প্রায় দুই দশক পর তালিবান ফের আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখল করে নেয়ার পর দলে দলে দেশ ছেড়ে পালাচ্ছে মানুষজন। এমন এক সময় দেশটিতে আবারও শরণার্থী সংকট শুরু হলো যখন ইতোমধ্যেই ২২ লাখ মানুষ বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নিয়েছে। আর চলমান সংঘাত এবং রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে দেশের ভেতরে গৃহহীন হয়ে পড়েছে ৩৫ লাখ মানুষ।
তালিবানরা গত ১৫ আগস্ট আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল দখল করে নেয়। এরপর থেকেই মূলত দেশ ছেড়ে পালানোর হিড়িক পড়ে যায়। প্রতিদিনই বিভিন্নভাবে দেশ ছাড়ছে আফগানরা। তবে এই মুহূর্তে কত মানুষ দেশ ছাড়ছে তা বলা যাচ্ছে না। প্রতিবেশী সব দেশের সঙ্গে সীমান্ত ক্রসিং এখন তালিবানদের নিয়ন্ত্রণে। আর কেউ আফগান ছেড়ে যাক সেটাও চায় না তারা। জানা গেছে, শুধুমাত্র ব্যবসায়ী বা যাদের ভ্রমণ করার বৈধ কাগজপত্র রয়েছে তারা সীমান্ত পার হতে পারছে।
কুড়ি বছর পর কট্টর ইসলামী দল তালিবান আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ায় এমন আরো নানা শঙ্কা নিয়েই দেশ ছাড়তে মরিয়া দেশটির হাজার নাগরিক। মানুষের ভিড়ে কাবুল বিমানবন্দরে এখন বিশৃঙ্খল। সেখানে প্রায়ই ঘটছে প্রাণহানি। তবে যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপীয় দেশগুলো আফগান শরণার্থীদের গ্রহণ করলেও বিশ্বের ধনী মুসলিম দেশগুলো এই কাজে এগিয়ে আসেনি। একমাত্র ইরান ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ মুসলিম দেশগুলো তাদের গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকছে। খবর নিউজ এইটিন
ইরানে ইতোমধ্যে ৩০ লাখের বেশি আফগান শরণার্থী বাস করছেন। তালিবান কাবুল দখল করার পর ইরান আফগান সীমান্তের তিনটি প্রদেশে জরুরি তাঁবু বসিয়েছে শরণার্থীদের জন্য। ৫৭টি মুসলিম দেশের সংগঠন অর্গানাইজেশন ফর ইসলামিক কোঅপারেশন (ওআইসি)-এর নীতি মেনে বড় সদস্য দেশ হলো ইরান।
ওআইসি’র আরেকটি বড় সদস্য দেশ পাকিস্তান আফগান শরণার্থীদের আশ্রয় দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। পাকিস্তানের মতো সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত তালিবানের প্রথম শাসনকে স্বীকৃতি দিয়েছিল। এখন ওআইসির নেতৃত্বে রয়েছে সৌদি আরব। কিন্তু আফগান শরণার্থীদের জন্য দরজা উন্মুক্ত করার বিষয়ে তেল সমৃদ্ধ দেশটি এখনও নীরব।
সংযুক্ত আরব আমিরাতও একই অবস্থান নিয়েছে। দেশটি শুধু ভ্রমণ করিডোর হিসেবে পাঁচ হাজার আফগানকে সাময়িক আশ্রয় দিচ্ছে এবং তাও যুক্তরাষ্ট্রের অনুরোধে। মাত্র ১০ দিন আমিরাতে থাকতে পারবেন তারা।
বাহরাইনও বলেছে, আফগান শরণার্থীরা দেশটিতে ট্রানজিট সুবিধা নিতে পারবেন। কিন্তু তাদের আশ্রয় দেওয়ার বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেনি দেশটির কর্তৃপক্ষ।
মুসলিম বিশ্ব ও ওআইসি প্রভাব বিস্তার করতে আগ্রহী তুরস্ক জানিয়েছে, তারা আফগান শরণার্থীদের আশ্রয় দিতে প্রস্তুত না। পুনরায় তুর্কি খিলাফত প্রতিষ্ঠা করতে চাওয়া প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোয়ানের কাছে আফগান শরণার্থীরা মুসলিম ভাই নয়, বরং এড়িয়ে যাওয়ার মতো বোঝা। এমনকি আফগান শরণার্থীদের ঢেউ থামাতে ইরান সীমান্তে দেয়াল তুলছে তার প্রশাসন। আফগানিস্তান থেকে যাতে অবাধে শরণার্থী প্রবেশ করতে না পারে তা নিশ্চিত করতে আকাশ থেকেও নজরদারির ব্যবস্থা করেছে তুরস্ক সরকার৷
মধ্য এশিয়ার তিনটি দেশ তুর্কমেনিস্তান, উজবেকিস্তান ও তাজিকিস্তান আফগান শরণার্থীদের আশ্রয় দিতে আগ্রহী না। তিনটি দেশেরই আফগানিস্তানের সঙ্গে সীমান্ত রয়েছে। জুলাই মাসে তাজিকিস্তান জানিয়েছিল, তারা ১ লাখ আফগান শরণার্থীকে আশ্রয় দেবে। কিন্তু একই সঙ্গে আফগান-তাজিক সীমান্তে সেনাদের সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছে।
আলবেনিয়া ও উগান্ডার মতো ওআইসি’র কয়েকটি সদস্য দেশ আফগান শরণার্থীদের সাময়িক আশ্রয় দিতে রাজি হয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের অনুরোধের পরই। আলবেনিয়া ৩০০ এবং উগান্ডা ২ হাজার আফগান শরণার্থীর দায়িত্ব নিয়েছে।
মুজাহিদিনদের প্রতিরোধের মুখে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের সেনারা আফগানিস্তান থেকে পিছু হটার পর ১৯৯৬ সালে দেশটিতে সরকার গঠন করে তালিবান। পরে ২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ভয়াবহ হামলা চালায় আল–কায়েদা। সংগঠনটির নেতা ওসামা বিন লাদেনকে আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগে ওই বছরই আফগানিস্তানে কথিত সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে নামে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা। এতে তালিবান সরকারের পতন ঘটে। কিন্তু দেশটিতে শান্তি ফেরেনি। এরপর দুই দশকের এক দীর্ঘ রক্তক্ষয়–সহিংসতা ও অস্থিতিশীলতার মধ্যে পড়ে যায় আফগানিস্তান। এখন যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তান থেকে পিছু হটার পর আবার ক্ষমতায় সেই তালিবান।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৭৫২
আপনার মতামত জানানঃ