করোনার অন্য ভ্যারিয়েন্টগুলোকে ছাপিয়ে ডেল্টা পঙ্গু করে দিচ্ছে গোটা বিশ্বকে। দুই ডোজ টিকা নেয়ার পরেও ডেল্টার হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যাচ্ছে না এমন ঘটনা অহরহ। সবগুলো টিকা ৮০ শতাংশের উপরে সুরক্ষা দেবার দাবি জানালেও টিকা নেবার পরে ডেল্টায় সংক্রমিত হচ্ছে মানুষ। এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিচালক ড. ট্রেড্রস আধানম গেব্রেইয়েসুস বলেন, ভারতে প্রথম শনাক্ত করোনাভাইরাসের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট কমপক্ষে ৯৮টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে।
ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য কেরালায় করোনাভাইরাসের টিকার উভয় ডোজ সম্পূর্ণ করার পরও ৪০ হাজারের বেশি মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা একবার সংক্রমিত হওয়ার পর সুস্থ হয়ে উঠেছেন এবং টিকা নেওয়ার পর দ্বিতীয়বারের মতো করোনা সংক্রমিত হয়েছেন। দেশটির স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
দেশটির দক্ষিণাঞ্চলের এই প্রদেশে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে দৈনিক ২০ হাজারের বেশি মানুষের করোনা শনাক্ত হচ্ছে। গতকাল মঙ্গলবারও কেলারায় এই ভাইরাসে নতুন করে ১৩ হাজার ৪৯ জন আক্রান্ত এবং ১০৫ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। আজ বুধবার এই রাজ্যে করোনা সংক্রমিত হয়েছেন ২১ হাজার ১১৯ জন এবং মারা গেছেন ১৫২ জন।
কেরালায় টিকা নেওয়ার পর যে ৪০ হাজার মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন তাদের বেশিরভাগই রাজ্যের পাঠানামথিট্টা জেলার। এই জেলায় টিকার প্রথম ডোজ নেওয়ার পর করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ১৪ হাজার ৯৭৪ জন এবং দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার পর আক্রান্ত হয়েছেন ৫ হাজার ৪২ জন।
পুনঃসংক্রমণের ঘটনা বিরল হলেও অসম্ভব নয়। কেরালার কয়েকটি জেলায় এই ভাইরাসে পুনঃসংক্রমিত হওয়ার বেশ কিছু ঘটনাও ঘটেছে বলে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। তবে তারা বলেছেন, প্রথম সংক্রমণ থেকে মানুষকে রক্ষায় টিকা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এছাড়া যারা ইতোমধ্যে কোভিডে আক্রান্ত হয়েছেন তাদের জন্যও টিকা গুরুত্বপূর্ণ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট এ পর্যন্ত কালের সবচেয়ে শক্তিশালী করোনাভাইরাস। দুই ডোজ টিকা নেওয়া থাকলেও করোনার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের আক্রমণ হতে পারে শরীরে। খবর রয়টার্সের।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আদি করোনাভাইরাসের তুলনায় এর ডেল্টা ধরন আরও বেশি হারে দুই ডোজ টিকা নেওয়া মানুষদেরকে আক্রান্ত করতে সক্ষম- এমন প্রমাণ উত্তরোত্তরই মিলছে এবং এই মানুষেরা এই ভাইরাস ছড়িয়ে দিতে পারেন বলেও উদ্বেগ বাড়ছে। বিশ্বের ১০ শীর্ষ কোভিড বিশেষজ্ঞের সাক্ষাৎকারে উঠে এসেছে এই তথ্য।
১০ জন শীর্ষ কোভিড বিশেষজ্ঞ সাক্ষাৎকারে বলেছেন, করোনাভাইরাসের যে কোনো ধরনে গুরুতর অসুস্থতা এবং হাসপাতালে যাওয়া থেকে সুরক্ষার ক্ষেত্রে টিকা অনেকখানি কাজে দেয় এবং এখনও টিকা না নেওয়া মানুষেরা ভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছেন।
কিন্তু সম্প্রতি বিভিন্ন দেশের প্রকাশিত পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, টিকা পুরোপুরি নেওয়ার পরও ডেল্টা ধরনে আক্রান্ত হওয়া এবং হাসপাতালে যাওয়া মানুষের সংখ্যা নেহাৎ কম নয়। করোনাভাইরাসে যে কোনো দেশের চেয়ে সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ এবং মৃত্যু দেখা দেশ যুক্তরাষ্ট্রে নতুন করে ভাইরাস সংক্রমিতদের ৮৩ শতাংশই ডেল্টা আক্রান্ত।
পাবলিক হেলথ ইংল্যান্ডের সম্প্রতি প্রকাশ করা এক পরিসংখ্যানে জানা যায়,, যুক্তরাজ্যে ডেল্টা ধরনে আক্রান্ত মোট ৩ হাজার ৬৯২ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৫৮ দশমিক ৩ শতাংশ টিকা না নেওয়া মানুষ; আর ২২ দশমিক ৮ শতাংশ মানুষ দুই ডোজ টিকা নিয়েছেন।
সিঙ্গাপুরেও ছড়িয়েছে ডেল্টা ধরন। সেখানকার সরকারি কর্মকর্তারা বলেছেন, সেখানে এই ভাইরাসে আক্রান্তদের তিন-চতুর্থাংশই টিকা নেওয়া মানুষ। যদিও তাদের কেউই গুরুতর অসুস্থ হননি।
করোনাভাইরাসের দুই ডোজ টিকা নেয়ার পর আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাও দিন দিন বাড়ছে। দুই ডোজ টিকা নেয়ার পর রোগীরা ভাইরাসে কতোটা ভুগছেন। কি সমস্যা হচ্ছে এসব বিষয়ে এখনো কোনো গবেষণা তথ্য পাওয়া যায়নি। বিশেষজ্ঞরা এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে বিশদ গবেষণা পরিচালনার পরামর্শ দিয়েছেন।
এসডব্লিউ/এমএন/ডব্লিউজেএ/২০০১
আপনার মতামত জানানঃ