সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে দ্বন্দ্ব নতুন মাত্রা পেয়েছে। এর মধ্যে আগুন উস্কে দিয়ে গত ২৭ জুলাই ইসরায়েলের হয়ে কাজ করা একটি গুপ্তচর দলের সদস্যদের গ্রেপ্তার করার কথা জানায় ইরান। এরপর থেকেই ওমান উপসাগরকে কেন্দ্র পানি ঘোলা হতে শুরু করে। এর মধ্যেই ইসরায়েলের মালিকানাধীন জাহাজে হামলার ঘটনা ঘটল। এরপর ছিনতাই হওয়া ট্যাংকার ইরানের দিকে নিয়ে যাচ্ছে দুর্বৃত্তরা। যথারীতি ইরানের দিকে আঙুল তুলছে পশ্চিমারাও। আফগানিস্তান ও ইরাক থেকে সৈন্য প্রত্যাহারের পর ইরানের দিকে আটঘাট বেঁধে যুক্তরাষ্ট্র যে এগোবে, তা নিয়ে নিশ্চয়তা না থাকলেও, সন্দেহ নেই।
ছিনতাই হওয়া ট্যাঙ্কার ইরানের পথে
ওমান উপসাগরে ছিনতাই হয়েছে পানামার পতাকাবাহী একটি ট্যাংকার। রহস্যজনকভাবে ছিনতাইয়ের পর সেটিকে ইরানের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। নৌযানের অবস্থানসংক্রান্ত তথ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান লয়েডস লিস্ট মেরিটাইম ইন্টেলিজেন্স এ তথ্য জানিয়েছে।
সূত্র মতে, ছিনতাই হওয়া ট্যাংকারটির নাম এমভি অ্যাসফাল্ট প্রিন্সেস। এটিতে বিটুমিন বহন করা হয়। এ মুহূর্তে ট্যাংকারটি হরমুজ প্রণালির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে লয়েডস লিস্ট মেরিটাইম ইন্টেলিজেন্স।
ট্যাংকারটি কারা ছিনতাই করেছে, তা এখনো স্পষ্ট না। এর পেছনে ইরানের হাত থাকতে পারে বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকেরা। তবে এ অভিযোগ সরাসরি উড়িয়ে দিয়েছে ইরান। এটিকে তেহরানের বিরুদ্ধে ‘শত্রুতামূলক পদক্ষেপ’ বলে দাবি করেছে দেশটির রেভল্যুশনারি গার্ড।
প্রসঙ্গত, হরমুজ প্রণালি পারস্য উপসাগরকে ওমান উপসাগর ও আরব সাগরের সঙ্গে সংযুক্ত করেছে। নৌপথে পাঁচ ভাগের এক ভাগ জ্বালানি তেলই এ প্রণালি দিয়ে আনা-নেওয়া করা হয়।
এমভি অ্যাসফাল্ট প্রিন্সেস ছিনতাইয়ের বিষয়ে বিবিসির নিরাপত্তাবিষয়ক প্রতিবেদক ফ্রাঙ্ক গার্ডনার বলেন, ট্যাংকারটির মালিক দুবাইভিত্তিক একটি কোম্পানি। দুই বছর আগে এ প্রতিষ্ঠানের একটি ট্যাংকার ছিনতাই করেছিল ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ড।
ফ্রাঙ্ক গার্ডনার আরও বলেন, এমভি অ্যাসফাল্ট প্রিন্সেস হরমুজ প্রণালিতে প্রবেশের একটু আগে সেটিতে নয় সশস্ত্র ব্যক্তি ওঠেন। তারাই এটি ছিনতাই করেন।
এদিকে ট্যাংকার ছিনতাইয়ের বিষয়টি জরুরি ভিত্তিতে তদন্ত করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র দপ্তরের এক মুখপাত্র। ঘটনাটিকে ‘খুবই বিরক্তিকর’ বলে উল্লেখ করেছে হোয়াইট হাউস।
ট্যাংকারে হামলা উত্তেজনা ছড়াচ্ছে
এর আগে গত বৃহস্পতিবার আরব সাগরের ওমান উপকূলে এক ইসরায়েলি ধনকুবেরের একটি তেলের ট্যাংকারে হামলায় দুই নাবিকের মৃত্যু হয়েছে। নিহত নাবিকদের মধ্যে একজন যুক্তরাজ্যের ও অপরজন রোমানিয়ার নাগরিক।
এই হামলার জন্যও ইরানকে দায়ী করে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইসরায়েল। এ পরিস্থিতিতে নতুন করে ঘটল ট্যাংকার ছিনতাইয়ের ঘটনা।
তবে ইসরায়েলি ধনকুবের ইয়াল অফারের জোডিয়াক গ্রুপের মালিকানাধীন লন্ডনভিত্তিক জোডিয়াক মেরিটাইম এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, লাইবেরিয়ার পতাকাবাহী জাহাজটি এক জাপানির মালিকানাধীন। প্রাথমিকভাবে ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জাহাজটির মালিকানা নিয়ে একটি ভুল বিবৃতি দিয়েছিল।
পাশাপাশি জোডিয়াক মেরিটাইম এ ঘটনাকে ‘জলদস্যুতা’ বললেও বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেয়নি তারা। এর কিছুক্ষণ পরেই তারা হামলায় দুই নাবিকের মৃত্যুর খবর জানায়। তবে এ ঘটনায় আর কেউ হতাহত হয়েছে কি না, সে বিষয়ে কিছু জানায়নি প্রতিষ্ঠানটি। তবে পশ্চিমারা এই ঘটনার জন্য ইরানকেই দুষছেন শুরু থেকে।
যদিও ওমান উপকূলে ইসরায়েল পরিচালিত তেলের জাহাজে হামলার ঘটনার নিজেদের সংশ্লিষ্টতা নেই বলে জানিয়েছে ইরান। গত রোববার ইরান এ দাবি করে।
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সায়িদ খতিবজাদেহ সাপ্তাহিক এক সংবাদ সম্মলনে বলেছেন, ইসরায়েল নিরাপত্তাহীনতা, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে, হামলার ঘটনায় ইরানকে অভিযুক্ত করায় তেহরান তীব্র নিন্দা জানায়। এ ধরনের অভিযোগকে ভিত্তিহীন আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, এর মাধ্যমে ইসরায়েল মূল ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছে।
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/১৪২২
আপনার মতামত জানানঃ