দেশে গত এক বছরে এইচআইভিতে আক্রান্ত ৭২৯ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে। এদের মধ্যে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশ আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা শরণার্থী আছেন ১৮৮ জন। গত একবছরে এইডসের আক্রান্ত হয়ে ২০৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর সব মিলিয়ে দেশে বর্তমানে সম্ভাব্য এইচআইভি আক্রান্তের সংখ্যা ১৪ হাজার।
বুধবার ( ১ ডিসেম্বর) রাজধানীর বিসিপিএস মিলনায়তনে বিশ্ব এইডস দিবস আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এ তথ্য জানান।
এইডস এর সংক্রমণ প্রতিরোধ এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধি করাই এবারের বিশ্ব এইডস দিবস পালনের অন্যতম উদ্দেশ্য। এবারে এইডস দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারিত হয়েছে ‘সমতার বাংলাদেশ, এইডস ও অতিমারী হবে শেষ’।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক ও টিবি-লেপ্রোসী ও এইডস/এসটিডি কর্মসূচির লাইন ডিরেক্টর ডা. মো. খুরশীদ আলম সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
তিনি জানান, বাংলাদেশে প্রথম এইচআইভি শনাক্ত হয় ১৯৮৯ সালে। বাংলাদেশে সাধারণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে এইচআইভি সংক্রমণের হার ০.০১ শতাংশের নিচে। তবে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে সংক্রমণের হার কিছুটা বেশি।
প্রবন্ধে বলা হয়, দেশে সম্ভাব্য এইচআইভি আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১৪ হাজার জন। তবে ১৯৮৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত মোট এইচআইভি আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছেন ৮ হাজার ৭৬১ জন এবং এ পর্যন্ত মোট মারা গেছেন ১ হাজার ৫৮৮ জন। দেশে গত ১ বছরে মোট এইচআইভি টেস্ট হয়েছে ৬ লাখ ২৮ হাজার ৩১২ জনের। এছাড়া ব্লাড স্ক্রিনিং করা হয়েছে আরও ৬ লাখ ৬২ হাজার ৭৫৭ জনের।
এই সময়ে নতুন আক্রান্তদের মধ্যে সাধারণ জনগোষ্ঠী ১৮৬ জন, রোহিঙ্গা ১৮৮ জন, বিদেশ ফেরত প্রবাসী ও তাদের পরিবারের সদস্য ১৪৪ জন, ইনজেকশনের মাধ্যমে শিরায় মাদক গ্রহণকারী ৬১ জন, নারী যৌনকর্মী ১৭ জন, সমকামী ৬৭ জন, পুরুষ যৌনকর্মী ৫৩ জন ও উভয় লিঙ্গের ১৩ জন।
ডা. খুরশীদ আলম জানান, গত ১ বছরে আক্রান্ত ৭২৯ জনের মধ্যে চিকিৎসা সেবার (এন্টি রেট্রোভাইরাল থেরাপি) আওতায় এসেছেন ৬৪২ জন। এইচআইভি টেস্টিং এবং চিকিৎসা (অ্যান্টি রেট্রোভাইরাল ড্রাগ) সম্পূর্ণ বিনামূল্যে দিচ্ছে সরকার। দেশব্যাপী ১১টি সরকারি হাসপাতাল থেকে এইডস আক্রান্ত রোগী চিকিৎসা (এআরভি) পাচ্ছেন। এছাড়া দেশব্যাপী ২৮টি সরকারি হাসপাতালের এইচআইভি টেস্টিং সেন্টার থেকে বিনামূল্যে এইচআইভি টেস্ট করা হচ্ছে। এসব এইচআইভি টেস্টিং সেন্টারে যেকোনো ব্যক্তি সম্পূর্ণ বিনামূল্যে এইচআইভি টেস্ট করতে পারেন।
তিনি বলেন, দেশে সম্ভাব্য এইচআইভি আক্রান্ত ১৪ হাজার ব্যক্তির মধ্যে ৬৩ শতাংশ তাদের এইচআইভি স্ট্যাটাস জানেন। যারা তাদের এইচআইভি আক্রান্ত হওয়ার তথ্য জানেন তাদের মধ্যে ৭৭ শতাংশ চিকিৎসাসেবার (এআরটি) আওতায় আছেন। যারা চিকিৎসা (অ্যান্টি রেট্রোভাইরাল থেরাপি) নিচ্ছেন তাদের ৯৩ শতাংশের ভাইরাল লোডে নিয়ন্ত্রণে আছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী, গত এক বছরে আক্রান্ত ৭২৯ জনের মধ্যে চিকিৎসা সেবার (অ্যান্টি রেট্রোভাইরাল থেরাপি) আওতায় এসেছেন ৬৪২ জন। এইচআইভি টেস্টিং এবং চিকিৎসা (অ্যান্টি রেট্রোভাইরাল ড্রাগ) সম্পূর্ণ বিনামূল্যে দিচ্ছে সরকার। দেশব্যাপী ১১টি সরকারি হাসপাতাল থেকে এইডস আক্রান্ত রোগী চিকিৎসা পাচ্ছেন।
এছাড়া, দেশব্যাপী ২৮টি সরকারি হাসপাতালের এইচআইভি টেস্টিং সেন্টার থেকে বিনামূল্যে এইচআইভি টেস্ট করা হচ্ছে। এসব এইচআইভি টেস্টিং সেন্টারে যেকোনও ব্যক্তি সম্পূর্ণ বিনামূল্যে এইচআইভি টেস্ট করতে পারেন। বাংলাদেশে সম্ভাব্য এইচআইভি আক্রান্ত ১৪ হাজার ব্যক্তির মধ্যে ৬৩ শতাংশ তাদের এইচআইভি স্ট্যাটাস জানেন। এদের মধ্যে ৭৭ শতাংশ চিকিৎসা সেবার আওতায় আছেন।
শিশুদের এইচআইভি সংক্রমণ প্রতিরোধ (পিএমটিসিটি) কার্যক্রম ১৩টি সরকারি হাসপাতালে চালু আছে। পিএমটিসিটি কার্যক্রমের আওতায় গত ১ বছরে ১ লাখ ১৩ হাজার ২১৯ জনের এইচআইভি টেস্ট হয়েছে। ১ বছর ২১ জন অন্তঃসত্ত্বা নারী এইচআইভি পজিটিভ শনাক্ত হয়েছেন। পুরাতন ও নতুন মিলিয়ে ১ বছরে ৭২ জন পিএমটিসিটি সেবা নিচ্ছেন। এআরটি নিচ্ছেন ৭২ জন অন্তঃসত্ত্বা নারী। গত ১ বছরে ৫৩ জন সন্তান জন্ম দিয়েছেন। এই ৫৩ জনের মধ্যে ৪৩ জন শিশু এইচআইভি নেগেটিভ। বাকি শিশুদের পরীক্ষা এখনো শেষ হয়নি বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।
এইডস রোগের চিকিৎসা সেবা নিয়ে অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, সরকার অন্যান্য রোগের মতো এইডসের পরীক্ষা ও চিকিৎসা সেবা বিনামূল্যে দিচ্ছে। দেশের ১১টি সরকারি হাসপাতাল থেকে এইডস আক্রান্ত রোগীরা বিনামূল্যে সরকারি এই চিকিৎসা সেবা পাচ্ছে। করোনার এই সংকটকালেও সরকার এইডস রোগীদের পরীক্ষা কার্যক্রম ও চিকিৎসা সেবা অব্যাহত রেখেছে। নিকট ভবিষ্যতেই এইচআইভি টেস্টিং কার্যক্রম দেশের সকল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও সদর হাসপাতাল সম্প্রসারণ করা হবে।
এইডস মহামারি শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত ৮ কোটি মানুষ এইচআইভি সংক্রমিত হয়েছেন। ৩ কোটি ৬৩ লক্ষ মানুষ মারা গিয়েছেন। ২০২০ সালের পরিসংখ্যান বলছে, ওই বছর গোটা বিশ্বে অন্তত ৩ কোটি ৭৭ লক্ষ মানুষ এইচআইভি নিয়ে জীবিত ছিলেন। এইচআইভি সংক্রমিত কেউ দীর্ঘদিন বিনা চিকিৎসায় থাকলে তা এইডস (অ্যাকোয়ার্ড ইমিউনোডেফিসিয়েন্স সিন্ড্রোম)-এ পরিণত হয়।
গত শতকের ১৯৮১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম এইডসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। ওই বছরই দেশটির রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল (সিডিসি) এই রোগের জন্য দায়ী ভাইরাস এইচআইভিও শনাক্ত করে।
অনিরাপদ যৌনতা, সিরিঞ্জের সূঁচের মাধ্যমে মানবদেহে প্রবেশ করে এইচআইভি ভাইরাস। এছাড়া, মায়ের মাধ্যমেও এইডসে আক্রান্ত হয় শিশুরা। কোনো গর্ভবতী নারীর দেহে এইডসের জীবাণু থাকলে তা অনাগত সন্তানকেও সংক্রমিত করে।
সাহারা ও নিম্ন আফ্রিকার অঞ্চলগুলোতে এইডসের প্রকোপ সবচেয়ে বেশি। প্রতি বছর বিশ্বজুড়ে লাখ লাখ মানুষ মারা যান এইডসে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেব অনুযায়ী, ২০১৮ সালে বিশ্বে এইডসে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছিলেন ১০ লাখ মানুষ।
এ পর্যন্ত এইচআইভি-র কোনও চিকিৎসা নেই। এত দিন জানা ছিল, একবার কেউ সংক্রমিত হলে, সারা জীবন এই ভাইরাস নিয়েই বাঁচতে হবে তাকে। দশকের পর দশক গবেষণার পরেও পথ খুঁজে পাননি চিকিৎসকেরা।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/২০৩৫
আপনার মতামত জানানঃ