দীর্ঘ ২০ বছর পর যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহার করে নেওয়ার ঘোষণা দিলে গভীর সংকটে পড়ে আফগান সরকার। এমন পরিস্থিতিতে একের পর এক শহর দখলে নিচ্ছে তালিবান, বাড়ছে সহিংসতা।
যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছে দেশটির সরকারি বাহিনী ও বিদ্রোহী তালিবান গোষ্ঠীর যোদ্ধারা। কিছু এলাকা এখন তালিবানের দখলে, কিছু আফগান বাহিনীর; আর কিছু এলাকার নিয়ন্ত্রণ পেতে চলছে দীর্ঘ লড়াই।
এর মধ্যে স্বভাবতই দেশটির কোথাও উড়ছে আফগানিস্তানের পতাকা, আবার কোথাও তালিবানের পতাকা। তবে প্রতিবেশি দেশ পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদের একটি পার্কে একসঙ্গে উড়ানো হয়েছে তালিবান ও আফগানিস্তানের পতাকা।
পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম দ্য ডন সোমবার (২ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে। দ্য ডনের ওই প্রতিবেদনে থেকে জানা যায়, রোববার (১ আগস্ট) সন্ধ্যায় পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদের লেক ভিউ পার্কে এক দল লোক আফগানিস্তানের জাতীয় পতাকা ও তালিবানের পতাকা উড়াচ্ছিল।
বেশ কয়েকটি সূত্রের বরাত দিয়ে ডন জানায়, রোববার সন্ধ্যায় ২০ থেকে ২৫ জন তরুণ ও যুবকের একটি দল ইসলামাবাদের লেক ভিউ পার্কে আফগানিস্তানের জাতীয় পতাকা ও তালিবানের পতাকা উড়াতে থাকে। এই অবস্থায় পতাকা ধরে রেখে তাদের ছবিও তুলতে দেখা যায়।
বিষয়টি দেশটির পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কানে পৌঁছানোর পরই সতর্ক হয়ে যায় নিরাপত্তা সংস্থাগুলো। খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে যায় এবং তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। তবে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা দায়ের করা হয়নি।
প্রসঙ্গত, লেক ভিউ পার্কটি ইসলামাবাদের মালপুর গ্রামের কাছে মুরি রোডের পাশে অবস্থিত। এছাড়া এই পার্কটি ইসলামাবাদে অবস্থিত পাকিস্তানি পার্লামেন্ট ভবনসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ভবন থেকে খুব বেশি দূরে অবস্থিত নয়। এই এলাকাটির প্রশাসনিক দায়িত্বে রয়েছে ইসলামাবাদের রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (ক্যাপিটাল ডেভেলপমেন্ট অথরিটি)।
এই ঘটনার তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তা ঘটনার সত্যতা ও ওই পার্কে অভিযুক্তদের উপস্থিতির কথা নিশ্চিত করলেও এর বেশি আর কোনো তথ্য দিতে রাজি হননি।
তবে অন্য এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, অন্য কোনো দেশের পতাকা ওড়ানো অপরাধের নয়। পুলিশ এই বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
এর আগে আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি উজবেকিস্তানের রাজধানী তাসখন্দে এক সম্মেলনে বলেছিলেন, গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর ধারণা অনুযায়ী, তালেবানের হয়ে যুদ্ধ করার জন্য গত মাসেই পাকিস্তান এবং অন্যান্য জায়গা থেকে আফগানিস্তানে ১০ হাজারের বেশি মানুষ এসেছেন।
পাশাপাশি, ডয়চে ভেলের প্রতিবেদন অনুযায়ী, পাকিস্তানের বিভিন্ন অঞ্চলে ইসলামিক আলেমরাও তালিবানকে সমর্থন দিচ্ছেন এবং অর্থ সহযোগিতার আহ্বানও জানাচ্ছেন৷ কোয়েটা এবং বালোচিস্তান প্রদেশের পিশিন শহরের বাসিন্দাদের অনেকেই জয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন যে, তাদের এলাকায় তালিবানপন্থিদের কার্যক্রম জোরদার হয়েছে৷
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক বাসিন্দা ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমাদের এলাকায় স্থানীয়দের অনেকে তালিবানকে সমর্থন করেন৷ কিন্তু রাষ্ট্রের সহায়তা ছাড়া মিছিল-সমাবেশ আয়োজন করা সম্ভব না৷ শুরুর দিকে বিভিন্ন মসজিদে আলেমরা আফগান তালিবানের জন্য অর্থ সহায়তা চাইতেন৷ এখন তারা বাসায় বাসায় গিয়ে ‘আফগান জিহাদের’ জন্য অর্থ চাইছেন৷’’
পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমের আদিবাসী এলাকায় বিরোধী দলের আইনপ্রণেতা মোহসিন দাওয়ার বলেন, ‘‘কোয়েটাসহ পাকিস্তানের বিভিন্ন অঞ্চলে তালিবান মুক্তভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে৷ রাষ্ট্রের সমর্থন ছাড়া এটা সম্ভব নয়৷’’
যদিও তালিবানের প্রতি পাকিস্তানের সমর্থন ও সাহায্যের সমস্ত অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে নাকচ করে দিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। পিবিএস নিউজ আওয়ারকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী তালিবানকে সহযোগিতা করার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেন।
পাশাপাশি ইমরান খান বলেন, ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার’ হবে আফগানিস্তানের জন্য সেরা রাজনৈতিক সমাধান। এটা ছাড়া আফগানিস্তানের জন্য আর কোনো সমাধান নেই। কারণ সামরিক উপায়ে দেশটিতে শান্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে।
এসডব্লিউ/এমএন/ডব্লিউজেএ/১৬৫০
আপনার মতামত জানানঃ