আফগানিস্তান তালিবানের দখলে যাবার পর থেকেই কাবুল বিমানবন্দরে ভিড় জমেছে দেশ ছাড়ার তাগিদে। এতে যেমন অভিবাসীরা আছেন তেমনি আছেন আফগান নাগরিক। অতিরিক্ত ভিড় হওয়ায় সেখানে নানারকম বিশৃঙ্খলা, প্রাণহানি, আহত হওয়ার মত ঘটনা ঘটছেই।
তবে এবার আফগানিস্তানের কাবুল বিমানবন্দরে জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের (আইএস) হামলার আশঙ্কা করছে যুক্তরাষ্ট্র। আজ রোববার (২২ আগস্ট) বিবিসি অনলাইনের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। আইএসের আফগান শাখার সম্ভাব্য হামলার আশঙ্কায় যুক্তরাষ্ট্র তার নাগরিকদের সতর্ক করেছে। তাদের কাবুল বিমানবন্দর এড়াতে বলেছে।
গতকাল শনিবার (২১ আগস্ট) যুক্তরাষ্ট্র একটি নিরাপত্তা সতর্কতা জারি করে। এ সতর্কতায় কাবুল বিমানবন্দরের ফটকগুলোর বাইরে সম্ভাব্য নিরাপত্তা হুমকির কথা বলা হয়েছে। এ কারণে আফগানিস্তানে অবস্থানরত মার্কিন নাগরিকদের কাবুল বিমানবন্দর থেকে দূরে থাকতে বলেছে যুক্তরাষ্ট্র। সতর্কতায় বলা হয়, মার্কিন সরকারের প্রতিনিধি যাদের কাবুল বিমানবন্দরে আসতে বলবেন, শুধু তাদেরই সেখানে আসা উচিত, অন্যদের নয়।
মার্কিন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন যে, তারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন এবং বিমানবন্দরে যাওয়ার বিকল্প রাস্তার বিষয়টি যাচাই করছেন। আইএস এর হামলার সম্ভাব্য ঝুঁকির বিষয়ে এর চেয়ে বেশি তথ্য দেয়া হয়নি। আইএস’ও কাবুলে হামলা করার কোনোরকম ঘোষণা দেয়নি।
গতকাল শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের এই বিবৃতি এমন সময়ে এসেছে যখন হাজার হাজার মানুষ আফগানিস্তান ছেড়ে পালানোর চেষ্টা করছেন এবং বিমানবন্দরের বাইরে ব্যাপক বিশৃঙ্খলার ও মানুষের আহত হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে।
এর আগে থেকেই প্রতিদিন বিমানবন্দরে মানুষ ভিড় করছে কোনো একটি বিমানে ওঠার সুযোগ পাওয়ার আশায়। যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের জোটের সাথে যারা কাজ করেছে অথবা যারা মানবাধিকারের মত বিষয় নিয়ে কাজ করেছে, তারা মনে করেন দেশ ছাড়তে না পারলে তালিবানের রোষের শিকার হবেন তারা। তবে শনিবার বিমানবন্দরের প্রবেশপথের পরিস্থিতি আসলে কী ছিল, তা নিয়ে এখনও রয়েছে ধোঁয়াশা।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম স্কাই নিউজের প্রতিনিধি স্টুয়ার্ট রামসে জানান বিমানবন্দরে হাজার হাজার মানুষের জটলার সামনের সারিতে থাকা অনেক মানুষ ‘পিষ্ট হয়ে মারা গেছেন।’ তার বর্ণনা মতে, এটি ছিল ‘এখন পর্যন্ত নিকৃষ্টতম দিন’ এবং তাদের বিশ্বাস ঘটনাস্থলে অনেক মানুষ মারা গেছেন।
গতকাল মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের এক ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, কাবুল বিমানবন্দর থেকে মোট ১৭ হাজার লোককে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে প্রায় ২ হাজার ৫০০ জন মার্কিন নাগরিক রয়েছে। এদিকে, আফগানিস্তান থেকে প্রায় ১২ হাজার বিদেশি ও আফগানকে সরিয়ে আনা হয়েছে বলে জানিয়েছে ন্যাটো।
এক কর্মকর্তা জানান যেসব মার্কিন ও আফগান নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রের বাহিনী সরিয়ে নিতে চেয়েছিল, তাদের মধ্যে ‘স্বল্প সংখ্যক’ ব্যক্তি হয়রানির শিকার হয়েছেন। কয়েকটি ক্ষেত্রে বিমানবন্দরে আসার সময় তাদের মারধর করার ঘটনাও ঘটেছে। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র পরে বিবিসিকে জানায় যে তারা বিমানবন্দরের প্রবেশপথের বাইরে বড় ধরনের জটলা এড়িয়ে চলতে আনুষ্ঠানিকভাবে পরামর্শ দিয়েছে তারা।
জার্মানির সরকার একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে, যেখানে বলা হয়েছে যে বিমানবন্দর এখনও ‘অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এবং বিমানবন্দরে প্রবেশ করা অনেক সময়ই অসম্ভব।’ সুইজারল্যান্ডের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাদের বিবৃতিতে বলেছে নিরাপত্তা পরিস্থিতি ‘গত কয়েক ঘণ্টায় বিশেষভাবে অবনতি’ হয়েছে।
৩১শে অগাস্টের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বাহিনী প্রত্যাহার করে নেয়ার কথা রয়েছে। ৩১শে অগাস্টের পর ঠিক কী হতে যাচ্ছে, তা এখনও নিশ্চিত নয়।
ন্যাটোর মহাসচিব ইয়েন্স স্টলটেনবার্গ বলেছেন যে তাদের জোটের বেশ কয়েকটি দেশের পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হয়েছে ৩১শে অগাস্টের পরও যেন কাবুল বিমানবন্দর থেকে সেসব দেশের নাগরিকদের উড্ডয়নের অনুমতি দেয়া হয়। কারণ তারা আশঙ্কা করছেন, ৩১শে অগাস্টের মধ্যে তাদের দেশের সব নাগরিক এবং ঝুঁকিতে থাকা আফগান নাগরিকদের সবাইকে কাবুল বিমানবন্দর থেকে নিরাপদে সরিয়ে নেয়া সম্ভব হবে না।
এসডব্লিউ/ডব্লিউজেএ/১১০৬
আপনার মতামত জানানঃ