খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার হরি ও ভদ্রা নদীর ভয়াবহ অবস্থা প্রত্যক্ষ করেছেন সংবাদকর্মীরা। সরেজমিনে গিয়ে তারা দেখেছেন, এই নদীর চার কিলোমিটারের মধ্যে গড়ে তোলা হয়েছে ১৮টি ইটভাটা। ইটভাটার মালিকেরা ক্রমাগত জায়গা দখল করতে থাকায় নদী প্রবাহ সংকীর্ণ হয়েছে। এর ফল হিসেবে নদীর গতিপথ পরিবর্তিত হয়ে যাচ্ছে। কোথাও কোথাও নদী প্রায় মরে গেছে। ভাঙনের হুমকির মুখে পড়েছে সেতু ও সংলগ্ন একটি বাজার।
এলাকা পরিদর্শনে তথ্য মেলে, ইটভাটা নির্মাণের ক্ষেত্রে সরকারি নিয়ম, পরিবেশ আইন বা ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন কোনো কাজেই আসছে না। খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার কাজিবাছা, পাইকগাছার শিপসা, কয়রার কপোতাক্ষ, ডুমুরিয়ার ভদ্রা, হরি, ঘ্যাংরাইলসহ বিভিন্ন নদীর পাড়ে ইটভাটা গড়ে তোলা হয়েছে। এসব ভাটামালিকরা প্রতি বছর নদীর বুক দখল করে ভাটার বিস্তৃতি বাড়াচ্ছেন। এক অর্থে ইটভাটা মালিকদের জমি দখলের থাবা থেকে নদীগুলো এখন বাঁচতে পারছে না। এই ভাটার মালিকরা প্রভাবশালী হওয়া এবং রাজনৈতিক নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকায় তারা হয়ে পড়েছেন বেপরোয়া।
৩ ডিসেম্বর ২০২০, গতকাল বৃহস্পতিবার দেখা গেছে, এই ভাটাগুলো নদীর পশ্চিম পাশে উত্তর-দক্ষিণে প্রায় তিন কিলোমিটারজুড়ে নদীর ভেতরে অর্ধেক জায়গা (২০-২৫ ফুট) দখল করেছে। কোথাও দখলের কারণে নদী ছোট হয়ে ড্রেনে পরিণত হয়েছে।
এলাকাবাসী জানায়, খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার হরি ও ভদ্রা নদীর চার কিলোমিটার এলাকায় নদী দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে ১৮টি ইটভাটা। নদীর পাড়ে ভূমিহীন কৃষকেরা সরকারের কাছ থেকে জমি ইজারা নিয়েছিলেন। সেই জমির সঙ্গে ব্যক্তিগত জমি নিয়ে ২০০৯ সাল থেকে পর্যায়ক্রমে ভাটামালিকেরা ১৮টি ভাটা গড়ে তুলেছেন। ভাটাগুলোর মালিকেরা নদীতে বাঁধ দিয়ে ছোট ছোট পুকুর নির্মাণ করছেন। এসব পুকুরে জমা পলিমাটি দিয়ে তারা ইট তৈরি করছেন। এভাবে বাঁধ দেওয়ায় নদীর স্রোত কমে যাচ্ছে। পলি পড়ে নদী নাব্য হারাচ্ছে, পাল্টে যাচ্ছে গতিপথ আবার কোথাও নদী প্রায় মরে গেছে। ভাটাগুলোর অধিকাংশ বসতবাড়ির ১০ থেকে ১০০ গজের মধ্যে। বসতবাড়ির কাছে হওয়ায় ভাটার ধোঁয়া-বালিতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠছে বাসিন্দারা। এ ছাড়া ভাটার ধুলা আর কালি ফসলি জমিতে পড়ায় ফসল উৎপাদনও কমে গেছে।
খুলনা জেলা প্রশাসন সূত্র জানিয়েছে, খুলনা জেলায় লাইসেন্সপ্রাপ্ত ইটভাটার সংখ্যা ১৫৩টি। নিয়ম অনুযায়ী এসব ভাটার রেজিস্ট্রেশন প্রতি বছর নবায়ন করতে হয়। সে ক্ষেত্রে অনেকে নবায়ন করেন, অনেকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দিতে পারেন না; তাই নবায়নও করতে পারেন না। তারপরও তারা ভাটার কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকেন। বেশির ভাগ ভাটা নদীর পাড় ঘেঁষে গড়ে উঠেছে। ২০১৩ সালের ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইনের ৮(১) ধারা অনুযায়ী, আবাসিক এলাকা ও কৃষিজমির ওপর ইটভাটা স্থাপন নিষিদ্ধ।
এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে সরকারি কর্মকর্তারা সাফাই মন্তব্য দিয়েছেন। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) যশোরাঞ্চল (খুলনা, যশোর ও নড়াইল জেলা) প্রকৌশলী সৈয়দ হাসান ইমাম বলেন, নদী দখল করে ইটভাটা স্থাপনকারীদের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হয়ে থাকে। খুলনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন বলেন, যারা নদী দখল করছে বা অবৈধভাবে ভাটা চালাচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এসডাব্লিউ/ডিআর/আরা/১০৪০
আপনার মতামত জানানঃ