জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব পড়েছে প্রাকৃতিক পরিবেশের ওপর। সৃষ্টি হচ্ছে দাবানল। পুড়ছে বনভূমি। আর এই পরিবেশের রক্ষার কাজ করতে গিয়ে রেকর্ডসংখ্যক পরিবেশ অধিকারকর্মীর মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে পরিবেশবিষয়ক সংস্থা গ্লোবাল উইটনেস। পরিবেশ রক্ষায় কাজ করার সময় প্রতি সপ্তাহে অন্তত চারজন মারা গেছেন বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। বিভিন্ন দেশ থেকে নথি সংগ্রহ করে তা বিশ্লেষণের পর এসব তথ্য জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
সংস্থাটি জানিয়েছে, ২০২০ সালে ২২৭ জন পরিবেশ অধিকারকর্মী মারা গেছে। এ নিয়ে টানা দুই বছর পরিবেশ রক্ষা করতে গিয়ে মৃত্যুর রেকর্ড হলো।
গত বছরের এই রেকর্ডসংখ্যক মৃত্যুর মধ্যে এক-তৃতীয়াংশের বন উজার, খনি খনন, বৃহৎ আকারের কৃষি ব্যবসা, জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য বাঁধ নির্মাণ এবং অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণ করে প্রাকৃতিক সম্পদ বিনষ্ট করাকে দায়ী করা হয়েছে।
পরিবেশ রক্ষা করতে গিয়ে প্রাণ হারানো এসব মানুষকে ওই প্রতিবেদনে ‘পরিবেশ রক্ষাকারী’ হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষা করতে গিয়ে এসব মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। অথচ বনভূমি, পানি সরবরাহ এবং সমুদ্রের মতো এসব প্রাকৃতির সম্পদে রক্ষা স্বাভাবিকভাবেই হওয়া উচিত।
গ্লোবাল উইটনেস বলছে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় ২০১৫ সালে ‘প্যারিস সমঝোতা’ স্বাক্ষরিত হওয়ার পর থেকে প্রতি সপ্তাহে গড়ে চারজন অধিকারকর্মীর মৃত্যু হয়েছে। তবে এই সংখ্যাটাও হয়তো প্রকৃত সংখ্যার চেয়ে কম কারণ সাংবাদিক ও সুশিল সমাজের সচেতন নাগরিকের ওপর বিধিনিষেধ প্রতিনিয়ত বাড়ছে।
বন উজারের কারণে সবচেয়ে বেশি ২৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। মূলত ব্রাজিল, নিকারাগুয়া, পেরু এবং ফিলিপাইনের মতো দেশে এসব মানুষ হামলার শিকার হয়েছেন। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া আদিবাসী মানুষের মৃত্যু হয়েছে সবচেয়ে। মোট মৃত্যুর এক-তৃতীয়াংশ আদিবাসী।
গ্লোবাল উইটনেস বলছে, সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা গেছেন লাতিন আমেরিকার দেশগুলোয়। আর এই অঞ্চলের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ কলম্বিয়া। সেখানে মারা গেছেন কমপক্ষে ৬৫ জন। বন, ফসলের খেত রক্ষা করতে গিয়ে তারা মারা গেছেন। মৃত্যুর সংখ্যা বিবেচনায় দ্বিতীয় অবস্থানে মেক্সিকো। এখানে এক-তৃতীয়াংশ বনরক্ষক মারা গেছেন বন উজাড় ঠেকাতে গিয়ে।
লাতিন আমেরিকার বাইরে সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা গেছেন ফিলিপাইনে। দেশটিতে খনি খনন, গাছ কাটা ঠেকাতে গিয়ে ও বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পে মারা গেছেন ২৯ জন। ফিলিপাইন লাতিন আমেরিকার বাইরে একমাত্র দেশ যেখানে ১৫ জনের বেশি মানুষ মারা গেছেন। গ্লোবাল টাইমসের প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২০ সালে পরিবেশ রক্ষা করতে গিয়ে যেসব মানুষ মারা গেছেন, সেই মোট সংখ্যার অর্ধেকের বেশি মারা গেছেন ফিলিপাইন, মেক্সিকো ও কলম্বিয়ায়।
সাম্প্রতিক বছরগুলোয় সবচেয়ে কম মানুষ মারা গেছেন ২০১৩ সালে ৯২ জন। এর আগের বছর, অর্থাৎ ২০১২ সালে মারা গেছেন ১৩৯ জন। ২০১৪ সালে মারা গেছেন ১১৫ জন। এ ছাড়া ২০১৫ সালে ১৮৫, ২০১৬ সালে ১৯৮, ২০১৭ সালে ২০১, ২০১৮ সালে ১৬৭ ও ২০১৯ সালে ২১২ জন মারা যান।
গ্লোবাল উইটনেসের সিনিয়র ক্যাম্পেইনার ক্রিস ম্যাডেন, সরকারগুলোকে ‘অধিকারকর্মীদের সুরক্ষার ব্যাপারে গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, কোম্পানিগুলোকে অবশ্যই ‘মানুষ এবং পৃথিবীকে মুনাফার চেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দেওয়া’ শুরু করতে হবে অথবা জলবায়ু এই পরিবর্তন এবং প্রাণহানি’ অব্যাহত থাকবে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৯৪৩
আপনার মতামত জানানঃ