জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে এবার শীতে মানুষ প্রচণ্ড ঠাণ্ডার সম্মুখীন হবে বলে বিজ্ঞানীরা পূর্বাভাস দিচ্ছেন। এমনকি ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে শীতের তাণ্ডব। চীনের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশগুলোতে ১১৬ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ তুষারপাত লিপিবদ্ধ করা হয়েছে।
সূত্র মতে, ১৯০৫ সালের পর ওই অঞ্চলে এটিই সর্বোচ্চ তুষারপাতের রেকর্ড বলে চীনের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সিনহুয়া এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে। জানা যায়, লিয়াওনিং প্রদেশের রাজধানী শেনইয়াংয়ে গড় তুষারপাত হয়েছে ২০ ইঞ্চি। ১৯০৫ সালের পর এত বড় বিপর্যয় কখনো হয়নি।
চীনের কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের সূত্র মতে, পুরো উত্তর-পূর্ব চীনের মোট ২৭টি অঞ্চল সর্বোচ্চ দুর্যোগের মধ্যে আছে। ইতোমধ্যে এসব অঞ্চলে রেড অ্যালার্টও জারি করা হয়েছে।
আবহাওয়া দফতরের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, গত ৭ নভেম্বর থেকেই হিমশীতল হাওয়া বইতে শুরু করেছে চীনে। বর্তমানে উত্তরপূর্বাঞ্চলের কয়েকটি এলাকার তাপমাত্রা শূন্যের চেয়ে ১৪ ডিগ্রি নেমে গেছে।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অসময়ে আগাম শীতের কারণে এই তুষারপাত শুরু হয়। এর ফলে দৈনন্দিন জীবনে ব্যাঘাত ঘটেছে। মানুষ এক প্রকার অসহায় হয়ে পড়েছে।
লিয়াওনিং প্রদেশের রাজধানী শেনইয়াংয়ে গড়ে ২০ ইঞ্চি তুষারপাত হয়েছে বলে ওই প্রতিবেদনে জানা গেছে। এছাড়াও মঙ্গোলিয়ায় ভারী তুষারপাতের কারণে একজন মারাও গেছেন ও প্রায় ছয় হাজারের বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। মঙ্গোলিয়ান শহর টংলিয়াওর আবহাওয়াবিদরা বলছেন, তুষারপাতের এই ঘটনা একেবারেই আকস্মিক।
অন্যদিকে, ইনার মঙ্গোলিয়া এবং উত্তর-পূর্ব চীনের ২৭টি এলাকায় তুষারঝড়ের জন্য সর্বোচ্চ সতর্কতা রেড অ্যালার্ট জারি করেছে কর্তৃপক্ষ।
ভারী তুষারপাতের কারণে লিয়াওনিংয়ের যান চলাচল ব্যাহত হয়েছে। সেখানকার বেশির ভাগ এক্সপ্রেসওয়ের টোল স্টেশন আগামী মঙ্গলবার পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। দালিয়ান ও দানডং ছাড়া অন্য এলাকার ট্রেন ও বাস স্টেশন বন্ধ রয়েছে।
এদিকে ওই অঞ্চলে গত কয়েক দিন বিদ্যুৎ সংকট ছিল। বিদ্যুৎ না থাকায় তুষারঝড় কবলিত এলাকাগুলোতে ঘরবাড়ি উষ্ণ রাখা নিয়ে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।
এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, কয়লা আমদানি বাড়িয়ে ও বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা সর্বোচ্চ করার মাধ্যমে ঘরবাড়িগুলোকে উষ্ণ রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় দাম কমিয়ে খাদ্য সরবরাহ বাড়ানোর আহ্বানও জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
প্রসঙ্গত, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর থেকেই চীনের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ওই এলাকায় বিদ্যুৎ সংকট দেখা দেয়। কয়লার দাম বৃদ্ধিকে এর জন্য দায়ী করেছিল স্থানীয় গণমাধ্যম।
বিশেষজ্ঞদের মতে, লা নিনা ও দুর্বল পোলার ভরটেক্সের কারণে এবারের শীতকালে স্বল্প সময়ের জন্য হঠাৎ হঠাৎ খুব ঠাণ্ডা অনুভূত হতে পারে বাংলাদেশসহ এশীয় অঞ্চলের দেশগুলোতে। পৃথিবীর জলবায়ু পরির্তনের সাথে প্রক্রিয়াটি যুক্ত।
সূত্র মতে, পোলার ভরটেক্স বাধাপ্রাপ্ত হলে অথবা স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় চলতে না পারলে ইউরোপ ও এশিয়ার বেশির ভাগ অঞ্চলে ঠাণ্ডা বায়ু ছড়িয়ে পড়ে এবং চলতি বছর এ কারণে বাংলাদেশেও শীতের কোনো কোনো সময় প্রচণ্ড ঠাণ্ডা পড়তে পারে। ঠিক এর বিপরীত কারণেই এবার এশিয়া, আফ্রিকা ও ইউরোপে স্বাভাবিক তাপমাত্রার চেয়ে বেশি গরম ছিল।
এসডব্লিউ/এসএস/২০০৫
আপনার মতামত জানানঃ