ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনারের (ডিএমপি) পূর্বানুমতি ছাড়া রাজধানীতে সভা-সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা জানিয়েছে বাম গণতান্ত্রিক জোট। জোটের নেতারা বলেছেন, জনগণের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা মৌলিক সাংবিধানিক অধিকার। নির্দেশ জারি করে সরকার এ অধিকার কেড়ে নিতে পারবে না।
বাম গণতান্ত্রিক জোটের কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর পুলিশ-আমলাদের সহযোগিতায় দিনের ভোট রাতে সম্পন্ন করে ভোট ডাকাতির মাধ্যমে এই সরকার ক্ষমতাসীন হয়েছিল। তারাই জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করে দুঃশাসন টিকিয়ে রাখতে জনগণের মিছিল, সভা ও সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে দীর্ঘ সংগ্রামের মাধ্যমে জনগণ গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরে পেয়েছিল। সেই লড়াইয়ের সময় জনগণ সভা-সমাবেশ করতে পুলিশি অনুমোদনের তোয়াক্কা করেনি। আজও ভাত ও ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে জনগণ রাজপথের লড়াইয়ে কোনো অনুমতির তোয়াক্কা করবে না।’ অবিলম্বে সরকারের এই অগণতান্ত্রিক নির্দেশ প্রত্যাহার করার দাবি জানিয়ে সংগঠনটির নেতারা বলেন, সরকারের এই অবৈধ নির্দেশ প্রত্যাখ্যান করেই জনগণের লড়াই চলবে।
নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, পূর্বানুমতি ছাড়া সভা-সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি সংবিধানবিরোধী এবং সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক। ডিএমপির মাধ্যমে অগণতান্ত্রিক সরকারের জারি করা এই নিষেধাজ্ঞা জনগণের সাংবিধানিক ও মৌলিক অধিকারের পরিপন্থি, গণতন্ত্রকে হত্যার আরেকটি কৌশল।
মাহমুদুর রহমান মান্না এক বিবৃতিতে রাজধানীতে পুলিশের অনুমতি ছাড়া সভা-সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারির প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়ে বলেন, সংবিধানে অবাধে সভা-সমাবেশ করার অধিকার যে কোনো নাগরিক ও সংগঠনের আছে। কিন্তু বর্তমান সরকার সংবিধান স্বীকৃত জনগণের এই অধিকার কেড়ে নিয়েছে। ডিএমপির পূর্বানুমতি ছাড়া রাজনৈতিক দল, ধর্মীয় ও সামাজিক সংগঠনের সভা-সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি সংবিধানের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। তিনি বলেন, বহুদলীয় গণতন্ত্রকে হত্যার চেষ্টা এর আগেও হয়েছে। কিন্তু সে সব একনায়কতন্ত্র এ দেশে স্থায়ী হয়নি। সরকারের পায়ের নিচে মাটি নেই। তাই ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে সরকার অগণতান্ত্রিক এবং অসাংবিধানিক পন্থায় বিরোধী রাজনীতির চর্চাকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে। সরকারকে বলতে চাই, ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিন। বিবৃতিতে তিনি সংবিধান ও মৌলিক অধিকার পরিপন্থি এই গণবিরোধী সিদ্ধান্ত অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবি জানান।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, কাউকে সংবর্ধনা দিতে দেবেন না, বক্তব্য রাখতে দেবেন না, সমালোচনা করতে দেবেন না, এটা ভালো কাজ না। সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করবেন না। মিছিল-মিটিংয়ে হস্তক্ষেপ করবেন না। ডিএমপিকে অনুরোধ করছি এই সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা পুনর্বিবেচনার জন্য।
বৃহস্পতিবার ধানমন্ডি গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালের সামনে সম্প্রতি তিন বস্তিতে আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত বস্তিবাসীর মধ্যে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের পক্ষ থেকে কম্বল ও খাদ্যসামগ্রী বিতরণ কর্মসূচির উদ্বোধনকালে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী আরো বলেন, দেশের এই কান্তিকালে, এই দুর্যোগের মুহূর্তে ডিএমপির একটি নোটিশ মর্মাহত করেছে। সভা-সমাবেশ করার জন্য অবশ্যই পুলিশকে অবহিত করা হবে। কিন্তু অনুমতি নিতে চাইলে তো অনুমতি দেওয়া হয় না। এটা সবার জানা কথা। তিনি বলেন, সভা-সমাবেশের জন্য প্রশাসনকে জানানো হবে, যাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করতে পারে। এখন পর্যন্ত যতগুলো বিশৃঙ্খলা হয়েছে তার জন্য সরকারই দায়ী।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জেএসডি বলেছে, গৌরবান্বিত বিজয়ের মাসে মিছিল, সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করে সরকার মুক্তিযুদ্ধের ওপর কালিমা লেপন করেছে। জনগণ যখন স্বতঃস্ম্ফূর্তভাবে মিছিল, সভা-সমাবেশে অংশগ্রহণ করে ‘৭১-এর বিজয়কে উদযাপন করবে, তখন সরকার চাতুরীপূর্ণ ও অগণতান্ত্রিক এ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এ ছাড়া সভা-সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞার নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন যুব অধিকার পরিষদের সদস্য সচিব ফরিদুল হক।
পূর্বানুমতি ছাড়া রাজধানীতে সভা-সমাবেশে নিষেধাজ্ঞার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘বাকস্বাধীনতা এবং সভা-সমাবেশ-মিছিল-ধর্মঘট করা দেশের সব জনগণের সাংবিধানিক অধিকার। বর্তমান ভোট ডাকাতির সরকার একের পর এক জনগণের সাংবিধানিক অধিকার হরণ করে চলছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নামে কালো আইনে মানুষের বাকস্বাধীনতা হরণ করা হয়েছে। আর এখন সভা-সমাবেশ-মিছিলের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারির মাধ্যমে সাংবিধানিক অধিকার হরণ করছে। দেশে কর্তৃত্ববাদী ফ্যাসিবাদী দুঃশাসনকে দীর্ঘস্থায়ী করার পরিকল্পনা করছে। আওয়ামী লীগ ভিন্ন কৌশলে বাকশালী শাসন কায়েম করে চলেছে।’
এসডাব্লিউ/এমএন/আরা/১৬৫০
আপনার মতামত জানানঃ