এশীয় অঞ্চলের সমুদ্রগুলোতে জলদস্যুদের তৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। তবে এখানে রাজনৈতিক ইন্ধন বা সেরকম কোনো নেপথ্য তৎপরতা থাকতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। জানা গেছে, করোনা মহামারীর মধ্যে এশিয়ার বিভিন্ন দেশের জলসীমায় দস্যুতার (পাইরেসি) ঘটনা বাড়ছে। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২৮ নভেম্বর ২০২০, শনিবার পর্যন্ত মোট ৯১টি দস্যুতার ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে। এর মধ্যে গত বছর শূন্য থাকলেও চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের জলসীমায় এবার দস্যুতার তিনটি ঘটনা ঘটেছে।
এশীয় অঞ্চলে চলাচলকারী জাহাজে জলদস্যুতা প্রতিরোধকারী সংস্থা রিক্যাপ এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য দিয়েছে। সংস্থাটি বলছে, করোনাকালে সিঙ্গাপুর উপকূল ও মালাক্কা প্রণালির জলসীমায় সবচেয়ে বেশি দস্যুতার ঘটনা ঘটেছে। সামরিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, আন্তর্জাতিক রাজনীতির স্পটলাইট এখন এশিয়ার সমুদ্র এলাকায়। চীনের সঙ্গে উত্তেজনার সূত্রে এ অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, ভারত ও অস্ট্রেলিয়া নিজেদের সামরিক শক্তি প্রদর্শনের চেষ্টা করছে। অন্যদিকে চীনও এই এলাকায় ব্যাপকভিত্তিক তৎপরতা পরিচালনা করছে।
কলম্বোভিত্তিক একজন থিঙ্কট্যাঙ্কের দাবি, বিবদমান দুই পক্ষ একে অপরের গতিবিধি নজরে রাখতে চায়। এ কারণে এ অঞ্চলে জলদস্যুদের তৎপরতা বৃদ্ধি উভয় পক্ষের জন্যই মঙ্গলকর। দুই পক্ষই এখন যুক্তি দিতে পারে যে, জলদস্যুদের দমনে আমাদের সমুদ্রে সক্রিয় থাকা প্রয়োজন। উভয় পক্ষই এর সুযোগ নেবে। কিন্তু এটা তাদের দ্বারাই সংঘটিত বা তাদের প্রভাব রয়েছে, সেরকম কোনো প্রমাণ এখানে পাওয়া যাবে না। তবে এসব ব্যাপার এভাবেই ঘটে, এর অনেক উদাহরণ মেলে।
রিক্যাপ প্রকাশিত সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ১ জানুয়ারি থেকে ২৮ নভেম্বর পর্যন্ত এশিয়ার বিভিন্ন দেশের জলসীমায় ৯১টি দস্যুতার ঘটনা ঘটেছে। গত বছরের একই সময়ে ৭২টি ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছিল। আমদানি-রপ্তানি ও শিপিং ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নিরাপদ সমুদ্রবাণিজ্যের জন্য দস্যুতা সবসময় বড় হুমকি। জলসীমা নিরাপদ ও নিজেদের সুনাম রক্ষার জন্য দস্যুতা নিরাময়ে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। কারণ এ ধরনের ঘটনা বাড়তে থাকলে বন্দরের প্রতি বহির্বিশ্বে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা যায়, সিঙ্গাপুর উপকূল ও মালাক্কা প্রণালিতে বিগত ১১ মাসে সবচেয়ে বেশি ৩৩টি দস্যুতার ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া ইন্দোনেশিয়ায় ২০টি, ফিলিপাইনে ১৪টি, ভারতে ৯টি, ভিয়েতনামে ৬টি, মালয়েশিয়ায় ২টি ও বাংলাদেশে ৩টি ঘটনা চিহ্নিত করা হয়েছে।
রিক্যাপের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিগত ১২ বছরের মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরে ২০১০ সালে সর্বোচ্চ ২১টি দস্যুতার ঘটনা রেকর্ড করা হয়। এরপর ২০১১ সালে ১৪, ২০১২ সালে ১২, ২০১৫ সালে ১০, ২০১৬ সালে ১, ২০১৭ সালে ১১ ও ২০১৮ সালে ৯টি ঘটনা ঘটে। তবে কোস্টগার্ড ও বন্দরের গৃহীত নানা পদক্ষেপের কারণে গত বছর জলদস্যুতায় রেকর্ডশূন্য ছিল বাংলাদেশ। রিক্যাপ বলছে, এ বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি মাতারবাড়ী, ৬ মার্চ ও ২৪ মে চট্টগ্রাম বন্দর এলাকায় তিনটি দস্যুতার ঘটনা ঘটেছে।
বাংলাদেশ কোস্টগার্ড অবশ্য উপকূলে জলদস্যুদের তৎপরতার কথা স্বীকার করে না। এটা রাজনৈতিক কৌশল নাকি বাস্তব দাবি, তা নিশ্চিত হওয়া যায় না। কোস্টগার্ড পূর্বজোনের মিডিয়া অফিসার লেফটেন্যান্ট শাহ জিয়ার রহমান অবশ্য রিক্যাপের প্রতিবেদনে ভিন্নমত পোষণ করেন। তিনি সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘প্রকৃতপক্ষে গত তিন বছর চট্টগ্রাম বন্দর ও বহির্নোঙর এলাকার জাহাজগুলো জলদস্যুতামুক্ত রয়েছে। অবশ্য বন্দরে চোরদের একটি সিন্ডিকেট ছিল, গোয়েন্দা তথ্যে তাদের কয়েকজনকে গ্রেপ্তার ও বাকিদের পুনর্বাসন করায় এ ধরনের ঘটনা আর নেই।’
জলদস্যুদের তৎপরতা বৃদ্ধির কারণ যাই হোক, দস্যুতা যে বাড়ছে এটা অস্বীকারের সুযোগ নেই। এভাবে চলতে থাকলে বাংলাদেশের বন্দরকেন্দ্রিক বাণিজ্য ও নিরাপত্তা এর দ্বারা ব্যাহত হতে পারে। বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক খায়রুল আলম এ বীষয়ে সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘দেশের বহির্নোঙর ও জলসীমায় আসা জাহাজে দস্যুতার ঘটনা বাড়লে সমুদ্রপথে পণ্য পরিবহনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। অনেকে জাহাজ পাঠাতে আগ্রহ দেখায় না, এলেও পণ্য পরিবহনে বাড়তি ভাড়া আরোপ করে। ফলে আমদানি-রপ্তানিকারকরা ভোগান্তির পাশাপাশি আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হন।’
এসডাব্লিউ/আরা/১১৫০
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগীতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগীতার অনুরোধ জানাচ্ছি।
[wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ