প্রচলিত সিগারেট বিক্রি থেকে সরে আসতে চায় যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে বড় তামাকপণ্য কোম্পানি ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো (বিএটি)। এজন্য সংস্থাটি গাঁজাকে নিজেদের ধূমপান ব্যবসার ভবিষ্যৎ হিসেবে বিবেচনা করার কথা জানিয়েছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে এমনটি বলা হয়েছে।
ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, কোম্পানিটি চাইছে মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর তাদের পণ্যের প্রভাব কমাতে। এ জন্য পণ্যের রূপান্তরকরণ দ্রুত চাওয়া হচ্ছে।
এর আগে গত মার্চে কানাডার মেডিকেল গাঁজা প্রস্তুতকারক অর্গানিগ্রামের অংশীদারিত্ব কেনে বিএটি। প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য গাঁজা ভিত্তিক পণ্য গবেষণায় তারা একটি চুক্তিও করেছে। গাঁজায় থাকা ক্যানাবাইডল নামক প্রাকৃতিক উপাদানকে পণ্যে যুক্ত করার প্রয়াস এতে প্রাথমিকভাবে প্রাধান্য পাবে।
বিএটি’র নির্বাহী কিংসলে হুইটন বলেন, “ব্যবসার ভবিষ্যৎ কার্যাবলী চিন্তা করেই আমরা নিকোটিনজাত পণ্য থেকে অন্যদিকে যাওয়ার চেষ্টা করছি, যা কোম্পানির ভবিষ্যৎ প্রবৃদ্ধিতে নতুন মাত্রা যোগ করবে।
কোম্পানিটির মুখ্য বাজারজাতকরণ কর্মকর্তা হুইটন ভেপ এর মাধ্যমে গাঁজা ভিত্তিক পণ্য ব্যবসার কথাও উল্লেখ করেন। বর্তমানে যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টারে সিবিডি ভেপ নামে এ ধরনের একটি পণ্যের ট্রায়াল চালাচ্ছে কোম্পানিটি।
যুক্তরাজ্যের বেতার চ্যানেল রেডিও ফোর এর একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে তিনি বলেন, “পণ্যটি আমাদের ভবিষ্যতের অংশ হবে বলেই মনে করছি। তবে বর্তমানের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো তামাকজাত পণ্যের ক্ষতি হ্রাস এবং নিকোটিনের বিকল্প পণ্যে ভোক্তাদের আকর্ষণ করা। তাদের ভোগ অভ্যাস বদলানো নিঃসন্দেহে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।”
এদিকে হুইটন এমন সময় একথা বলেছেন যার কিছুদিন আগেই গত জুন নাগাদ বছরের প্রথম ছয় মাসে ৮.১ শতাংশ আয় বৃদ্ধির ঘোষণা দেয় বিএটি। এসময় কোম্পানির মোট আয় ছিল ১২.১৮ বিলিয়ন পাউন্ড।
তবে আর্থিক প্রতিবেদনে কোম্পানিটি জানায়, বর্তমানে যুক্তরাজ্যের বাজারে করা আয়ের এক-তৃতীয়াংশ তাদের ভেপিং ব্র্যান্ড— ভুজে, ভেলো ও গ্লো’র মাধ্যমে হচ্ছে।
তাই গাঁজাকেও ভেপ এর সঙ্গে যুক্ত করাকে সঠিক কৌশল হিসেবে মনে করছে কোম্পানিটি।
আলোচিত সময়ে কোম্পানির নতুন খদ্দের সংখ্যাও বেড়েছে সবচেয়ে দ্রুতলয়ে, এসময় আগুনহীন পণ্য যেমন ইলেকট্রিক ডিভাইস ব্যবহারকারী ভেপারদের সংখ্যা ২৬ লাখ থেকে এক কোটি ৬১ লাখে উন্নীত হয়।
বিবিসিকে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর প্রধান জ্যাক বোলস বলেন, আমরা ভবিষ্যতের জন্য আমাদের পোর্টফোলিও সম্পর্কে ভাবছি। আমার মনে হয় গাঁজার নির্যাসের পণ্য আমাদের ভবিষ্যৎ। এখনকার প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো তামাক এবং নিকটজনের ক্ষতিকারক দিকগুলো কমিয়ে বিকল্প কিছুর জন্য মানুষকে উৎসাহ দেওয়া।
এর আগে গত বছরের ডিসেম্বরে গাঁজা আর বিপজ্জনক মাদক নয় বলে ঘোষণা করে জাতিসংঘ। দীর্ঘ ৫৯ বছর পর গাঁজার উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নেয় জাতিসংঘ।
এতদিন বিপজ্জনক মাদকের তালিকায় জাতিসংঘ গাঁজা-চরসকে রেখেছিল। শুধু তাই নয়, চিকিৎসা বিজ্ঞানেও এর ব্যবহারে ছিল নিষেধাজ্ঞা। কিন্তু এবার গাঁজা-চরসকেই বিপজ্জনক মাদকের তালিকা থেকে সরানোর জাতিসংঘের প্রস্তাবে ৫৩টি সদস্য দেশের মধ্যে ২৭টি পক্ষে সায় দেয়।
ভারত, আমেরিকা এবং ইউরোপের অধিকাংশ দেশই বিপজ্জনক মাদকের তালিকা থেকে গাঁজা ও চরসকে বাদ দেওয়ার পক্ষে সায় দেয়। বিপক্ষে ছিল ২৫টি দেশ। যাদের মধ্যে অন্যতম হল চীন, রাশিয়া ও পাকিস্তান। আর একমাত্র দেশ হিসাবে ইউক্রেন কোনও দিকে মত প্রদান করেনি।
জাতিসংঘ জানিয়েছে, ১৯৬১ সালের নিষিদ্ধ মাদকের সিঙ্গল কনভেনশনের চতুর্থ তফসিলি থেকে গাঁজাকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতিসংঘ। গাঁজা এখন আর বিপজ্জনক মাদক নয়।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৫১০
আপনার মতামত জানানঃ