এ অব্দি ৩০টি দেশে নতুন ভ্যারিয়েন্ট ছড়ালেও, বাংলাদেশে কোয়ারেন্টিন নির্ধারিত হয়েছে শুধু সাতটি দেশের যাত্রীর জন্য। অথচ করোনা ভাইরাসের (কোভিড-১৯) নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন দ্রুত গতিতে ছড়িয়ে পড়ছে। এটি ভারতে শনাক্ত অতি সংক্রামক ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনাভাইরাসের এই ভ্যারিয়েন্টটি অন্তত ৩২টি মিউটেশন (জিনগত গঠনের পরিবর্তন) ঘটিয়েছে।
আশঙ্কা করা হচ্ছে, এই ধরন বিশ্বজুড়ে সংক্রমণ বাড়াবে। এখন বিশ্বের ৩০টি দেশে করোনার ওমিক্রন ধরনে আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শনাক্ত হচ্ছে করোনার এই নতুন ধরন। এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি দেশ আফ্রিকার ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা বা সীমাবদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
৩০টি দেশে শনাক্ত ওমিক্রন
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে এ পর্যন্ত বিশ্বে প্রায় ৩০টি দেশে ওমিক্রন শনাক্ত হয়েছে। চলতি সপ্তাহেই নতুন এই ধরন শনাক্ত হয়েছে আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও ভারতে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সতর্ক করেছে যে নতুন ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট থেকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধির জন্য যেন সব দেশ প্রস্তুত থাকে। পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় ডাব্লিউএইচও-র আঞ্চলিক ডিরেক্টর ড. তাকেশি কাসাই বলেছেন বিভিন্ন দেশ থেকে কোভিড-১৯-এর ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্তের সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে।
তিনি বলেছেন, যে খবর এই মুহূর্তে আমরা পাচ্ছি, প্রকৃত চিত্র তার থেকেও ব্যাপক। ভৌগলিকভাবে তা ইতোমধ্যেই অনেক বেশি ছড়িয়ে গেছে। ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট থেকে করোনা সংক্রমণের নতুন ঢেউ আসার সম্ভাবনার জন্য সব দেশকে তৈরি থাকতে বলেছেন ড. কাসাই।
তিনি বলেছেন, ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট ঠেকাতে যেসব শিক্ষা আমরা পেয়েছি নতুন এই ভ্যারিয়েন্ট মোকাবেলায় তা কাজে লাগাতে হবে। ডাব্লিউএইচও আরও বলেছে ভ্রমণের ওপর ঢালাও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে কোন দেশ এই ভ্যারিয়েন্টের ঢোকা শুধু বিলম্বিত করতে পারবে, কিন্তু তা একেবারে ঠেকাতে পারবে না।
এছাড়া সংস্থার আপদকালীন আঞ্চলিক ডিরেক্টর ড. বাবাতুন্ডে ওলউকুরে বলেছেন, ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের গতিপ্রকৃতি বুঝতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বিশাল সংখ্যক গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সাথে বর্তমানে এক যোগে কাজ করছে। তবে এখনও পর্যন্ত তারা এমন কোন তথ্য পায়নি, যার জন্য এই মহামারি মোকাবেলায় এই মুহূর্তে নতুন দিক নির্দেশনার প্রয়োজন রয়েছে।
সংস্থাটি বলছে, প্রতিটি দেশ যেন তাদের নিজস্ব ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়ে বর্তমান পদক্ষেপগুলো জোরদার করে, যেমন মাস্ক পরা, দূরত্ব বজায় রাখা, হাত ধোয়া, জনসমাগম এড়িয়ে চলা, সংক্রমিতদের ট্রেস করা, আক্রান্তদের আইসোলেশনে রাখা এবং টিকাদান অব্যাহত রাখা।
এর মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকার স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলছেন, সে দেশে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের প্রকোপে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নজিরবিহীন মাত্রায় বাড়ছে। মাত্র দু সপ্তাহ আগে যেখানে দৈনিক শনাক্তের সংখ্যা ছিল গড়ে তিনশ’র সামান্য বেশি, সেখানে এখন প্রতিদিনি নতুন কোভিড শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে সাড়ে এগারো হাজারের বেশি।
জন স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ বলছে মহামারির এই চতুর্থ ঢেউ আগের তুলনায় অনেক মারাত্মক রূপ নিয়েছে। নজিরবিহীন মাত্রায় সংক্রমণ বাড়ছে, তবে ওমিক্রন আগের ভ্যারিয়েন্টগুলোর তুলনায় বেশি প্রাণঘাতী এমন প্রমাণ তারা এখনও পাননি বলে জানাচ্ছেন।
বাংলাদেশের পদক্ষেপ
করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনকে ঘিরে আফ্রিকা ও এর বাইরে থেকে আসা যাত্রীদের জন্য নতুন নিয়ম ঘোষণা করেছে বাংলাদেশের বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ। যা আগামীকাল শনিবার থেকে কার্যকর হবে। তবে ৩০টি দেশে ওমিক্রন সংক্রমণ ঘটলেও, দেশে বিধিনিষেধ জারি করা হয়েছে ৭টি দেশের উপর।
বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ বলেছে যে দক্ষিণ আফ্রিকাসহ আফ্রিকার ৭টি দেশ থেকে কেউ বাংলাদেশে আসলেই তাদের নিজ খরচে হোটেলে ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে।
তবে যে কোন দেশ থেকে আসা যাত্রীদেরই ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আরটিপিসিআর পদ্ধতিতে করা টেস্টের নেগেটিভ রিপোর্ট সাথে রাখতে হবে। এর আগে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে করা টেস্টের রিপোর্ট রাখার নিয়ম ছিলো বাংলাদেশে আগত যাত্রীদের জন্য। এখন তা কমিয়ে ৪৮ ঘন্টা করা হয়েছে।
সম্প্রতি দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হওয়ার পর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এটিকে ‘উদ্বেগজনক ভ্যারিয়েন্ট’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এরপর থেকেই ওমিক্রনের ভয়াবহতা ও সংক্রমণ ছড়ানোর ক্ষমতা নিয়ে কাজ করছেন বিজ্ঞানীরা।
কোয়ারেন্টিনের নিয়ম
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ ৭টি দেশের নাম জানিয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে জানিয়ে দেয়া হয় যে এসব দেশ থেকে কেউ এলে তাদের নিজ খরচে সরকার নির্ধারিত হোটেলে ১৪ দিন প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে।
উল্লেখিত দেশগুলো হলো বতসোয়ানা, ইসোয়াতিনি, ঘানা, নামিবিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, জিম্বাবুয়ে এবং লেসোথো।
এসব দেশ থেকে বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে বিমানে ওঠার আগেই কোয়ারেন্টিনের জন্য সরকারি নির্ধারিত হোটেল নির্বাচন করতে হবে যাত্রীদের।
হোটেলে কোয়ারেন্টিনের সপ্তম দিনে করোনা পরীক্ষায় পজিটিভ রিপোর্ট এলে যাত্রীকে আলাদা করে আইসোলেশনে পাঠানো হবে।
আর নেগেটিভ রিপোর্ট এলে তাকে হোটেলে বাকি সাত দিন কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে।
এর পর ১৪তম দিনে দ্বিতীয় করোনা পরীক্ষায় নেগেটিভ রিপোর্ট আসলে ওই যাত্রী কোয়ারেন্টিন কেন্দ্র থেকে চলে যেতে পারবেন।
এসডব্লিউ/এসএস/১৪২০
আপনার মতামত জানানঃ