আফগানিস্তান এখন চরম বিশৃঙ্খল! সম্প্রতি দেশটির নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে কট্টরপন্থী হিসেবে পরিচিত তালিবান। নতুন শাসকদের হাত থেকে বাঁচতে পালিয়ে বেড়াচ্ছে নাগরিকরা। আফগানদের পালানোর দৃশ্য, জীবন বাঁচানোর প্রচেষ্টা— এমন ছবি ও ভিডিও ভাইরাল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে, যা নাড়িয়ে দিয়েছে গোটা বিশ্বকে। দেশটির ক্রীড়াঙ্গনেও বিরাজ করছে আতঙ্ক। বিশেষ করে নারী ফুটবলারদের মাঝে।
গ্রীষ্মে মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহারের পর সব কিছু ঠিকঠাকই চলছিল এতদিন। কিন্তু হঠাৎ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে দুই দশক ক্ষমতার বাইরে থাকা তালিবান। ইতোমধ্যে আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণও মুঠোয় নিয়ে ফেলেছে শরিয়াপন্থি সংগঠনটি। এটাকে ‘দুঃস্বপ্ন’ অ্যাখ্যা দিয়েছেন আফগানিস্তান নারী ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক খালিদা পাপল। কারণ নতুন শাসকরা কেমন আচরণ করবে, তা নিয়ে শঙ্কায় আফগান নারীরা। বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি এড়াতে নারীরা দেশত্যাগ করতে পারবে কি না, তা নিয়েও দেখা দিয়েছে শঙ্কা।
তালিবান গোষ্ঠী আফগানিস্তান দখল করার পরই দেশটির সাধারণ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক। সেই আঁচ পড়েছে ক্রীড়াঙ্গনেও। কট্টরপন্থী হিসেবে পরিচিত তালিবানরা বেশিরভাগ খেলাধুলোরই বিরোধী। তবে পুরুষদের ক্রিকেটের ব্যাপারে তারা ছাড় দিবে বলে জানিয়েছে। কিন্তু নারীদের বেলায় কি হবে? নারীদের ঘর থেকে বের হতেই আছে তাদের নানান বিধিনিষেধ, সেখানে নারীদের খেলায় অংশ গ্রহণ অনেক দূরের ব্যাপার। এই অবস্থায় দেশটির নারী খেলোয়াড়রা আতঙ্কে দিন পার করছেন।
বহুবার পালাতে চেয়েছিলেন তারা। কিন্তু পারেননি। কাবুলেই আটকে আছেন আফগান নারী ফুটবল দলের খেলোয়াড়রা এবং তাদের পরিবার। গত সপ্তাহে ফেডারেশনের কিছু ব্যক্তিকে অস্ট্রেলিয়ায় পাঠিয়ে দেওয়া গেলেও বহু ফুটবলার এবং তাদের পরিবার এখনো আফগানিস্তানেই আটকে। পাঁচবার তাদের দেশের বাইরে পাঠানোর চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু কোনো চেষ্টাই সফল হয়নি।
সব মিলিয়ে ১৩৩ জন আফগানিস্তান ছেড়ে যাওয়ার অপেক্ষায় আছেন। এর মধ্যে ২৬ জন খেলোয়াড় আছেন। এছাড়াও আছে তাদের পরিবার। যার মধ্যে বেশ কিছু শিশু আছে। সমস্যা হলো, অনেকের কাছেই পাসপোর্ট নেই। প্রয়োজনীয় কাগজপত্রও নেই। ফলে কোনো দেশেই তাদের পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না। তবে এখনো তাদের দেশ থেকে বার করার চেষ্টা চলছে বলে মার্কিন প্রশাসন সূত্র সংবাদসংস্থা এপি-কে জানিয়েছে।
তারা তালিবানকে ভয় পাচ্ছেন। কারণ, নারীদের খেলাধুলো তালিবান মানবে বলে তারা মনে করেন না। বস্তুত, প্রথম তালিবান আমলে আফগানিস্তানে সমস্ত খেলাধুলো নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। স্টেডিয়ামগুলিকে শাস্তি দেওয়ার মঞ্চ হিসেবে ব্যবহার করা হতো। এবার পুরুষদের ক্রিকেটের অনুমতি দিলেও মেয়েদের ফুটবলকে তালিবান অনুমতি দেবে বলে মনে করছেন না কোনো বিশেষজ্ঞই।
ওই নারী ফুটবলাররা সংবাদসংস্থাকে জানিয়েছেন, তারা তালিবানকে ভয় পাচ্ছেন। কারণ, নারীদের খেলাধুলো তালিবান মানবে বলে তারা মনে করেন না। বস্তুত, প্রথম তালিবান আমলে আফগানিস্তানে সমস্ত খেলাধুলো নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। স্টেডিয়ামগুলিকে শাস্তি দেওয়ার মঞ্চ হিসেবে ব্যবহার করা হতো। এবার পুরুষদের ক্রিকেটের অনুমতি দিলেও মেয়েদের ফুটবলকে তালিবান অনুমতি দেবে বলে মনে করছেন না কোনো বিশেষজ্ঞই।
রাজধানী কাবুল তালিবান নিয়ন্ত্রণে চলে যাওয়ার পর আতঙ্কে রয়েছেন আফগানিস্তানের ফুটবল ফেডারেশনের কর্তারা। গত কয়েক বছর ধরেই ফুটবলে আফগানিস্তান ভালো করছে। এশীয় ফুটবলে মধ্যম মানের শক্তি হিসেবে দেশটি ইতিমধ্যেই নিজেদের মেলে ধরেছে। দক্ষিণ এশীয় ফুটবলে শিরোপা জিতেছে, মোটামুটি সমীহ জাগানো দল হিসেবেই পরিচিত তারা। তালিবান আফগানিস্তানের ফুটবল নিয়ে কিছু না বললেও আফগান ফুটবল ফেডারেশনের কর্তারা শঙ্কিত ও আতঙ্কিত অন্য এক কারণে। তারা যে মেয়েদের ফুটবল চালু করেছেন। আর এটিই যে তালিবানের চোখে ‘বড় অপরাধ’।
২০০৭ সালে আফগানিস্তানে নারী ফুটবল দল গঠিত হয়। তবে দেশটির নারী ফুটবল সব সময়ই আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছে নেতিবাচক কারণে। ২০১৮ সালে আফগান নারী ফুটবল দল গঠনের ব্যাপারে অন্যতম মুখ্য ভূমিকা পালনকারী সাবেক ফুটবলার খালিদা পাপল আফগানিস্তান ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতির বিরুদ্ধে নারী ফুটবলারদের যৌন নিগ্রহের অভিযোগ তোলেন। তিনি নিজেই তদন্ত করে পাওয়া এ–সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য তুলে দিয়েছিলেন বিদেশি গণমাধ্যমের হাতে। এরপর বিভিন্ন হুমকির মুখে তিনি দেশত্যাগ করেন।
সেই খালিদা পাপল বলেন, ‘তালিবান শাসনের অধীনে নারীর কোনো অধিকারই নেই। তাদের স্কুলে, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার অধিকার হরণ করা হবে, এমনকি চিকিৎসার জন্য চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার অধিকারও তারা হারাবে। তাদের বাড়িতেই বন্দী হয়ে থাকতে হবে। আমরা যখন আফগানিস্তানে মেয়েদের ফুটবল চালু করি, সেটি আফগান সংস্কৃতিতেই ছিল নতুন এক ঘটনা। খেলায় যে নারীর অংশগ্রহণ থাকতে পারে, এ ব্যাপারটিই ছিল না আফগানিস্তানে।’
এদিকে আফগানিস্তান তালিবান নিয়ন্ত্রণে চলে আসার পর থেকেই তীব্র আতঙ্কে ভুগছেন দেশটির নারী ফুটবলাররা। খালিদা পাপল জানিয়েছেন, তিনি কয়েক দিন ধরেই আফগান নারী ফুটবলারদের ফোনকল আর খুদে বার্তা পাচ্ছেন। নিজেদের জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত তারা, আতঙ্কিত তাদের পরিবার।
পাপল জানিয়েছেন, এসব ফোন ও খুদে বার্তায় সবাইকে ‘নিরাপদ আশ্রয়’ খুঁজে নিতে বলা ছাড়া আর কিছুই করার থাকছে না। তিনি সবাইকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে দূরে থাকারও পরামর্শ দিচ্ছেন। এমনকি তাদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সব লেখা ও পোস্ট মুছে ফেলতেও বলেছেন, ‘পুরো ব্যাপারটাই আমার জন্য খুব দুঃখের। এতগুলো বছর ধরে আমরা খেলার মাঠে নারীর অংশগ্রহণ নিয়ে কাজ করেছি, তাদের উৎসাহিত করেছি খেলায় অংশ নিতে। অথচ, আজ আমিই তাদের পালিয়ে যেতে বলছি। লুকিয়ে থাকতে বলছি। এটা করছি, কারণ, আমি জানি, মেয়েগুলোর জীবন হুমকিতে।’
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৩৪৪
আপনার মতামত জানানঃ