নিজেদের ভূমিতেই এবার ভাড়া দিয়ে নিরাপদে থাকতে হবে ফিলিস্তিনিদের। আজ সোমবার (২ আগস্ট) শেখ জাররাহ থেকে ৬ ফিলিস্তিনি পরিবারকে উচ্ছেদের এক আপিল শুনানিতে ঘোষিত রায়ে এই প্রস্তাব দেন ইসরায়েলের আদালত।
জেরুজালেমের সাম্প্রতিক উত্তেজনার অন্যতম কারণ আল-আকসা মসজিদের সন্নিকটে অবস্থিত আবাসিক এই এলাকা শেখ জাররাহ থেকে ৬টি ফিলিস্তিনি পরিবারকে উচ্ছেদের অপচেষ্টা।
সূত্র মতে, অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড জেরুজালেমের শেখ জাররাহ মহল্লায় থাকা ফিলিস্তিনি বাসিন্দাদের ভাড়ার শর্তে ‘সুরক্ষিত বাসিন্দা’ হিসেবে থাকার প্রস্তাব দিয়েছেন ইসরায়েলের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্ট।
আদালতের রায়ে বলা হয়েছে, শেখ জাররাহে থাকা ফিলিস্তিনি বাসিন্দাদের ‘সুরক্ষিত বাসিন্দার’ স্বীকৃতি দেবে ইসরায়েল। তাদেরকে ওই মহল্লা থেকে কখনোই উচ্ছেদ করা হবে না। তবে এর জন্য তাদেরকে ‘ভাড়াবাবদ সামান্য অর্থ’ ইসরায়েলি বসতিস্থাপনকারী সংস্থা নাহালাত শিমনকে দিতে হবে।
তবে ফিলিস্তিনিরা এই প্রস্তাব আগেই প্রত্যাখান করে রেখেছেন। তারা শেখ জাররাহ মহল্লায় তাদের বসতবাড়ির মালিকানার দাবি জানিয়ে আপিল করেছিলেন।
এর আগে গত এপ্রিলে জেরুসালেমের ডিস্ট্রিক্ট কোর্ট (ইসরায়েল পরিচালিত) শেখ জাররাহ মহল্লা থেকে ৬ ফিলিস্তিনি পরিবারকে উচ্ছেদের আদেশ দেয়। ভুক্তভোগী পরিবারগুলো রায়ের বিপক্ষে ইসরায়েলি সুপ্রিম কোর্টে আপিল করে।
গত ১০ মে আপিল আবেদনের শুনানি হওয়ার কথা থাকলেও ওই সময়ে তৈরি পরিস্থিতিতে তা স্থগিত করা হয়। ওই সময় শেখ জাররাহ মহল্লা থেকে ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদের প্রতিবাদে পশ্চিম তীর, গাজাসহ ইসরায়েলের অভ্যন্তরের ফিলিস্তিনিরা বিক্ষোভ শুরু করেন।
জেরুসালেমের মসজিদুল আকসাসহ বিভিন্ন স্থানে অনুষ্ঠিত ফিলিস্তিনিদের এই বিক্ষোভে ইসরায়েলি বাহিনী হামলা চালায়। মসজিদুল আকসার ভেতরে ইসরায়েলি হামলার জেরে গাজা নিয়ন্ত্রণকারী স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর সাথে সংঘর্ষে জড়ায়।
অতঃপর ১০ মে থেকে টানা ১১ দিনের সংঘর্ষের পর ২১ মে থেকে দুই পক্ষের মধ্যে মিসরের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠিত হয়।
এই বিবাদের সূত্রপাত গত ৬ মে। ওই দিন শেখ জাররাহতে ছয়টি ফিলিস্তিনি পরিবারকে উচ্ছেদের বিষয়ে ইসরায়েলের সুপ্রিমকোর্টের প্রত্যাশিত সিদ্ধান্তের কারণে ফিলিস্তিনিরা পূর্ব জেরুসালেমে বিক্ষোভ শুরু করেছিলো।
প্রসঙ্গত, আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে, ইসরায়েলের সাথে সংযুক্ত এই এলাকাটি ফিলিস্তিনি অঞ্চলগুলোর একটি অংশ যা বর্তমানে ইসরায়েলের দখলে রয়েছে।
১৯৪৮ সালে ফিলিস্তিন দখল করে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়। লাখ লাখ ফিলিস্তিনি বিতাড়িত ও বাস্তুচ্যুত হন। ১৯৪৮ হাইফা ও ইয়াফা থেকে বাস্তুচ্যুত হওয়ার আট বছর পর ১৯৫৬ সালে ২৮ ফিলিস্তিনি পরিবার আশ্রয় নেয় পূর্ব জেরুজালেমের শেখ জাররাহ অঞ্চলের কারম আল-জাউনি এলাকায়।
তখন পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেম জর্ডানের নিয়ন্ত্রণে ছিল। এই পরিবারগুলোর জন্য গৃহনির্মাণের লক্ষ্যে জর্ডান সরকার জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থার সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়। তখন থেকেই পরিবারগুলো শেখ জাররাহ-এ বসবাস করে আসছে।
১৯৬৭ সালে ছয় দিনের আরব-ইসরায়েলের যুদ্ধে পুরো জেরুসালেমের নিয়ন্ত্রণ নেয় ইসরায়েল। ১৯৭২ সালে ইসরায়েলি বসতিস্থাপনকারী কিছু সংগঠন শেখ জাররাহে জমির মালিকানা দাবি করে ইসরায়েলি আদালতে মামলা করে।
সম্প্রতি জাররাহ-এর ২৮টি পরিবারকে গৃহত্যাগের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। এ নিয়ে দীর্ঘ আইনি লড়াই হয়েছে। ফিলিস্তিনিরা জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা ও জর্ডান সরকারের চুক্তিও উত্থাপন করেছেন। ইসরায়েলি পার্লামেন্ট জর্ডান সরকারের চুক্তিগুলো মেনে চলবে মর্মে যে রেজুলেশন নিয়েছিল তাও উত্থাপন করা হয়েছে।
কিন্তু ইসরায়েলি আদালতগুলো ইহুদিবাদের এজেন্ডা বাস্তবায়নের হাতিয়ারমাত্র। আদালত বরাবরের মতো অবৈধ বসতিস্থাপনকারীদের পক্ষে আদেশ দিয়েছে।
২০০২ সালে প্রথম ৪৩ ফিলিস্তিনি বাসিন্দাকে শেখ জাররাহ থেকে উচ্ছেদ করা হয়। পরে ২০০৮ ও ২০১৭ সালে আরো কিছু পরিবারকে এই মহল্লা থেকে উচ্ছেদের আদেশ দেন ইসরায়েলি আদালত। আর এবার আদালত রায়ে নিজ ভূমিতে ভাড়ার বিনিময়ে ফিলিস্তিনিরা থাকার অনুমতি পেল।
এসডব্লিউ/এমএন/২৩১৫
আপনার মতামত জানানঃ