বর্তমান সরকার পাঠ্যক্রমে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। তিনি বলেন, এই পরিবর্তনের বড় অন্যতম অংশজুড়ে থাকবে ধর্মশিক্ষা। আমরা চাই, এক ধর্মের শিশু অন্য ধর্ম সম্পর্কেও কিছুটা জানুক। অন্য ধর্মে যে নীতি-নৈতিকতার কথা বলা আছে, সেটা জানতে পারলে ওই ধর্ম সম্পর্কে শিশুর মধ্যে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হবে না।
সকলের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব তৈরি এবং পরস্পরের প্রতি জানা-বোঝার যেন ঘাটতি তৈরি না হয় সেজন্য শিশুদের সব ধর্মের বিষয়ে জানা থাকা প্রয়োজন বলে মনে করেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, শিক্ষার্থীরা যখন ধর্ম বিষয়ে পড়াশোনা করে, তখন অন্য ধর্মের কথাও তাদের জানা দরকার৷ এর মাধ্যমে পরস্পরের বিষয়ে জানা-বোঝা হলে সমাজে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা কমবে এবং সম্প্রীতি বাড়বে বলে মত তার৷
আর এ লক্ষ্যে স্কুল-কলেজের নতুন শিক্ষাক্রমে শিক্ষার্থীদের জন্য এ বিষয়টি থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেন শিক্ষামন্ত্রী৷
শিক্ষাক্রমের পরিবর্তন নিয়ে গত সোমবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের এক আলোচনায় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দীপু মনি৷ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদী জানতে চান, ‘‘চতুর্থ থেকে অষ্টম এই পাঁচ বছরে আপনারা ধর্মশিক্ষা, ভালো থাকা, শিল্প এবং সংস্কৃতি পাঠ্যক্রমে যুক্ত করছেন৷ যিনি ইসলাম ধর্মাবলম্বী, তিনি ইসলাম ধর্ম পড়বেন, যারা খ্রিস্টান ধর্মের, তারা খ্রিস্টান ধর্ম নিয়ে পড়বেন৷ যারা হিন্দু ধর্মের তারা তার ধর্ম নিয়ে পড়বেন৷ তাইতো?’’
জবাবে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘‘মূল জায়গাটা হলো ধর্মের বোধ ও নৈতিকতাবোধ৷ আমরা কিন্তু জোর দিতে চাচ্ছি সেই নৈতিকতাবোধের জায়গাটাতে৷ সকল ধর্ম কিন্তু সেই ভালো কথা বলছে৷ সেই জায়গাটিতে এবং যার যার ধর্ম পালনের যে জায়গাটুকু আছে, সেটাও হয়তো, ধর্মীয় শিক্ষার কিছুটাতো থাকবে৷ মূল জায়গাটা হলো নৈতিকতা৷’’
তৌফিক ইমরোজ খালিদী বলেন, ‘‘ধর্ম নৈতিকতা শেখায়৷ সেটা বলা যেতে পারে ধর্মের প্রধান বা প্রথম বৈশিষ্ট্য৷ বা প্রধান ইতিবাচক দিক৷ কিন্তু পরমতসহিষ্ণুতা যেটা আপনারা সমাজে প্রমোট করতে চান, সেটার জন্যে আপনার কি মনে হয় না, সবারই কম বেশি অন্য ধর্ম সম্পর্কে জানা উচিত? সেটা কি করবেন আপনারা?’’
জবাবে শিক্ষামন্ত্রীর বলেন, ‘‘অবশ্যই৷ আমি তো চাই। আমি তো আশা করছি সেটা করা হবে৷ প্রত্যেকটি ছাত্র-ছাত্রীকে অন্য ধর্ম সম্পর্কেও জানতে হবে৷ একটা হচ্ছে, নিজের ধর্ম চর্চা, সেটা একটা জায়গা৷ আরেকটা হচ্ছে, ধর্মীয় শিক্ষা৷
তিনি বলেন, ‘‘কোন ধর্ম কী বলছে, এ কথাটা যদি আমরা না শিখে বড় হই তাহলে কিন্তু আমাদের ওই যে এক ধর্মের আরেক ধর্ম… আমরা কখন একজনের সঙ্গে আরেকজনের সম্পর্কে নেতিবাচক দিক চলে আসে… কখনো কখনো সহিংসতাও চলে আসে৷ সেটা হচ্ছে না জানার কারণে, না বোঝার কারণে৷”
সেজন্য ‘জানা-বোঝার জায়গা’ তৈরির ওপর গুরুত্ব দিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘‘আন্ডারস্ট্যান্ডিংয়ের স্পেস তৈরি করা, সেটা তো খুব দরকার৷ আমরা যেন বাচ্চাদের না শেখাই যে ও ভিন্ন ধর্মের, তার মানে হচ্ছে ও ভিন্ন৷ তা যেন না হয়৷ ধর্মটা পুরো ব্যক্তির একটা অংশ৷’’
প্রসঙ্গত, ২০২৫ সাল থেকে পুরোপুরি নতুন শিক্ষাক্রমে পড়ানোর লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার৷ ২০২৩ সাল থেকে এটি ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন করা হবে৷ তার আগে আসছে জানুয়ারিতে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের ২০০ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিবর্তিত শিক্ষাক্রমের পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু হবে বলে জানা গেছে৷
তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পরীক্ষা না রাখা, এসএসসির আগে কোনো পাবলিক পরীক্ষা না নেওয়া, নবম-দশম শ্রেণিতে বিজ্ঞান, মানবিক ও বাণিজ্য বিভাগের বিভাজন তুলে দেওয়াসহ একগুচ্ছ পরিবর্তনের কথা বলা হচ্ছে এখানে।
শিক্ষাব্যবস্থাকে আরও কার্যকর ও বাস্তবভিত্তিক করতে এই পরিবর্তনগুলো প্রত্যাশিত ছিল বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে বড় এই পরিবর্তনের জন্য দেশের শিক্ষাব্যবস্থা কতটা প্রস্তুত, তা নিয়ে তাদের সংশয় আছে।
সরকার অবশ্য একে পরীক্ষা, বিষয়বস্তু ও পাঠ্যপুস্তকের চাপ কমিয়ে শিক্ষার্থীদের মুখস্ত নির্ভরতা থেকে বের করে অভিজ্ঞতা ও কার্যক্রমভিত্তিক শেখার মাধ্যমে পাঠচক্রকে ‘আনন্দময় করার উদ্যোগ’ বলছে।
এসডব্লিউ/এসএস/১৫০৭
আপনার মতামত জানানঃ