দক্ষিণ আমেরিকার দেশ কলম্বিয়ায় করোনাভাইরাসের নতুন একটি ধরন শনাক্ত হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এই ধরনের নামকরণ করেছে ‘মিউ’। গ্রীক বর্ণমালার ক্রম অনুযায়ী এই ধরনটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘মিউ’। এটি মানুষের শরীরের অ্যান্টিবডির রোগ প্রতিরোধক্ষমতা ধ্বংস করে দিতে পারে বলে প্রাথমিক তথ্য প্রমাণ আসছে।
সে কারণে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) নতুন এ ধরনটিকে তাদের পর্যবেক্ষণের তালিকায় (ভ্যারিয়েন্টস অব ইন্টারেস্ট) অন্তর্ভুক্ত করেছে।
গত জানুয়ারিতে কলম্বিয়ায় প্রথমবারের মত ‘মিউ’ ধরনটি শনাক্ত হয়। সে সময় সেখানে কোভিডে আক্রান্তদের ৩৯ শতাংশ নতুন এই ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণের শিকার হয়েছিলেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, কোভিড থেকে সেরে উঠলে বা টিকা নিলে শরীরে যে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়, মিউ তা ভেঙে ফেলতে পারে। সে কারণেই গত ৩০ অগাস্ট ডব্লিউএইচও ‘ভ্যারিয়েন্ট অব ইন্টারেস্ট’ তালিকায় এ ধরনটি যুক্ত করা হয়েছে।
ক্রমাগত রূপ বদলাতে থাকা করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্টগুলো শনাক্তের জন্য কড়া নজরদারির অংশ হিসেবে বৈজ্ঞানিক গবেষণার তথ্য বিনিময়ের ওপরও জোর দিচ্ছেন ডব্লিউএইচওর কর্মকর্তারা।
বিপজ্জনক নতুন ভ্যারিয়েন্টগুলোর গতিবিধিতে নজর রাখার সুবিধার জন্য সেগুলোকে ‘ভ্যারিয়েন্টস অব কনসার্ন’ এবং ‘ভ্যারিয়েন্টস অব ইন্টারেস্ট’ নামে দুটো তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে।
জানুয়ারিতে শনাক্ত হওয়ার পর বিচ্ছিন্নভাবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনার এ ধরনের উপস্থিতি দেখা গেছে। এ তালিকায় দক্ষিণ আমেরিকার কয়েকটি দেশ ছাড়াও রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপ, এমনকি হংকংও। মিউর ধরন এখনই বিশ্বজুড়ে ব্যাপক না হলেও ধীরে ধীরে শঙ্কা বাড়ছে। ডব্লিউএইচওর বুলেটিনের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের দশমিক ১ শতাংশেরও কম মানুষ মিউ ধরনে আক্রান্ত হয়েছে। তবে কয়েকটি দেশে আক্রান্তের সংখ্যা অনেক। যেমন কলম্বিয়ায় ৩৯ শতাংশ ও একুয়েডরে ১৩ শতাংশ করোনা রোগী এখন মিউ ধরনের।
জানুয়ারিতে শনাক্ত হওয়ার পর বিচ্ছিন্নভাবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনার এ ধরনের উপস্থিতি দেখা গেছে। এ তালিকায় দক্ষিণ আমেরিকার কয়েকটি দেশ ছাড়াও রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপ, এমনকি হংকংও। মিউর ধরন এখনই বিশ্বজুড়ে ব্যাপক না হলেও ধীরে ধীরে শঙ্কা বাড়ছে।
তবে এখনই এ ধরনের ভয়াবহতা নিয়ে অনুমান করা সঠিক হবে না উল্লেখ করে ডব্লিউএইচও বলছে, নতুন এ ধরনের সংক্রমণক্ষমতা কেমন ও ভাইরাসটির অন্যান্য ধরনের তুলনায় এটি কতটা প্রাণঘাতী তা নিশ্চিত হতে আরো বিস্তারিত গবেষণা দরকার। যুক্তরাষ্ট্রের সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ অ্যান্থনি ফাউসির মতে, মিউর জিনবিন্যাসে এমন কিছু পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে, যা অ্যান্টিবডির প্রতিরোধক্ষমতা ভেঙে দিতে পারে। তবে এ ব্যাপারে আরো তথ্যের জন্য গবেষণা প্রয়োজন। কোভিড-১৯-এর কোনো ধরন অ্যান্টিবডিকে পরাস্ত করতে সক্ষম হলেও প্রতিরোধের জন্য টিকাই উত্তম বলে মনে করেন তিনি।
জনস হপকিন্স হেলথ সিকিউরিটির সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ অ্যামেশ এ আদালজা ফাউসির সঙ্গে একমত পোষণ করেন। তিনিও মনে করেন, এখনই মিউ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। মানুষের এখনই উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। কোভিড-১৯-এর ভ্যারিয়েন্টের প্রতিনিয়ত বদল ঘটছে। তিনি এও মনে করেন যে কোভিডের ডেল্টা ধরনের সংক্রমণ ভয়াবহতাকে ছাড়িয়ে যেতে পারবে না মিউ ধরন। বর্তমানে কভিডের বৈশ্বিক সংক্রমণের হিসাবে ৯৯ দশমিক ১ শতাংশই ডেল্টা। কোভিডের অন্যান্য ধরন থেকে বাঁচতে যে সুরক্ষা পদ্ধতি অনুসরণ করতে হয়, মিউ থেকে বাঁচতেও একই পদ্ধতি অনুসরণের পরামর্শ দিয়েছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
গত দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে অসংখ্যবার মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর দেহে সংক্রমিত হতে হতে বেশ কয়েক দফা পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে গেছে সার্স কোভ-২ ভাইরাস বা নভেল করোনাভাইরাস। ফলে বিশ্বে আবির্ভাব ঘটেছে এর অনেক বিবর্তিত ধরনের।
সাধারণ মানুষের সুবিধার্থে পরিবর্তিত এই ধরনসমূহের মধ্যে প্রধান বা প্রতিনিধিত্বশীল ধরনগুলোর বৈজ্ঞানিক নামের পাশাপাশি গ্রিক বর্ণমালা অনুসারে সেগুলোর নামকরণ করেছে ডব্লিউএইচও।
এর আগে, এ রকম ছয়টি ধরনকে করোনাভাইরাসের প্রধান ও প্রতিনিধিত্বশীল ধরন হিসেবে অন্তর্ভূক্ত করেছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এগুলো হলো— আলফা, বিটা, গ্যামা, ডেল্টা, কাপ্পা ও ল্যাম্বডা। এবার এই তালিকায় সপ্তম হিসেবে যুক্ত হলো মিউ; যার বৈজ্ঞানিক নাম বি.১.৬২১।
গত প্রায় দেড় বছরে বিবর্তনের ফলে মূল করোনাভাইরাসের যে পরিবর্তিত ধরনসমূহের আবির্ভাব ঘটেছে সেগুলোকে দু’টি তালিকায় ভাগ করেছে ডব্লিউএইচও— পর্যবেক্ষণ তালিকা (ভ্যারিয়েন্ট অব ইন্টারেস্ট) এবং উদ্বেগজনক তালিকা (ভ্যারিয়েন্ট অব কনসার্ন)।
বর্তমানে ডব্লিউএইচওর উদ্বেগজনক ধরনের তালিকায় রয়েছে আলফা ও ডেল্টাসহ ভাইরাসের চারটি পরিবর্তিত ধরন। বিশ্বের ১৯৩টি দেশে আলফায় আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে, আর ডেল্টায় আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে ১৭০ দেশে।
অন্যদিকে, মিউসহ আরও ৫টি পরিবর্তিত ধরনকে পর্যবেক্ষণ তালিকাভূক্ত করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। সাপ্তাহিক বুলেটিনে ডব্লিউএইচও বলছে, কলম্বিয়া, দক্ষিণ আমেরিকার কয়েকটি দেশ এবং ইউরোপে ইতোমধ্যে এই ধরনে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। এছাড়া কলম্বিয়ায় বর্তমানে সক্রিয় করোনা রোগীর ৩৯ শতাংশ মিউয়ে আক্রান্ত।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৬১৬
আপনার মতামত জানানঃ