ঘুষ লেনদেনের ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর অন্যতম বাংলাদেশ। দেশটি এক্ষেত্রে এগিয়ে আছে শুধু যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ আফগানিস্তানের চেয়ে। ট্রেস ইন্টারন্যাশনাল প্রকাশিত এ বছরের ঘুষ লেনদেনের ঝুঁকিতে বাংলাদেশ অবশ্য গত বছরের তুলনায় খানিকটা এগিয়েছে। কিন্তু কিছুতেই ঘুষ লেনদেনে উচ্চমাত্রার ঝুঁকিপূর্ণ দেশের তালিকা থেকে বাংলাদেশ বের হতে পারছে না। এখনো শীর্ষ ৩০টি ঘুষের ঝুঁকিতে থাকা দেশের মধ্যে রয়েছে উদীয়মান অর্থনীতির এ দেশ।
ট্রেস ইন্টারন্যাশনাল আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত একটি ঘুষবিরোধী সংস্থা। তারা ২০১৪ সাল থেকে ঘুষ লেনদেনের বৈশ্বিক ঝুঁকির চিত্র প্রকাশ করছে। এ বছরের তালিকায় বিশ্বের ১৯৪টি দেশের মধ্যে ঘুষের ঝুঁকির বিবেচনায় বাংলাদেশের অবস্থান হয়েছে ১৬৬তম। বাংলাদেশের ঝুঁকির স্কোর ১০০ এর মধ্যে ৬৬, যেখানে সবচেয়ে কম ঝুঁকির দেশ ডেনমার্কের স্কোর মাত্র ১ এবং সবচেয়ে বেশি ৯৮ স্কোর রয়েছে সবচেয়ে ঝুঁকিগ্রস্ত দেশ উত্তর কোরিয়ার। গত বছর ২০০ দেশের মধ্যে বাংলাদেশ হয়েছিল ১৭৮। সে হিসেবে ৬ ধাপ উন্নতি ঘটেছে।
ট্রেস ইন্টারন্যাশনাল ১৯ নভেম্বর বৃহস্পতিবার ‘ব্রাইবারি রিস্ক ম্যাট্রিক্স-২০২০’ নামে তাদের এ বছরের স্কোর ও দেশগুলোর অবস্থান প্রকাশ করেছে। বিশ্বব্যাংকের ডুয়িং বিজনেস রিপোর্ট, এন্টারপ্রাইজ সার্ভে, ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের গ্লোবাল কম্পিটিটিভনেস রিপোর্ট, ওয়ার্ল্ড জাস্টিজ প্রজেক্টের আইনের শাসন সূচকসহ আন্তর্জাতিক কয়েকটি সংস্থার জরিপভিত্তিক উপাত্তের ভিত্তিতে তারা এ তালিকা করেছে। ট্রেস কানাডায় নিবন্ধিত সংস্থা, যার কার্যালয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে।
মোটাদাগে চারটি মানদণ্ডের ভিত্তিতে ঘুষের ঝুঁকি সংক্রান্ত স্কোর নির্ণয় করা হয়। এগুলো হলো, সরকারের সঙ্গে ব্যবসায়িক আলোচনা, ঘুষবিরোধী পদক্ষেপ এবং তার কার্যকারিতা, সরকার ও সরকারি চাকরিজীবীদের মধ্যে স্বচ্ছতা এবং সুশীল সমাজের তদারকি করার ক্ষমতা। নিয়ম কানুনের বাধা, সমাজে ঘুষবিরোধী অবস্থান, ঘুষের প্রত্যাশা, সরকারি বাজেটের স্বচ্ছতা, নিয়ম কানুনের সঙ্গে সরকারি কর্মকর্তাদের স্বার্থ, গণমাধ্যমের গুণগত মান ও স্বাধীনতাসহ বেশ কিছু বিষয় এসব মানদণ্ড পরিমাপের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়।
গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর এ প্রসঙ্গে সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, বাংলাদেশে ব্যবসায়ীদের নানা ক্ষেত্রে কাজ আদায়ের জন্য ঘুষ দিতে হয়। কিছু নিয়ম কানুন এত জটিল যে, ফাঁকফোকর বের করে ব্যবসায়ীদের ঘুষ দিতে বাধ্য করা হয়। ভূমি নিবন্ধন, গাড়ি নিবন্ধনের মতো কিছু ক্ষেত্র আছে, যেখানে সরকারি ফির অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা রীতিমতো রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। যেসব ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের ভুল থাকে না, সেখানে একটু কম ঘুষ নেওয়া হয়। আর অন্যায় থাকলে অনেক বড় অঙ্কের ঘুষের মাধ্যমে সমাধা করতে হয়। আহসান মনসুর মনে করেন, সরকারি সেবার ফি গ্রহণ স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থায় চলে এলে ঘুষ নেওয়ার প্রবণতা কমে আসবে।
ট্রেসের তালিকা অনুযায়ী, এবার দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে এ তালিকায় সবচেয়ে ভালো অবস্থান ভুটানের, ৪৮তম। ভারতের অবস্থান ৭৭তম। দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের চেয়ে পিছিয়ে আছে আফগানিস্তান। কম ঝুঁকির তালিকায় ডেনমার্কের পর রয়েছে নরওয়ে, যার স্কোর মাত্র ৫। তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে যথাক্রমে ফিনল্যান্ড, সুইডেন এবং নিউজিল্যান্ড। উচ্চ ঝুঁকির দিক থেকে উত্তর কোরিয়ার পরে রয়েছে তুর্কমেনিস্তান, দক্ষিণ সুদান, ভেনেজুয়েলা, ইরিত্রিয়া, ইয়েমেন, সোমালিয়া প্রভৃতি দেশ। ট্রেসের এই স্কোর কোনো দেশে ব্যবসা করতে হলে ঘুষ দেওয়ার প্রয়োজন কতটুকু সে সম্পর্কে একটি ধারণা দেয়।
এসডব্লিউ/মিই/১৪২০
আপনার মতামত জানানঃ