পর্দা উঠেছে গ্রেটেস্ট শো অন দ্য আর্থ অলিম্পিক গেমসের। বাংলাদেশ সময় বিকাল পাঁচটায় জাপানের অলিম্পিক স্টেডিয়ামে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান দিয়ে পর্দা ওঠে। এই অনুষ্ঠানের চতুর্থ পর্বে অলিম্পিকের বিশেষ সম্মাননা দেওয়া হয় শান্তিতে নোবেল জয়ী বাংলাদেশের অর্থনীতিবিদ ড. মোহাম্মদ ইউনূসকে।
শান্তিতে নোবেল বিজয়ী বাংলাদেশের অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহম্মদ ইউনূসকে বিশেষ সম্মাননা হিসেবে অলিম্পিক লরেল দিয়েছে টোকিও অলিম্পিক আয়োজক কমিটি।
অলিম্পিক ইতিহাসে দ্বিতীয় ব্যক্তি হিসেবে এই লরেল সম্মাননা পেলেন ইউনূস।
শুক্রবার টোকিও অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এই সম্মাননা দেয় আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি (আইওসি)। অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পারেননি নোবেলজয়ী এই অর্থনীতিবিদ।
অ্যাথলেটদের প্যারেড শুরুর পূর্বে ভার্চুয়ালি তাকে এই সম্মাননা দেয়া হয়। এরপরই ইউনূস সেন্টারের ফেসবুক পেজ থেকে তার বক্তব্য প্রকাশ করা হয়। এতে প্রফেসর ইউনূস বলেন, অলিম্পিক লরেল জিতে আমি অভিভূত এবং সম্মানিত বোধ করছি। একইসঙ্গে আমি দুঃখিত যে আমি সশরীরে অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে পারিনি।
আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি ক্রীড়ার সামাজিক প্রভাবকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে।
এরপরই তিনি বিশ্বের অ্যাথলেটদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারাই পরিবর্তনশীল বিশ্বের নেতৃত্ব দিতে পারেন। একইসঙ্গে সৃষ্টি করতে পারেন তিনটি জিরো বা শূন্যের। এগুলো হচ্ছে, শূন্য কার্বন নির্গমন, শূন্য দারিদ্র এবং শূন্য বেকারত্ব। প্রত্যেকের মধ্যে উদ্যোক্তা হওয়ার শক্তি সৃষ্টি করার মাধ্যমেই এগুলো করা সম্ভব।
প্রফেসর ইউনূস তার বার্তায় আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির (আইওসি) সফলতা কামনা করেন। তিনি ক্রীড়ার মাধ্যমে বিশ্বকে আরও শান্তিপূর্ন স্থান হিসেবে গড়ে তুলতে আইওসি’র ভূমিকার কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, আমি এই প্রতিযোগিতায় সকলের জন্য শুভকামনা জানাচ্ছি। আমাকে এই সম্মাননা দেয়ায় আবারও ধন্যবাদ।
অলিম্পিকের সাফল্য কামনা করে তিনি যোগ করেন, ‘এই মিশনটি খেলাধুলার মাধ্যমে এই বিশ্বকে আরও শান্তিপূর্ণ বিশ্বে রূপান্তরিত করতে সহায়তা করবে বলে আমার বিশ্বাস।’
এর আগে গত ১৫ জুলাই এক বিবৃতিতে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি (আইওসি) জানায়, ড. মোহাম্মদ ইউনূসের অগ্রণী ক্ষুদ্র ঋণ প্রদান বিশ্বজুড়ে দারিদ্র্য হ্রাস করার জন্য প্রশংসিত হয়েছে। উন্নয়নের জন্য খেলাধুলায় ব্যাপক কাজের জন্য তাকে সম্মানিত করা হবে।
২০০৬ সালে ক্ষুদ্র ঋণ দিয়ে দারিদ্র্য কমানোর স্বীকৃতিতে নোবেল পান ড. ইউনূস। নারুহিতোর উদ্বোধনী ঘোষণার মধ্যে দিয়ে পর্দা ওঠে অলিম্পিকের। তারপর জাপানি জাতীয় সংগীতের পর করোনায় প্রাণ হারানো মানুষদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। স্মরণ করা হয় ১৯৭২ সালের বার্লিন অলিম্পিকে নিহত ইসরায়েলি অ্যাথলেটদের। তারপরই ড. ইউনূসকে ভার্চুয়ালি দেওয়া হয় অলিম্পিক লরেল।
পাঁচ বছর আগে এই পুরস্কারের প্রবর্তন করা হয়। সংস্কৃতি, শিক্ষা ও শান্তি প্রচেষ্টা এবং ক্রীড়া উন্নয়নে অবদানের স্বীকৃতিতে ২০১৬ সাল থেকে এই বিশেষ সম্মাননা দেওয়া শুরু করে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি।
কেনিয়ার সাবেক অলিম্পিয়ান কিপচোগে কেইনোকে রিও অলিম্পিকে প্রথম এই সম্মাননা দেওয়া হয়। তিনি ১৯৬৮ এবং ১৯৭২ সালে ১৫০০ মিটারে স্বর্ণপদক জেতেন। এছাড়া তিনি ছিলেন কেনিয়ার অলিম্পিক কমিটির প্রেসিডেন্ট এবং আইওসির সান্মানিক সদস্য। তিনি নিজের দেশে শিশুদের জন্য স্কুলের পাশাপাশি একটি অ্যাথলেট প্রশিক্ষণ কেন্দ্রও গড়ে তুলেছেন।
কেনিয়ান শিশুদের জন্য স্কুল, নিরাপদ আবাসন ও ক্রীড়া প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করায় তিনি এই পুরস্কার পান।
দর্শকশূন্য স্টেডিয়ামে শুরু হলো উদ্বোধনী অনুষ্ঠান
দর্শক নেই, স্বল্প সংখ্যক অ্যাথলেট, অনেক অনেক ফেসমাস্ক এবং জীবাণু-বিহীন ফ্ল্যাগ— এসব নিয়েই আজ শুক্রবার শুরু হলো টোকিও অলিম্পিকস। করোনাভাইরাস মহামারি জাপানে একটি জাঁকজমকপূর্ণ অলিম্পিকসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান করার আশাকে একেবারে ধূলিসাৎ করে দিয়েছে। এর পরিবর্তে পুরো অনুষ্ঠানটির মেজাজ হবে ভাব-গম্ভীর, বর্তমান সময়ের জন্য যা উপযুক্ত।
জাপানি সম্রাট নারুহিতো এই অলিম্পিকস উদ্বোধন করবেন। কিন্তু তার ভাষণে ‘উৎসব’, ‘আনন্দ’ ইত্যাদি শব্দগুলো থাকবে না বলেই মনে করা হচ্ছে।
যে ভেন্যুতে এই উদ্বোধন অনুষ্ঠান হবে তার ধারণ ক্ষমতা ৬৮,০০০। কিন্তু অনুষ্ঠানে হাজির থাকবেন এক হাজারেরও কম মানুষ, যাদের বেশিরভাগই আমন্ত্রিত ভিআইপি।
সাম্প্রতিক কোন অলিম্পিকস নিয়ে এতটা বিতর্ক আর কখনই হয়নি। গত বছর করোনাভাইরাস মহামারি শুরু হলে টোকিও অলিম্পিকস স্থগিত করা হয়। কিন্তু এখনও টোকিওতে জরুরি অবস্থার মধ্যেই এই বিশ্ব প্রতিযোগিতা চলবে। কারণ জাপানে করোনার সংক্রমণ এখনও ঊর্ধ্বমুখী।
এই গেমস একেবারে বাতিল করার দাবী অনেক দিন ধরেই রয়েছে। কারণ এই ধরনের অনুষ্ঠানের পর সংক্রমণের মাত্রা আরও বেড়ে যায়। কিন্তু আয়োজকরা আশা করছেন, এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর যখন বিভিন্ন ইভেন্টে প্রতিযোগিতা শুরু হবে তখন এবারের অলিম্পিকস নিয়ে সমালোচনাগুলো কমে আসবে।
আন্তর্জাতিক অলিম্পিকস কমিটির সভাপতি টমাস বাখ বলছেন, স্টেডিয়ামে ঢোকার অনুভূতি হবে আনন্দের এবং স্বস্তির।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৯৩০
আপনার মতামত জানানঃ