করোনার প্রকোপ থেকে বাঁচতে পারেনি বাগেরহাটও। সারাদেশের মতো এই জেলায়ও ছড়িয়ে পড়েছে প্রাণঘাতি করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯)। অন্যান্য জেলার মতো এই জেলাশহরের স্বাস্থ্যব্যবস্থাও ধুঁকছে। করোনা প্রতিরোধে নেই যথাযথ ব্যবস্থা। যেকোনো মুহূর্তে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এমন পরিস্থিতিতে ১৫ লাখ মানুষের এই জেলায় রয়েছে মাত্র ১০০ শয্যাবিশিষ্ট একটি হাসপাতাল।
আরও অবাক করা বিষয়, যেটা পরিচালিত হচ্ছে আগের ৫০ বেডের সময়কার কর্মীদের দিয়েই। এমনকি করোনা চিকিৎসায় সবচেয়ে জরুরি পূর্ণাঙ্গ কোনো আইসিইউ বেড নেই।
সূত্র মতে, বাগেরহাটে এখন পর্যন্ত ১১০ জন করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। প্রতিদিনই মৃত্যু হচ্ছে করোনা উপসর্গ নিয়ে।
এর আগে বাগেরহাটে ১২ই জুলায় ২৪ ঘণ্টায় ১৯৬ জনের করোনা শনাক্ত হয়, যা এক দিনে জেলায় সর্বোচ্চ শনাক্তের রেকর্ড। এর আগে গত ২৭ জুন এক দিনে জেলায় ১৭৭ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছিল।
এ প্রসঙ্গে বাগেরহাট জেলার সিভিল সার্জন ডাক্তার কে এম হুমায়ুন কবির বলেন, তিনটি আইসিইউ বেড থাকলেও দক্ষ জনবলের অভাবে সেগুলো এসবিইউ বেড হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এক কথায় হাসপাতলে এখনো পূর্ণাঙ্গ আইসিইউ বেড স্থাপন করা হয়নি।
তিনি জানান, বাগেরহাট-২ আসনের সংসদ সদস্য শেখ সারহান নাসের তন্ময় সম্প্রতি এই তিনটি আইসিইউ বেড প্রদান করেছেন। কিন্তু আইসিইউ বেড পরিচালনার জন্য টেকনিশিয়ান বা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জনবল নেই।
বাগেরহাটের একমাত্র ৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালটি ১০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়েছে জানিয়ে কে এম হুমায়ুন কবির বলেন, ৫০ শয্যার জনবল নিয়ে ১০০ শয্যার হাসপাতাল পরিচালনা করা হচ্ছে। এতে চিকিৎসাসেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে বেশ অসুবিধা হচ্ছে। তারপরও এই জনবল নিয়েই করোনায় আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছি।
তিনি জানান, আগামী এক বছরের মধ্যে এই হাসপাতালে ১০টি আইসিইউ বেড এবং ২০টি আইসোলেশন ইউনিট করার জন্য ৭ কোটি ২ লাখ টাকা বরাদ্দ হয়েছে। গণপূর্ত অধিদফতর ইতোমধ্যেই দরপত্র আহ্বান করেছে।
বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক (ডিসি) কে এম আজিজুর রহমান জানান, বাগেরহাটের করোনা পরিস্থিতির আগের চেয়ে উন্নতি হয়েছে। আশা করছি শিগগিরই প্রাণঘাতি এই ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে আসবে।
বাগেরহাটের করোনা চিকিৎসার সার্বিক বিষয় নিয়ে খুলনা বিএল কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক এবিএম মোশারফ হোসেন বলেন, আমার মনে হয় সরকারের মধ্যে দুটি অংশ রয়েছে। এই দুটি অংশের সবাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে এবং খুশি করতে ব্যস্ত। তবে একটি অংশ দেশ ও জাতির কল্যাণ চাচ্ছে। করোনা চিকিৎসার ক্ষেত্রে বাগেরহাট জেলায়ও একই অবস্থা বিরাজ করছে।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির বাগেরহাট জেলার সাধারণ সম্পাদক ফররুখ হাসান জুয়েল বলেন, গতবছরের আগস্ট থেকে এ বছরের এপ্রিল পর্যন্ত একটি সময় পেয়েছিলাম। এই রোগটি সারাবিশ্বে একবার হয়ে আবার ফিরে আসছে। এই তথ্য সরকারের কাছেও ছিল। কিন্তু সরকার এই সময়টুকু কাজে লাগায়নি। করোনা মোকাবিলার জন্য কোনো প্রস্তুতি নেইনি। ফলে আজকের এই ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
সূত্র মতে, করোনাভাইরাস মহামারীর চাপ সামলাতে চলতি বছরের প্রথম দিকে বাগেরহাট সদর হাসপাতালে দশ শয্যার আইসিইউ ইউনিটের জন্য সরঞ্জাম বরাদ্দ দেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। কিন্তু প্রায় ছয় মাস ধরে সেসব যন্ত্রপাতি পড়েই রয়েছে।
সিভিল সার্জন কে এম হুমায়ুন কবির বলছেন, জনবল আর অবকাঠামোর অভাবে তারা আইসিইউ চালু করতে পারছেন না। হাসপাতালের ষষ্ঠতলায় নতুন অবকাঠামো করে সেখানে আইসিইউ চালুর পরিকল্পনা চলছে এখন। কিন্তু সেজন্যও অন্তত এক বছর সময়ের প্রয়োজন।
বাগেরহাটের ১০০ শয্যার সদর হাসপাতালটির পাশে আরেকটি পাঁচতলা ভবন করে আড়াইশ শয্যায় উন্নীত করা হয় কয়েক বছর আগে। কিন্তু প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ না দেওয়ায় ভবনটি একপ্রকার খালি পড়ে ছিল।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়তে থাকায় ওই ভবনটিতে ৫০ শয্যার কোভিড ডেডিকেটেড ইউনিট চালু করে স্বাস্থ্য বিভাগ। সেখানেই করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা এবং আক্রান্ত অসুস্থ রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে এখন।
এদিকে সুযোগসুবিধার অপর্যাপ্ততার মধ্যেও লড়ে যাচ্ছেন চিকিৎসা কর্মীরা। নানামুখী সংকট থাকলেও সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা।স্থানীয় সংসদ সদস্যের দেওয়া দুটি গাড়িতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চারজন স্বাস্থ্যকর্মী বাড়ি বাড়ি গিয়ে করোনার নমুনা সংগ্রহ করছেন।
চিকিৎসকরা যেন গ্রামে রোগীর বাড়িতে যেতে পারেন সেজন্যও গাড়ি দিয়েছেন ওই সংসদ সদস্য। ‘ডাক্তারের কাছে রোগী নয়, রোগীর কাছে ডাক্তার।’ এই শ্লোগানকে সামনে রেখে দুইজন চিকিৎসক সার্বক্ষণিক চিকিৎসাসেবা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে।
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/১৫০৫
আপনার মতামত জানানঃ