ফেসবুক বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম। প্রতিষ্ঠানের তথ্য অনুযায়ী মাসে তাদের দুইশ সত্তর কোটি নিয়মিত ব্যবহারকারী রয়েছে। লাখ লাখ মানুষ এই প্রতিষ্ঠানে হোয়াটসঅ্যাপ এবং ইন্সটাগ্রামের মতো পণ্যও ব্যবহার করে।
কিন্তু ব্যবহারকারীদের গোপনীয়তা রক্ষা করতে ব্যর্থতা থেকে শুরু করে ভুয়া তথ্য ছড়ানো বন্ধে যথেষ্ট ব্যবস্থা না নেয়ার অভিযোগ রয়েছে ফেসবুকের বিরুদ্ধে।
সম্প্রতি সময়ে একের পর এক অভিযোগে বিদ্ধ হচ্ছে ফেসবুক। আর প্রতিটি অভিযোগের মাত্রাই ছাড়িয়ে যাচ্ছে আগেরটা। এর মধ্যেই প্রায় ৭ ঘণ্টা বন্ধ থাকার জেরে ব্যাপক লোকসানের সম্মুখীন হতে হয়েছে ফেসবুককে।
সম্প্রতি ফেসবুকের ‘হুইসেল ব্লোয়ার’ ফ্রান্সেস হাউগেন মার্কিন সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে অভ্যন্তরীণ একটি রিপোর্ট পেশ করেন। আর এতেই অভিযোগের লাইন লেগে গেছে।
অনেক অভিযোগের মধ্যে হাউগেনের জমা দেওয়া নথিতে উল্লেখ আছে, ফেসবুক কীভাবে আরএসএস গোষ্ঠী পরিচালিত অ্যাকাউন্টগুলোর পোস্ট প্রমোট করেছে।
হাউগেন বলেন, আরএসএস গোষ্ঠীর ফেসবুক অ্যাকাউন্টগুলো মুসলিম-বিদ্বেষী কনটেন্টের প্রচারণা চালায়। হিন্দুপন্থী জনগোষ্ঠীকে লক্ষ্য করে এ প্রচারণা চালায় তারা।
সূত্র মতে, মুসলমানদের ‘শুকর’ এবং ‘কুকুর’-এর সাথে তুলনা করে অসংখ্য অমানবিক পোস্ট করা হয়েছে এসব অ্যাকাউন্ট থেকে। হয়েছে কোরআন অবমাননা করা পোস্টও। কিন্তু এসব মুসলিম-বিদ্বেষী কনটেন্ট ফেসবুক মডারেট করেনি বলে অভিযোগ হাউগেনের। তার দাবি, ভারতে বাংলা ভাষার কনটেন্টগুলো পর্যবেক্ষণ করার জন্য বাঙালি মডারেটরের ঘাটতি ছিল।
হাউগেন আরও দাবি করেছেন, বিদ্বেষ ছড়ানো কনটেন্টের মাত্র ০.২ শতাংশ পোস্ট সরানো হয় ফেসবুকের অটোমেটেড সিস্টেমের দ্বারা। মুসলিমবিরোধী পোস্টকে প্রায় কখনও ‘ফ্ল্যাগ’ করা হয়নি ফেসবুকে। ফেসবুকের সিভিক ইন্টেগ্রিটি গ্রুপের প্রোডাক্ট ম্যানেজার ছিলেন ফ্রান্সেস হাউগেন। গত মে মাসে সংস্থাটির চাকরি ছাড়েন তিনি।
মঙ্গলবার ক্যাপিটল হিলে হাউগেন বলেন, ‘ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামকে নিরাপদ করার উপায় ভালো করেই জানে সংস্থা। কিন্তু প্রয়োজনীয় সে সব পরিবর্তন ফেসবুক কর্তৃপক্ষ আনতে চায় না। কারণ তারা (ফেসবুক) মানুষের নিরাপত্তার আগে ব্যবসায়িক লাভকে বেশি প্রাধান্য দেয়।’
এছাড়াও দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনের সবচেয়ে সংবেদনশীল কিছু ইস্যুতে ফেসবুকের ভূমিকার দিকে আঙুল তুলেছেন হাউগেন।
ফেসবুকের সাবেক এই প্রোডাক্ট ম্যানেজার জানান, মিয়ানমার ও ইথিওপিয়ায় চলমান সহিংসতা এবং চীন ও ইরানের গুপ্তচরবৃত্তির সঙ্গে ফেসবুকের নানা কাজের সম্পৃক্ততা রয়েছে।
হাউগেন বলেন, “আমার ভয় হচ্ছে, মানুষের মধ্যে বিবাদ সৃষ্টি করার মতো ও চরমপন্থী যেসব আচরণ আমরা দেখছি, এটা মাত্র শুরু। মিয়ানমার ও ইথিওপিয়ার ঘটনাগুলো এমন এক ভয়ঙ্কর গল্পের আরম্ভ যে, কেউ এর শেষটা পড়তেও চাইবে না।”
২০১৮ সালে ফেসবুক স্বীকার করে, মিয়ানমারে রোহিঙ্গা সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভুল বা বিকৃত তথ্যের প্রচার রুখে দিতে তারা যথেষ্ট ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছে। চলতি বছরে দেশটিতে সেনা অভ্যুত্থানের পর ফেসবুক প্রতিশ্রুতি দেয়, তারা ভুল তথ্য প্রচার রোধে পদক্ষেপ নেবে।
এছাড়া, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক শিশুদের ক্ষতি করছে, বিভাজন সৃষ্টি করছে এবং গণতন্ত্রকে দুর্বল করছে বলে মার্কিন আইনপ্রণেতাদের কাছে অভিযোগ করেছেন ফেসবুকের সাবেক এই কর্মী।
এসডব্লিউ/এসএস/১২৪০
আপনার মতামত জানানঃ