বিধি-নিষেধ শেষে আগামী ১১ আগস্ট থেকে প্রায় সবকিছুই খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ নিয়ে আজ রবিবার একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। তবে পর্যটন আর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা নিয়ে কোনো তথ্য প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়নি।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে রোববার বিকেলে এক প্রজ্ঞাপনে শাটডাউন তুলে নেয়ার সিদ্ধান্ত জানানো হয়। এতে বলা হয়, দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা, অর্থনীতির কর্মকাণ্ড সচল রাখা এবং সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় শর্তসাপেক্ষে ১১ আগস্ট থেকে অফিস আদালত, যানবাহন, শপিংমল, দোকানপাট খুলে দেয়া হবে।
পর্যটনকেন্দ্র, জনসমাগম ও সামাজিক অনুষ্ঠানাদি নিয়ে কিছুই উল্লেখ নেই প্রজ্ঞাপনে।
শাটডাউন তুলে নেয়া পরবর্তী মানতে হবে যেসব শর্ত:
০১. সকল সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্বশাসিত, বেসরকারি অফিস, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো স্বাস্থ্যবিধি মেনে খোলা থাকবে।
০২. আদালতের বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করবে বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্ট।
০৩. সড়ক, রেল ও নৌ-পথে আসন সংখ্যার সমপরিমাণ যাত্রী নিয়ে গণপরিবহন, যানবাহন চলাচল করতে পারবে। সড়ক পথে গণপরিবহন চলাচলের ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসন (সিটি কর্পোরেশন এলাকায় বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা পর্যায়ে জেলা প্রশাসক) নিজ নিজ অধিক্ষেত্রের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সংশ্লিষ্ট দপ্তর, সংস্থা, মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে আলোচনা করে প্রতিদিন মোট পরিবহন সংখ্যার অর্ধেক চালু করতে পারবে।
০৪. স্বাস্থ্যবিধি মেনে শপিংমল, মার্কেট, দোকানপাট সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা রাখা যাবে।
০৫. সকল প্রকার শিল্প-কলকারখানা চালু থাকবে।
০৬. খাবারের দোকান, হোটেল-রেস্তোরাঁয় অর্ধেক খালি রেখে সকাল ৮টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত খোলা রাখা যাবে।
০৭. সকল ক্ষেত্রে মাস্ক পরা নিশ্চিত করতে হবে এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তর প্রণীত স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে।
০৮. গণপরিবহন, বিভিন্ন দপ্তর, মার্কেট ও বাজারসহ যেকোনো প্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে অবহেলা দেখা গেলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দায়িত্ববহন করবে এবং তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবে।
সোমবার সকাল থেকে ট্রেনের টিকিট বিক্রি শুরু
রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন রেলস্টেশনে ট্রেনের টিকিট কাউন্টার সোমবার (৯ আগস্ট) সকাল ৮টা থেকে খুলছে। এ দিন যাত্রীবাহী ট্রেনের টিকিট বিক্রি শুরু হবে।
আগামী বুধবার (১১ আগস্ট) থেকে বাংলাদেশ রেলওয়ে ৩৮ জোড়া আন্তঃনগর ট্রেন এবং ২০ জোড়া মেইল এক্সপ্রেস ও কমিউটার ট্রেন পরিচালনা করবে। কিন্তু একই দিন ৭০৫ একতা এক্সপ্রেস, ৭২৬ সুন্দরবন এক্সপ্রেস, ৭৬৫ নীলসাগর এক্সপ্রেস, ৭৭১ রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেন ঢাকা থেকে ও ৭৮৩ টুঙ্গীপাড়া এক্সপ্রেস ট্রেনটি গোবরা থেকে ছাড়বে না।
রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) শাহাদাত আলী সরদার সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, সোমবার সকাল থেকে কাউন্টারে ট্রেনের টিকিট বিক্রি শুরু হবে।
জানা গেছে, আন্তঃনগর ট্রেনের মোট আসনের অর্ধেক টিকিট অনলাইন ও মোবাইল অ্যাপে বিক্রি করা হবে। অবশিষ্ট অর্ধেক টিকিট কাউন্টার থেকে সোমবার সকাল ৮টা থেকে বিক্রি হবে।
স্বাস্থ্যবিধি পালনে অবহেলা পরিলক্ষিত হলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানানো হয়।
আগের ভাড়ায় ফিরছে গণপরিবহন
চলমান করোনা পরিস্থিতিতে আগামী বুধবার (১১ আগস্ট) থেকে আসন সংখ্যার সমপরিমাণ যাত্রী নিয়ে বাস, ট্রেন ও লঞ্চ চলাচল করবে। এতে বাসে বর্ধিত ভাড়াথাকছে না।
রোববার (৮ আগস্ট) বিকেলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব রেজাউল ইসলাম স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে গণপরিবহন চলাচলের কথা জানানো হয়।
বাড়তি ভাড়া কমানো নিয়ে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) বলছে, ওই প্রজ্ঞাপনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে যাত্রী পরিবহনের কথা বলা হয়েছে। আপাতত বর্ধিত ভাড়াই বহাল থাকবে। ভাড়া কমাতে হলে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় নতুন করে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেবে।
রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আগামী বুধবার কমলাপুর থেকে আন্তঃনগর ট্রেন ৩৮ জোড়া এবং ২০ জোড়া মেইল বা কমিউটার ট্রেন চলাচল করবে। আগামীকাল সোমবার (৯ আগস্ট) সকাল ৮টা থেকে টিকিট বিক্রি শুরু হবে। আগের দামেই অনলাইনে এবং কাউন্টার থেকে টিকিট সংগ্রহ করতে পারবেন যাত্রীরা।
রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন এ বিষয়ে বলেন, আমরা কখনই রেলের ভাড়া বাড়াইনি। অর্ধেক যাত্রী যখন পরিবহন করেছি তখনও আগের ভাড়ায় যাত্রীরা চলাচল করেছেন। পুরোনো ভাড়ায় রেল চলবে।
তিনি আরও বলেন, সব আসনে যাত্রী পরিবহন করলেও মাস্ক ছাড়া কেউ ট্রেনে উঠতে পারবে না। যদি কেউ এ আইন লঙ্ঘন করে, তাকে রেল আইনে জরিমানা করা হবে।
অন্যদিকে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, এখন আর বর্ধিত ভাড়া থাকবে না। আগের ভাড়ায় পরিবহন চলাচল করবে।
তিনি বলেন, সরকার মোট পরিবহনের অর্ধেক চলাচল করার কথা বলছে। কিন্তু কে গুনবে কোন পরিবহনের কয়টা বাস চলছে? এ বিষয়টা সংশ্লিষ্টদের ভাবা দরকার।
বন্ধই থাকছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
চলমান শাটডাউন তুলে নিয়ে অফিস-আদালত, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও গণপরিবহন চালু করা, এমনকি প্রতি আসনে যাত্রী তোলার অনুমতি দেয়া হলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি।
চলমান শাটডাউন তুলে নিয়ে অফিস-আদালত, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও গণপরিবহন চালু করা, এমনকি প্রতি আসনে যাত্রী তোলার অনুমতি দেয়া হলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি।
অবশ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি সবশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত বাড়ানো আছে।
২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে প্রথমবারের মতো করোনা শনাক্ত হয়। উদ্বেগ থাকলেও প্রথম কয়েক মাসে ভাইরাসটি সেভাবে ছড়ায়নি। তবে ১৭ মার্চ বন্ধ করা হয় দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
প্রতিবারই ধাপে ধাপে বাড়ানো হয়েছে ছুটির মেয়াদ। আর গত মে মাসে স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় খোলার তারিখও জানানো হয়। তবে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে বেঙ্গল ভ্যারিয়েন্টের কারণে শাটডাউন দেয়ায় আর খোলা হয়নি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
সরকার এরই মধ্যে জানিয়েছে, টিকা না দিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হবে না। কিন্তু এখন পর্যন্ত টিকার যে বয়সসীমা নির্ধারণ করা আছে, তাতে স্কুল তো নয়ই, কলেজের শিক্ষার্থীদের টিকা পাওয়ার কথা না। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও এই বয়সসীমায় পড়েন না।
তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের টিকা দিতে সর্বনিম্ন ২৫ বছরের বয়সসীমার বাইরে আলাদা তালিকা করা হচ্ছে। সেই টিকাদান শুরু হয়েছে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় গত বছর এইচএসসি পরীক্ষা নেয়া হয়নি। হয়নি অষ্টম শ্রেণির সমাপনী জেএসসি আর পঞ্চম শ্রেণি সমাপনী পিইসি পরীক্ষা। কোনো স্কুলে নেয়া হয়নি বার্ষিক পরীক্ষাও। সব শিক্ষার্থীকেই অটো পাস করিয়ে দেয়া হয়েছে।
এখন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা নেয়া যায়নি। ফলে একটি শিক্ষাবর্ষ এরই মধ্যে নষ্ট হয়ে গেছে। আর বিশেষ করে স্নাতক শেষ বর্ষ ও মাস্টার্সের শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিতে না পারায় কর্মজীবনে প্রবেশে সময় লাগছে বেশি। এ কারণে বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মধ্যে শিক্ষাঙ্গন চালুর দাবি উঠেছে। তবে সরকার ঝুঁকি নিতে চাইছে না।
তবে চলতি বছর এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা হয়েছে। এরই মধ্যে প্রশ্নপত্র ছাপা হয়ে গেছে।
গত ২৯ জুলাই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘সারা দেশে করোনা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। সেই সঙ্গে কঠোর লকডাউন কার্যকর থাকায় শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মচারী ও অভিভাবকদের সুরক্ষা ও সার্বিক নিরাপত্তা বিবেচনা করে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় পরামর্শক কমিটির সঙ্গে আলোচনা করে দেশের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং এবতেদায়ি, কওমি মাদ্রাসা ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছুটি আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।’
দেশে করোনায় আরও ২৪১ জনের মৃত্যু
দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ২৪১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে শুধু ঢাকা বিভাগেই শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে্। নতুন আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছেন ১০ হাজার ২৯৯ জন। রোববার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানা যায়।
এ নিয়ে করোনায় দেশে মোট মৃত্যু দাঁড়িয়েছে ২২ হাজার ৬৫২ জনে। মোট শনাক্ত বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩ লাখ ৫৩ হাজার ৬৯৫ জনে।
এর আগে শনিবার ২৪১, শুক্রবার ২৪৮, বৃহস্পতিবার ২৬৪ (সর্বোচ্চ), বুধবার ২৪১, মঙ্গলবার ২৩৫ ও সোমবার ২৪৬ জনের মৃত্যু হয়।
গত ৭ জুলাই প্রথমবারের মতো দেশে করোনায় মৃত্যু সংখ্যা ২০০ ছাড়ায়। এ দিন মৃত্যু হয় ২০১ জনের। এরপর থেকে প্রায় প্রতিদিনই দুই শতাধিক মানুষের মৃত্যু হচ্ছে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/২২২০
আপনার মতামত জানানঃ