অধিকাংশ সমাজে এবং সরকার ব্যবস্থায় সমকামী আচরণ দণ্ডণীয় অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়। বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার ৬টি দেশের সংবিধানে ৩৭৭ ধারা, ১৯টি দেশে সমপর্যায়ের ধারা এবং সম্পূরক ধারা মোতাবেক সমকামিতা ও পশুকামিতা প্রকৃতিবিরোধী যৌনাচার হিসেবে শাস্তিযোগ্য ও দণ্ডনীয় ফৌজদারি অপরাধ।
দেশে ২০১৩ সালে এক নারী সমকামীযুগলকে বিয়ের অপরাধে গ্রেপ্তার করে র্যাব। ১৯ শে মে ২০১৭ সালে ঢাকার কেরানীগঞ্জে ২৭ জন সমকামীকে আটক করে র্যাব। ৪ঠা এপ্রিল ২০১৮ সালে পাবনা জেলায় দুই ছেলের বিয়ের খবর আসে, এক্ষেত্রেও পুলিশ হস্তক্ষেপ করেছিলো। আসলে বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ৩৭৭ ধারা অনুযায়ী সমকামিতা একটি মারাত্নক অপরাধ।
৩৭৭ ধারায় বলা হয়েছে, “কোন ব্যক্তি যদি প্রকৃতির নিয়মের বিরুদ্ধে কোন পুরুষ, স্ত্রীলোক বা পশুর সাথে যৌন সঙ্গম করে, তবে সে ব্যক্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে, অথবা দশ বছর পর্যন্ত যেকোন মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবে এবং তদুপরি অর্থ দণ্ডেও দণ্ডিত হবে।”
তবে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে ২০১৮ সালে সমকামিতা আর অপরাধ নয় বলে ঐতিহাসিক রায় দেয় দেশটির সর্বোচ্চ আদালত। পাশাপাশি সমকামিতাকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসাবে বর্ণনা করা ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৭ ধারা বাতিল করে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট।
এবার ভারতে খোঁজ পাওয়া গেল এক পণ্ডিতের। নাম স্বপ্না পাণ্ড্য; তবে লোকে তাকে চেনেন স্বপ্না পণ্ডিত নামে। আমেরিকায় বসবাস করা স্বপ্না শুধু মহিলা পণ্ডিত হওয়ার জন্যই পরিচিতি পাননি। বরং তিনি এমন এক জন পণ্ডিত যিনি সমলিঙ্গে বিয়ে দেন। স্বপ্না ওয়াশিংটনের ‘এলজিবিটি পণ্ডিতজি’।
আমেরিকায় এক ভারতীয় পুরোহিত পরিবারে জন্ম স্বপ্নার। মেরিল্যান্ডে থাকার সময় বিয়ের মণ্ডপই ছিল তার খেলার মাঠ। তার ঠাকুরদাও পণ্ডিত ছিলেন। ছোটবেলা থেকেই সে সব দেখে বড় হয়েছেন স্বপ্না। ঠাকুরদা যখন মণ্ডপে মন্ত্র পাঠ করে বিয়ে দিতেন, পাশে বসে খেলা করত ছোট্ট স্বপ্না।
আমেরিকায় হিন্দু-মতে বিয়ে দিতে শুরু করলেন এই মহিলা পণ্ডিত। বহু বিয়ে দিয়েছেন তিনি। কিন্তু নিজের জন্য যোগ্য কাউকে খুঁজে পাচ্ছিলেন না। অনেক খোঁজার পর ২০১০ সালে সহর নামে এক পাকিস্তানি-আমেরিকান মহিলার সঙ্গে তার পরিচয় হয়। তার সঙ্গে মেলামেশার পর স্বপ্না উপলব্ধি করেছিলেন সহরই তার উপযুক্ত জীবনসঙ্গী হয়ে উঠতে পারবেন। সহরের সঙ্গে এখন ওয়াশিংটনে থাকেন তিনি। দু’বছরের এক সন্তানও দত্তক নিয়েছেন তারা।
এই উপলব্ধির সঙ্গে স্বপ্না সমকামীদের বিয়ের প্রয়োজনীয়তা কতটা তাও বুঝতে পারেন। তার পর থেকেই সমকামীদের বিয়ে দিতে শুরু করলেন তিনি। এর জন্য হিন্দু পণ্ডিতদের রোষের মুখেও পড়তে হয়েছে তাকে। চূড়ান্ত সমালোচনার শিকার হতে হয়েছে।
মহিলা হওয়ায় অনেক অভিভাবক তাকে পণ্ডিত হিসাবে মেনে নিতেও চাননি। ঋতুস্রাবের কারণে মহিলাদের শরীর নাকি অপবিত্র, তাই এমন শুভ কাজ তার হাতে সম্পন্ন হোক চাইতেন না অনেকেই।
হাল ছাড়েননি স্বপ্না। স্বপ্নাকে হাল ছাড়তে দেননি সেই সমস্ত সমকামী দম্পতিরা। স্বপ্না যতটা গুরুত্ব দিয়ে এবং যতটা অনুভূতি দিয়ে সমকামীদের বিয়ে দিতেন আর কোনও পণ্ডিত তা করতেন না, দাবি ওই দম্পতিদের। হবু যুগলদের কাছে তাই স্বপ্না হয়ে উঠেছিলেন প্রথম পছন্দ।
সংস্কৃতে মন্ত্র পাঠ করে সাত পাক ঘুরিয়ে যাবতীয় নিয়ম মেনে বিয়ে দেন স্বপ্না। সমকামী ছাড়াও অনেক যুগল এখন স্বপ্নার কাছে আসেন। স্বপ্নার হাতেই জীবন শুরু করেন তারা।
স্বপ্না যখন ১০ বছরের, সে বারই প্রথম পরিবারের সঙ্গে ভারতে এসেছিলেন। দেশে পা রেখেই ভালবেসে ফেলেছিলেন তিনি। ভারতের সংস্কৃতি তাকে মুগ্ধ করেছিল। তবে এখন আর সেভাবে ভারতে যাতায়াত নেই। কিন্তু মনেপ্রাণে স্বপ্না ভারতীয়। ভরতনাট্যম আর কত্থকের মাধ্যমে ভারতের সংস্কৃতির সঙ্গে একাত্ম হয়ে রয়েছেন তিনি।
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/১৫২০
আপনার মতামত জানানঃ