সরকারের কাছ থেকে প্রণোদনা নেওয়ার সময় কৃষককে দেখাতে হবে স্মার্ট কার্ড। এজন্য সারা দেশে ১ কোটি ৬২ লাখ কৃষককে স্মার্ট কার্ড দিতে যাচ্ছে সরকার। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কৃষকদের জন্য এ কার্ড তৈরি করবে। পরীক্ষামূলকভাবে এ জন্য ৯৮ কোটি টাকা ব্যয়ে এ-সংক্রান্ত একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।
প্রণোদনা ও প্রকল্প ব্যয়ের চিত্র
কৃষি মন্ত্রণালয়ের সূত্র মতে, ২০২০-২১ অর্থবছরে এখন পর্যন্ত প্রায় ৫৭ লাখ কৃষকের মাঝে ৩৭২ কোটি টাকার প্রণোদনা বিতরণ করেছে কৃষি মন্ত্রণালয়। প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় মোট জমির পরিমাণ ২৩ লক্ষ ৬৪ হাজার বিঘা [সর্বশেষ হালনাগাদ ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১]।
মহামারি করোনা মোকাবিলা ও বন্যায় ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এবং উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে এ প্রণোদনা দেয়া হয়েছে। প্রণোদনার আওতায় রয়েছে বীজ, চারা, সারসহ বিভিন্ন কৃষি উপকরণ ও আনুষঙ্গিক সহায়তা। কৃষি মন্ত্রণালয়ের নিয়মিত বাজেট কৃষি পুনবার্সন সহায়তা খাতের বরাদ্দ হতে এ প্রণোদনা বিতরণ করা হয়।
৩৭২ কোটি টাকার মধ্যে করোনা ও বন্যায় ক্ষতি পুষাতে দেয়া হয়েছে ১১২ কোটি টাকার প্রণোদনা। রবি মৌসুমে মাসকলাই, মুগ, সূর্যমুখী, সরিষা, ভুট্টা প্রভৃতি উৎপাদন বৃদ্ধিতে দেয়া হয়েছে ৯০ কেটি টাকার প্রণোদনা। এছাড়া, বোরো ধানের আবাদ ও উৎপাদন বৃদ্ধিতে বিনামূল্যে বীজ সহায়তা বাবদ ১৩৬ কোটি টাকা, পেঁয়াজের উৎপাদন বৃদ্ধিতে ২৫ কোটি টাকা ও ৬১ জেলায় সমলয়ে হাইব্রিড বোরো ধান চাষের জন্য ৯ কোটি টাকার প্রণোদনা বিতরণ করা হয়েছে।
অথচ চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে জানা যায় জীব প্রযুক্তির আলু ও কাজুবাদাম-কফির চাষসহ প্রক্রিয়াকরণ শিখতে এবার বৈদেশিক প্রশিক্ষণ ও এক্সপোজার ভিজিট করবেন ১২৬ কর্মকর্তা। এ খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে মোট ৮ কোটি ৯২ লাখ টাকা। এ হিসাবে প্রত্যেক কর্মকর্তার পেছনে ব্যয় হবে ৭ লাখ টাকার ওপরে।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের পৃথক দুই প্রকল্পে এসব কর্মকর্তার বৈদেশিক প্রশিক্ষণ ও এক্সপোজার ভিজিটের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এগুলো হলো-‘জীব প্রযুক্তির মাধ্যমে কৃষিবীজ উন্নয়ন ও বর্ধিতকরণ’ এবং ‘কাজুবাদাম ও কফি গবেষণা, উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ প্রকল্প’।
এরপর এবার কৃষকদের মধ্যে এই স্মার্ট কার্ড বিতরণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৯৮ কোটি টাকা। যা নিয়ে স্বভাবতই প্রশ্ন উঠছে বিভিন্ন মহলে।
কেন এই স্মার্ট কার্ড?
জাতীয় পরিচয়পত্র থাকার পরও নতুন করে আরেকটি কার্ডের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে পরিকল্পনা কমিশন। জাতীয় পরিচয়পত্রের মধ্যেই কৃষকদের সেবা অন্তর্ভুক্ত করা যায় কি না, সে প্রস্তাব দেওয়া হয় এবং জানতে চাওয়া হয়, স্মার্ট কার্ডে যে ধরনের তথ্য থাকবে, জাতীয় পরিচয়পত্রেও কি একই ধরনের তথ্য আছে।
জবাবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে বলা হয়, জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে কৃষককে কৃষি সেবা দিতে গেলে এনআইডি কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হবে। একই সঙ্গে একটি সেবা নিতে প্রতিবার ১ টাকা ১৫ পয়সা করে দিতে হবে। এতে জটিলতা বাড়বে।
সূত্র মতে, কৃষিতে সরকারের সার, বীজসহ যত ধরনের সুবিধা আছে, এই স্মার্ট কার্ড দেখিয়ে সেসব সুবিধা নিতে হবে কৃষকদের।কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, কৃষকদের হাতে এখন একটি কাগুজে কার্ড আছে। কিন্তু এই কার্ড ব্যবহার করতে গিয়ে কৃষকদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়।
সে জন্য কৃষকের ডিজিটাল পরিচিতি হিসেবে স্মার্ট কার্ড দেওয়া হবে। প্রথম পর্যায়ে ১ কোটি ৬২ লাখ কৃষকের ডিজিটাল প্রোফাইল তৈরি করা হবে। দ্বিতীয় ধাপে বাকি কৃষকদের কার্ড দেওয়ার পাশাপাশি তাদের প্রোফাইল তৈরি করা হবে।
ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন ও সংশোধন
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, এই প্রকল্পের আওতায় তারা চার হাজার ব্যক্তিকে প্রশিক্ষণ দিতে চায়। এর মধ্যে রয়েছেন ১ হাজার ২০০ জন জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের বিসিএস (কৃষি) কর্মকর্তা, ১ হাজার ৯২০ জন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা। এ ছাড়া ৯০০ জন কৃষককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এ জন্য খরচ রাখা হয়েছে সোয়া চার কোটি টাকা।
যদিও স্মার্ট কার্ড বিতরণে এত কর্মকর্তার প্রশিক্ষণ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে পরিকল্পনা কমিশন। কমিশনের আপত্তির মুখে প্রশিক্ষণের অংশ সংশোধনও করা হয়েছে। এ ছাড়া করোনার মধ্যে জাতীয় কর্মশালা করতে এক কোটি টাকা রাখার প্রস্তাবও কাটছাঁট করা হয়েছে। চুক্তিভিত্তিক চারটি জিপ কেনার পাশাপাশি জিপের পেছনে জ্বালানি খরচের প্রস্তাবকেও যৌক্তিক পর্যায়ে নামিয়ে আনার কথা জানিয়েছে কমিশন।
জানা গেছে, চলতি বছরের মধ্যেই স্মার্ট কার্ড তৈরির কাজ শুরু হবে। ২০২৪ সালের মধ্যেই প্রকল্পটির কাজ শেষ করতে চায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/১৮৩০
আপনার মতামত জানানঃ