অনিয়মের কারখানা খুলে বসেছে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি)। বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য সরকারি জিওবি তহবিল থেকে বরাদ্দ দেওয়া শত কোটি টাকা বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করে রেখেছে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি)। সরকারের একটি সংস্থার তদন্তে এ তথ্য বেরিয়ে এসেছে।
এতে দেখা গেছে প্রতিষ্ঠানটির বাস্তবায়নাধীন ৪টি প্রকল্প ও ৮টি প্রতিষ্ঠান ও ২০১৮-১৯ অর্থবছরের কর্মসূচিতে এ অনিয়ম ঘটেছে। এমন অবস্থায় এ ঘটনাকে গুরুতর আর্থিক শৃঙ্খলা পরিপন্থী উল্লেখ করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করা হয়েছে।
প্রকল্প, প্রতিষ্ঠান ও কর্মসূচির ২০১৮-১৯ অর্থবছরের অর্থ ছাড়, ব্যাংক হিসাব, ট্রেজারি চালান নিরীক্ষা করা হয় এ অনুসন্ধানে। তাতে দেখা যায়, জিওবি বরাদ্দের অব্যয়িত প্রায় ৯৬ কোটি ৮৩ লাখ টাকা সরকারের নির্দিষ্ট খাতে জমা বা সমর্পণ না করে অবৈধভাবে বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে জমা রাখা হয়েছে। যা আর্থিক শৃঙ্খলা পরিপন্থী।
সেখান থেকে আরও জানা যায়, ওই অর্থবছরে প্রকল্পের জিওবি বরাদ্দ হতে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্প বা কর্মসূচিতে ছাড়কৃত টাকা অর্থবছরের শেষ দিন ৩০ জুন সরকারি কোষাগারে জমা না করে আলাদা ব্যাংক হিসাব খুলে জমা করা হয়েছে।
অথচ ২০০২ সালের ৮ এপ্রিল জারি করা অর্থ মন্ত্রণালয়, অর্থ বিভাগ ও উন্নয়ন অনুবিভাগের এক স্মারক মোতাবেক জিওবি বরাদ্দের অব্যয়িত সমুদয় অর্থ অর্থবছরের ৩০ জুনে সরকারের নির্দিষ্ট খাতে জমা করতে হবে। এক্ষেত্রে এ আদেশ পরিপালন করা হয়নি।
এ বিষয়ে নিরীক্ষা দলকে সংশ্লিষ্ট প্রকল্প কর্তৃপক্ষ তাৎক্ষণিক জবাব দিতে পারেনি। নথিপত্র পর্যালোচনা করে পরে জবাব দেওয়া হবে বলে জানান তারা। কিন্তু অনিয়ম ধরা পড়ার দুই বছর পরও জবাব পায়নি তদন্ত দল।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জিওবি বরাদ্দের অব্যয়িত অর্থ ৩০ জুনের মধ্যে সরকারের নির্দিষ্ট খাতে জমা না করায় সরকারি আদেশ লঙ্ঘন হয়েছে। এ অবস্থায় এর সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করা হয়েছে। পাশাপাশি অব্যয়িত অর্থ উদ্ধার করে সরকারের নির্দিষ্ট খাতে জমা দিতেও বলা হয়েছে।
বিএডিসি চেয়ারম্যান ড. অমিতাভ সরকার গনমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা তথ্যগুলো পেয়েছি। কিছু কিছু বিষয় আছে যেগুলোর তাৎক্ষণিক জবাব দেওয়া যায় না। পরে আমরা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছ থেকে জবাব সংগ্রহ করে দিয়ে থাকি। এক্ষেত্রেও তাই করা হবে। জবাব পেলে ব্যবস্থা নেবো। সংশ্লিষ্টদের জবাব দেওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।’
আর্থিক শৃঙ্খলা ভেঙে জিওবি ফান্ডের ৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা প্রকল্পের নিজস্ব আয়ের বিক্রয়লব্ধ হিসাবে স্থানান্তর করা হয়েছে। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) বাস্তবায়নাধীন ডাল ও তৈল বীজ উৎপাদনের মাধ্যমে টেকসই পুষ্টি নিরাপত্তা জোরদারকরণ প্রকল্প-এর ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এ ঘটনা ঘটে।
এদিকে বিএডিসির নানা অপকর্মের মধ্যে ফসলের বীজ, সার থেকে শুরু করে কৃষকের টাকা আত্মসাৎ করা অন্যতম একটি নমুনা। আর্থিক শৃঙ্খলা ভেঙে জিওবি ফান্ডের ৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা প্রকল্পের নিজস্ব আয়ের বিক্রয়লব্ধ হিসাবে স্থানান্তর করা হয়েছে। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) বাস্তবায়নাধীন ডাল ও তৈল বীজ উৎপাদনের মাধ্যমে টেকসই পুষ্টি নিরাপত্তা জোরদারকরণ প্রকল্প-এর ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এ ঘটনা ঘটে।
বিপুল অঙ্কের টাকা আত্মসাতই এ ঘটনার উদ্দেশ্য হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে সরকারের এক তদন্ত প্রতিবেদনে।
তদন্ত সূত্র জানিয়েছে, ২০১৯ সালের ১১ ডিসেম্বর থেকে ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত তদন্ত করে এ অনিয়ম খুঁজে পায় সংস্থাটি। এ সময়সীমায় প্রতিষ্ঠানটির নগদ বই, ব্যাংক হিসাব বিবরণী ও অন্যান্য নথিপত্র যাচাই করা হয়।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে প্রকল্পের জিওবি বরাদ্দের অর্থ এসটিডি (জিওবি) হিসাব হতে পত্র নং ৯৪০-এর মাধ্যমে ২০১৯ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি ৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা প্রকল্পের নিজস্ব আয়ের (বিক্রয়লব্ধ) হিসাবে স্থানান্তর করা হয়। এতে সরকারের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে বলেও জানানো হয়। এ আর্থিক শৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করা হয় তদন্ত প্রতিবেদেনে।
উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর অর্থ অবমুক্তি ও ব্যবহার নির্দেশিকা-২০১৮ এর প্রকল্পগুলোর অর্থ ব্যবহার পদ্ধতি সংক্রান্ত ছকের ১৯(১৩)-এ বর্ণিত অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রত্যেক প্রকল্পের জন্য পৃথক ব্যাংক হিসাব রাখতে হবে। সিএও এবং উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা থেকে পাওয়া অর্থ ওই হিসাবে জমা নিশ্চিত করতে হবে।
এই হিসাবের অর্থ শুধু সংশিষ্ট প্রকল্পের পিপি অনুযায়ী নির্ধারিত কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য ব্যবহার করা যাবে। কোনও অর্থ অন্য কোনোভাবে বা অন্য উদ্দেশ্যে স্থানান্তর করা যাবে না। কিন্তু এ ক্ষেত্রে ওই আদেশ না মেনে প্রকল্পের নিজস্ব আয়ের হিসাবে অর্থ স্থানান্তর করা হয়।
আর সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন প্রকল্পের নথিপত্র পর্যালোচনা করে জবাব দেওয়া হবে।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বাংলা গনমাধ্যমকে বলেন, যেহেতু সরকারি অডিটে এই অনিয়মগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে, তাহলে নিশ্চয়ই এগুলোর সত্যতা রয়েছে। প্রতিবেদনে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্যও সুপারিশ করা হয়েছে। তাই এতে জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে অর্থ উদ্ধার করা উচিৎ।
এসডব্লিউ/ডব্লিউজেএ/১৮১৫
আপনার মতামত জানানঃ