ই আলোচনায় রয়েছে। এরই মধ্যে ওয়ার্ল্ড ওয়াইডলাইফ ফান্ডের নতুন একটি প্রতিবেদন জানিয়েছে, আগামী ১০ বছরের মধ্যে মানুষের কর্মকাণ্ডে পৃথিবী থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে পারে ১০ লাখ প্রজাতির প্রাণী। খবর ডয়েচে ভেলে
এদিকে আমাদের জানা বৃক্ষ প্রজাতির চেয়ে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক প্রজাতি এখনও অজানা রয়েছে বলে গবেষকরা ধারণা করছেন। পৃথিবীতে এখনও ৯ হাজারের বেশি প্রজাতি আবিষ্কৃত হয়নি বলে এক গবেষণা প্রতিবেদনে জানা গেছে। খবর রয়টার্সের।
গবেষণায় বলা হয়, বিশ্বজুড়ে বন সংরক্ষণের প্রচেষ্টাকে অবহিত করা, আশাবাদী হওয়া এবং এ বিষয়টিতে অগ্রাধিকার দেওয়ার জন্য গাছের প্রজাতির সংখ্যা জানা জরুরি। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্সের জার্নাল পিএনএএস এই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এ গবেষণায় বহু বিজ্ঞানী যুক্ত ছিলেন।
প্রায় ৬৪ হাজার ১০০ প্রজাতির গাছ ইতোমধ্যে শনাক্ত হয়েছে। কিন্তু গবেষণা অনুযায়ী সম্পূর্ণ ডাটাবেজের ওপর ভিত্তি এবং পূর্ববর্তী প্রচেষ্টার তুলনায় আরও উন্নত পরিসংখ্যানগত পদ্ধতি ব্যবহার করে দেখা যায়, গাছের প্রজাতির মোট সংখ্যা প্রায় ৭৩ হাজার ৩০০ যা আগের তুলনায় ১৪ শতাংশ বেশি। অর্থাৎ ৯ হাজার প্রজাতি এখনও আবিষ্কৃত হয়নি।
গবেষণায় বলা হয়, গাছের সব প্রজাতির ‘প্রায়’ ৪৩ শতাংশ দক্ষিণ আমেরিকায় পাওয়া যায়। এর পরে ইউরেশিয়ায় ২২ শতাংশ, আফ্রিকায় ১৬ শতাংশ, উত্তর আমেরিকায় ১৫ শতাংশ এবং ওশেনিয়ায় ১১ শতাংশের সন্ধান মিলেছে। গবেষকদের হিসাবে শনাক্ত হওয়া প্রজাতির অর্ধেক থেকে দুই-তৃতীয়াংশ পাঁচটি মহাদেশের ক্রান্তীয় বা উপক্রান্তীয় রেইনফরেস্টগুলোতে পাওয়া যায়।
আমাদের জানা বৃক্ষ প্রজাতির চেয়ে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক প্রজাতি এখনও অজানা রয়েছে বলে গবেষকরা ধারণা করছেন। পৃথিবীতে এখনও ৯ হাজারের বেশি প্রজাতি আবিষ্কৃত হয়নি বলে এক গবেষণা প্রতিবেদনে জানা গেছে।
এদিকে বৃহত্তর মেকং অঞ্চলে নতুন ২২৪টি প্রজাতির সন্ধান পেয়েছে বিশ্ব বণ্যপ্রাণী সংরক্ষণ তহবিল (ডব্লিউডব্লিউএফ)। এসব প্রজাতির একটি তালিকা প্রকাশ করেছে সংরক্ষক গ্রুপটি। এই তালিকায় রয়েছে চোখের চারপাশে সাদা চক্র থাকা ভৌতিক বানর, ব্যাঙ, সরীসৃপ এবং কেবল বাঁশের রস খেয়ে টিকে থাকা একটি প্রজাতিও।
কম্বোডিয়া, লাওস, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড এবং ভিয়েতনাম নিয়ে গঠিত হয়েছে বৃহত্তর মেকং অঞ্চল। ডব্লিউডব্লিউএফ এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের সবচেয়ে সংকটাপন্ন কয়েকটি প্রজাতি শনাক্ত হওয়ার আগেই এই অঞ্চলে বিলুপ্তির মুখে রয়েছে।
নতুন প্রজাতির সন্ধান পাওয়ার ঘোষণা দিয়ে ডব্লিউডব্লিউএফ এর বৃহত্তর মেকং অঞ্চলের বণ্যপ্রাণী এবং বন্যপ্রাণী বিষয়ক অপরাধের নেতা কে. যোগানন্দ বলেন, ‘এই প্রজাতিগুলো লাখ লাখ বছরের বিবর্তনের অসাধারণ, সুন্দর ফলাফল।’
ওই কর্মকর্তা বলেন, নতুন এই প্রজাতিগুলো মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এর অনেকগুলোই শনাক্ত হওয়ার আগেই বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে।
ডব্লিউডব্লিউএফ জানিয়েছে, দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার জীববৈচিত্র্য সমৃদ্ধ অঞ্চল থেকে এসব প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার ঝুঁকির মুখে পড়ার কারণ আবাসস্থল ধ্বংস, মানুষের মাধ্যমে রোগের সূচনা এবং বণ্যপ্রাণীর অবৈধ বাণিজ্য।
এদিকে চলমান বৈশ্বিক করোনা মহামারির মধ্যে বিজ্ঞানীরা ২০২১ সালে ৫৫২ প্রজাতির নতুন ও বিলুপ্ত প্রাণী এবং উদ্ভিদের সন্ধান পেয়েছেন। লন্ডনের ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়ামের বিজ্ঞানীদের বরাত দিয়ে সিএনএন এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নানা সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও তারা ইংল্যান্ডের আইল অব উইগটে দুইটি স্পিনোসর প্রজাতির ডাইনোসরের জীবাশ্ম আবিষ্কার করেছেন। এই প্রজাতির ডাইনোসর সাড়ে ১২ কোটি বছর আগে ওই অঞ্চলে বসবাস করত।
এক সময় পৃথিবীর বুকে বাস করত চিংড়ি জাতীয় জলজ প্রাণী ‘কোপপোড’। সাধারণত এসব জলজ প্রাণী দেখা যেত পাহাড়ি হ্রদ ও মহাসাগরের খাড়িতে। গত বছর আবিষ্কৃত হয়েছে ২৯১টি নতুন প্রজাতির কোপপোড।
ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়ামের গত বছরের আবিষ্কারের দীর্ঘ তালিকায় আরও আছে পতঙ্গ, মথ, কাঁকড়া ও মাছি।
গবেষকরা ৯০টি প্রজাতির নতুন পতঙ্গ আবিষ্কার করেছেন। এর কোনোটির রঙ বেগুনি, কোনোটির সবুজ। এগুলো পাওয়া গেছে ভারতে। পাশাপাশি, বড় চোয়াল-বিশিষ্ট এক ধরনের পতঙ্গ পাওয়া গেছে ফিলিপাইনে।
আফ্রিকার পূর্বাঞ্চলে পাওয়া গেছে পাঁচটি নতুন প্রজাতির গাছ। এ ধরনের গাছকে ‘রত্নবিচি’ বা ‘আমাকে ছুঁয়ো না’ বলেও ডাকা হয়। এসব গাছে সাধারণত গোলাপি, সাদা ও লাল ফুল ফোটে।
এ ছাড়াও, বিজ্ঞানীরা ১০টি নতুন প্রজাতির সরীসৃপ ও উভয়চর খুঁজে পেয়েছেন। এর মধ্যে আছে ‘জোসেফস র্যাসার’ নামের এক প্রজাতির সাপ। প্রায় ১৮৫ বছরের পুরনো এক চিত্রকর্ম এই সাপ খুঁজে পেতে বিজ্ঞানীদের সাহায্য করেছে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/২০১০
আপনার মতামত জানানঃ