ভারতে বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই দেশটিতে সাম্প্রদায়িক ইস্যুর নতুন রূপ গড়ে ওঠে। ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতাকে পুঁজি করে ক্ষমতায় থাকা মোদি সরকারের সাম্প্রদায়িক বিষ ছড়ানোতে দেশটির গণমাধ্যমের একাংশ জড়িত। তারাই নানা খবরে সাম্প্রদায়িকতার নানা রঙ লাগিয়ে ভূয়া খবর পরিবেশন করে বলে জানিয়েছে দেশটির আদালত।
গণমাধ্যমের একাংশের উপর ক্ষোভপ্রকাশ করে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, সমস্যাটা হলো এদেশের সব কিছুকেই সাম্প্রদায়িকতার দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখতে চায় সংবাদমাধ্যমের একাংশ। এটাই মূল সমস্যা। এর ফলে দেশের নামই খারাপ হবে।
করোনা সংক্রমণের শুরুতে গত বছরের মার্চে দেশে করোনার দাপট শুরু হওয়ার সময় তাবলিগ জামায়াতকে দায়ী করা নিয়ে একটি পিটিশন জমা পড়েছিল সুপ্রিম কোর্টে। সুপ্রিম কোর্টে জমা পড়া পিটিশনে দাবি করা হয়েছে, করোনাকে সাম্প্রদায়িক রং দিচ্ছে বহু সংবাদমাধ্যম। শুনানিতে ওয়েব পোর্টালগুলিকেও ভর্ৎসনা করেন প্রধান বিচারপতি এনভি রামানা।
তিনি বলেছেন, ওয়েব পোর্টালগুলো কেবল প্রভাবশালী কণ্ঠস্বরের কথাই শোনে। দায়িত্বজ্ঞানহীনের মতো প্রতিষ্ঠান ও বিচারপতিদের বিরুদ্ধে যা খুশি লেখে। ওরা কেবলই প্রভাবশালীদের বিষয়ে উদ্বেগ দেখায়। বিচারপতি, প্রতিষ্ঠান ও সাধারণ মানুষদের নিয়ে কোনও মাথাব্যথা নেই। আমাদের অভিজ্ঞতা অন্তত তাই বলছে।’
কয়েকটি গণমাধ্যমের সাম্প্রদায়িক স্বরে দেশের বদনাম হচ্ছে। এমনটাই মনে করেন ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি এনভি রামনা। করোনা মহামারির প্রথম দিকে তাবলিগ জামাতকে করোনা সংক্রমণের জন্য দোষী সাব্যস্ত করে বিশেষ একটি সম্প্রদায়কে বিদ্ধ করারও সমালোচনা করেন তিনি।
দিল্লির মার্কজ নিজামুদ্দিন গত বছর অনুষ্ঠিত তাবলিগ জামাতের চিল্লা নিয়ে এক মামলায় ভারতের সর্বোচ্চ আদালত ইউটিউব, ফেসবুক ও টুইটারের দায়বদ্ধতা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেন। সাম্প্রদায়িক খবর প্রকাশ বা সম্প্রচার বিষয়ে সরকারি নিয়ন্ত্রণ নিয়েও প্রশ্ন তোলেন প্রধান বিচারপতি।
ভারতে করোনার প্রথম ঢেউ আছড়ে পড়ার পেছনে অনেকেই মুসলিমদের দায়ী করেছিলেন। বিশেষ করে, দিল্লিতে তাবলিগ জামাতের পর ভারতীয় একাধিক গণমাধ্যমে মুসলিমদের বিরুদ্ধে ফলাও করে মিডিয়া ট্রায়াল শুরু হয়। সেই প্রসঙ্গেই একটি মামলায় সর্বোচ্চ আদালত বলেন, কিছু মিডিয়ার সাম্প্রদায়িক সুর দেশের বদনাম করেছে। প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘কিছু মিডিয়া সবকিছুতেই সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিতে দেখে। ফলে বদনাম হয় দেশের।’
বিভিন্ন ওয়েবসাইট এবং টিভি চ্যানেলে যা দেখানো হয়, তা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সরকারের তরফে কোনও পদক্ষেপ করা হচ্ছে কি না, সে বিষয়ে কেন্দ্রের সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতার কাছে জানতে চান বিচারপতিরা। উত্তর দিতে গিয়ে মেহতাও বলেন, শুধু সাম্প্রদায়িকই দৃষ্টিকোণ থেকেই নয়, গল্প বানিয়েও পরিবেশন করা হয়েছে। বহু পোর্টাল থেকে ভুয়ো খবরও ছড়ানো হয়।
তার পরই ভুয়ো খবর নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বেঞ্চ। বিচারপতিরা বলেন, ইউটিউবে গেলেই বুঝবেন কী ভাবে সহজে ভুয়ো খবর ছড়িয়ে দেওয়া হয় ওই মাধ্যমে। আর যে কেউ অনায়াসে চ্যানেল খুলে ফেলতে পারেন।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৪৩৩
আপনার মতামত জানানঃ