দীর্ঘ ২২ বছরে একদিনের জন্যেও সেতুটি ব্যবহার করতে পারেনি এলাকাবাসী। প্রায় অর্ধকোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সেতুটি ছিল শুধু দেখার জন্যই। দুই দশকেরও বেশি সময় আগে নির্মাণ হওয়া এই সেতুটির সংযোগ সড়ক না থাকায় কোনো কাজে আসছিল না।
শেষ পর্যন্ত ইঞ্জিনচালিত নৌকার ধাক্কায় সেতুটির প্রায় অর্ধেক ভেঙে গেছে। ঘটনাটি ঘটেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার ধরখার ইউনিয়নে। গতকাল শুক্রবার (৩ আগস্ট) সকাল ৯টার দিকে সেতুটির সাথে ইট বোঝাই একটি ইঞ্জিন চালিত নৌকার ধাক্কা লাগে। এতেই ভেঙে যায় অর্ধকোটি টাকার সেতু। নৌকায় থাকা খালেক নামে এক ব্যক্তিও আহত হন। তিনি প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।
বনগজ গ্রামের বাসিন্দা মো. কামরুজ্জামাল লালু জানান, শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে ইটবাহী একটি নৌকা সেতুর মাঝখানের পিলারের সঙ্গে ধাক্কা খায়। এতে সেতুটির একাংশ পুরোপুরি ভেঙে পড়ে। ভেঙে পড়া অংশ পড়ে নৌকাটিও ডুবে যায়।
মো. আরমান ও আব্দুল্লাহ নামে স্থানীয় দুই যুবক জানান, সেতুটি এলাকার মানুষের কোনো কাজে আসছিলো না। সেতু যেখানে করা হয়, সেখানে অন্য কোনো যানবাহন তো দূরের কথা বাই সাইকেলও চলে না। শুক্রবার সকালে নৌকার ধাক্কায় সেতুটি ভেঙে যায়। বিষয়টি দেখতে পেয়ে তারা সেখানে ছুটে আসেন।
নৌকার মাঝি মো. রফিক মিয়া বলেন, সরাইল থেকে ৭ হাজার ইট নিয়ে আখাউড়ার গোলখার এলাকায় যাচ্ছিলাম। ওই সেতুর নিচে যাওয়া মাত্র পানির তোড়ে নৌকার একটি অংশ সামান্য ধাক্কা খায়। এতে সেতুর অংশ ভেঙে নৌকায় পড়ে। এতে নৌকাটি ডুবে যায়। সেতুতে থাকা ১১ জনের মধ্যে একজন আঘাতপ্রাপ্ত হন।
স্থানীয় একাধিক সূত্র নৌকার ধাক্কায় সেতুটি ভেঙে পড়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। স্থানীয়রা জানান, এলাকাবাসীর দাবির মুখে ১৯৯৯ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ আসনের তৎকালীন সংসদ সদস্য শাহ আলম বনগজ ও কৃষ্ণনগর গ্রামের মধ্যবর্তী নয়াখালের ওপর সেতুটি নির্মাণের উদ্যোগ নেন। আখাউড়া উপজেলা এলজিইডি’র নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করেছিল।
উত্তর-দক্ষিণে লম্বালম্বি সেতুটির দুই গোঁড়ায় মাটি ছিল না। সংযোগ সড়ক না থাকায় দীর্ঘ ২২ বছর সেতুটিতে কেউ কখনও উঠানামা করেনি। সমতল থেকে অন্তত ১৫ ফুট উঁচু আধভাঙা সেতুটি ঝুলে আছে এখনো।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার ধরখার ইউনিয়নের বনগজ ও কৃষ্ণনগর গ্রামের বিলের মাঝামাঝি সেতুটির অবস্থান। ওই দুই গ্রামসহ উপজেলার মোগড়া ইউনিয়নের ভবানীপুর এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার ঘাটিয়ারা ও বরিশল গ্রামের মানুষের চলাচলের কথা চিন্তা করে ১৯৯৯ সালে সেতুটি নির্মাণ করা হয়।
কিন্তু সেতুটি সমতল থেকে ১৫ ফুট উঁচুতে নির্মাণ করা ও এর সঙ্গে সড়ক সংযোগ না থাকায় কোনো কাজে আসছিলো না। স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল বিভাগ (এলজিইডি) বাস্তবায়ন করা এই সেতুটির দৈর্ঘ্য ১২০ ফুট ও প্রস্থ ৮ ফুট।
অভিযোগ রয়েছে, শুধুমাত্র আর্থিকভাবে নিজেরা লাভবান হতে কোনো ধরণের পরিকল্পনা ছাড়াই তখন এ ধরনের সেতু নির্মাণ করা হয়েছিল। ওই সময়ে উপজেলায় এমন আরও একাধিক সেতু নির্মাণ করা হয়।
ধরখার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বাছির মো. আরিফুল বলেন, সেতু নির্মাণের আগে রাস্তা নির্মাণ করতে হয়। কিন্তু এখানে ঘটেছে উল্টোটা। আগে সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। পরে আর রাস্তা নির্মাণ করা হয়নি।
দুই বছর আগে একটি কর্মসূচি দিয়ে সেখানে ছয় লাখ টাকা ব্যয় করে মাটি ফেলা হয়েছিল। কিন্তু বন্যার পানি সেই মাটি ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। আর বর্তমান মাটির রাস্তা থেকে সেতুটির উচ্চতা প্রায় ১৫ থেকে ১৮ বা ২০ ফুট হবে। এই সেতু কোনো কাজে আসেনি।
এলজিইডি’র উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো: জহিরুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, সেতু ভেঙে পড়ার খবর তারা পেয়েছেন। তবে কতটুকু কি হয়েছে সে সম্পর্কে তিনি নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারছেন না। ঘটনাস্থলের উদ্দেশ্যে তিনি যাচ্ছেন বলে জানান তিনি।
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/১৫১০
আপনার মতামত জানানঃ