আফগানিস্তানে ভিন্নমতালম্বীদের ওপর সহিংস পদক্ষেপের ঘটনা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত কয়েকদিনে চার বিক্ষোভকারীকে হত্যার পাশাপাশি আফগানিস্তানের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট আমরুল্লাহ সালেহ’র ভাই রহুল্লাহ আজিজীকে হত্যার পর পরিবারকে তার দেহ দাফন পর্যন্ত করতে দেয়নি তালিবান। গোষ্ঠীটি বলছে, তার শরীর পঁচা উচিত।
গত বৃহস্পতিবার (৯ সেপ্টেম্বর) পাঞ্জশির উপত্যকায় তালিবানের সঙ্গে যুদ্ধে নিহত হন রহুল্লাহ। তবে তাকে হত্যার আগেও নির্যাতন করা হয় বলে দাবি পরিবারের। এ বিষয়ে পরিবারের সদস্য এবাদুল্লাহ সালেহ বার্তা সংস্থা রয়র্টাসকে জানান, গতকাল তারা আমার চাচাকে হত্যা করেছে। দাফন করতে দেওয়া হয়নি। এমনকি তালিবানের সদস্যরা বলছেন, তার দেহ পচন ধরা উচিত।
সম্প্রতি তালিবানের হাতে আফগানিস্তানের সর্বশেষ প্রদেশ পাঞ্জশিরের পতন ঘটেছে। তালিবান দাবি করেছে, প্রতিরোধ যোদ্ধাদের সঙ্গে প্রবল লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে পাঞ্জশির উপত্যকা দখল নিতে সমর্থ হয় তারা। কিন্তু এমন দাবি অস্বীকার করে আসছে আহমদ মাসুদের নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল রেসিস্ট্যান্স ফ্রন্ট। এই ফ্রন্টে আছেন সাবেক আফগান ভাইস প্রেসিডেন্ট আমরুল্লাহ সালেহও।
বর্তমানে আহমদ মাসুদ ও আমরুল্লাহ সালেহ কোথায় আছেন তা অস্পষ্ট। ধারণা করা যাচ্ছে, তারা দেশ ছেড়ে তাজিকিস্তানে আশ্রয় নিয়েছেন।
এদিকে, তালিবান তাদের আসল রূপ দেখাতে শুরু করে দিয়েছে শেষ পর্যন্ত। এতে করে ভিন্নমতালম্বী ও নারীরা রয়েছে চরম বিপদে। ইতিমধ্যেই বোঝা গেছে, তালিবানদের কাছে নারীর অবস্থান, পড়ালিখার মূল্য এসব কেমন গুরুত্ব বহন করে। এমন পরিস্থিতি বিবেচনায় তালিবান শাসনামলে আফগানিস্তানের শান্তিপূর্ণ অবস্থান বিরাজ করা অসম্ভব।
জাতিসংঘের তথ্যমতে, গত ১৫ আগস্ট কাবুলের পতনের পর আফগানিস্তানের বেশ কয়েকটি শহরে তালিবানবিরোধী বিক্ষোভ হয়েছে। বিক্ষোভকারীরা নারী অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন এবং আরও বৃহত্তর স্বাধীনতার দাবি তুলেছে। বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে তালিবানরা লাঠি, বেত এবং তাজা গুলি ব্যবহার করেছে।
জাতিসংঘ মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনারের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘যারা শান্তিপূর্ণভাবে নিজেদের অধিকার চর্চা করছে এবং যেসব সাংবাদিক বিক্ষোভ কাভার করছে তাদের বিরুদ্ধে শক্তি প্রয়োগ, বিনা বিচারে আটক অবিলম্বে বন্ধ করতে তালিবানের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি আমরা।’
গতকাল শুক্রবার এক প্রেস ব্রিফিংয়ে জাতিসংঘের মুখপাত্র রাবিনা সামসাদিও বিক্ষোভকারীদের ওপর তালিবানের নিপীড়নের নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, এই চরম অনিশ্চিত সময়ে রাজপথের আফগান নারী ও পুরুষদের কথা শোনাটা গুরুত্বপূর্ণ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, তালিবানদের আচরণের উপর বিশেষ নজরদারি জরুরি হয়ে পড়েছে। তালিবানরা যেরকম প্রতিশ্রুতি দিয়ে এসেছে শুরু থেকে, তাদের কার্যক্রম ঠিক তার উল্টো দাঁড়াচ্ছে। যথেষ্ট সহিংস আচরণে মেতে উঠেছে তালিবানরা। নারী অধিকারের প্রতি সংকীর্ণ মানসিকতা এবং ভিন্নমতালম্বীদের ওপর সহিংস আচরণের পরিচয় দেয়া তালিবানদের ওপর বিশ্ব বিশ্লেষকদের নজরদারি এবং প্রয়োজনে তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়া জরুরি হয়ে উঠছে।
এসডব্লিউ/এমএন/ডব্লিউজেএ/১৩৫৬
আপনার মতামত জানানঃ