শ্বাসরোধ করে হত্যার অভিযোগ দায়ের করা একটি মামলার নারী আসামিকে শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে বরিশালের উজিরপুর মডেল থানা পুলিশের বিরুদ্ধে। ঘটনাটিকে তদন্ত করে যথাযোগ্য শাস্তির দাবি জানিয়েছে আসামীর পরিবার, আইনজীবী ও মানবাধিকার নেতৃবৃন্দ।
উক্ত নারী আসামীর শারীরিক পরীক্ষা করে জখম, নির্যাতনের চিহ্ন ও নির্যাতনের সম্ভাব্য সময় উল্লেখসহ একটি প্রতিবেদন তৈরি করতে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালককে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
সেইসঙ্গে একজন নারী রেজিস্টার্ড চিকিৎসককে দিয়ে এ কার্যক্রম করানোর পাশাপাশি বরিশালের সিনিয়র জেল সুপারের সার্বিক তত্ত্বাবধায়নে আসামিকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
আসামী নারীর অপরাধ
মামলা, থানা পুলিশ ও আদালত সূত্রে জানা গেছে, গত ২৬ জুন বরিশালের উজিরপুর উপজেলার জামবাড়ি এলাকা থেকে বাসুদেব চক্রবর্তী নামের এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় ২৭ জুন বাসুদেবের ভাই বরুণ চক্রবর্তী উজিরপুর মডেল থানায় শ্বাসরোধ করে হত্যার অভিযোগ এনে একটি মামলা করেন। সেখানে ওই নারীসহ (৩০) অজ্ঞাতনামা আরও পাঁচ থেকে ছয় জনকে আসামি করা হয়।
পরে মামলার আসামি হিসেবে ওই নারীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর থানা পুলিশের পাঁচ দিনের রিমান্ডের আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ৩০ জুন বরিশালের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট উজিরপুর আমলী আদালত ওই নারীর দুদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ড শেষে গত ২ জুলাই শুক্রবার তাকে আদালতে হাজির করে পুলিশ।
আসামী নারী যৌন হয়রানির শিকার
আসামী ওই নারীকে খুঁড়িয়ে হাঁটতে দেখে এর কারণ জানতে চান আদালত। ওই নারী পুলিশের বিরুদ্ধে তাকে শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ করেন। আদালত একজন নারী কনস্টেবল দিয়ে পরীক্ষা করে শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন পান। এরপর আদালত আইন অনুযায়ী তার বিবৃতি লিপিবদ্ধ করেন। পাশাপাশি আদালত তাঁর যথাযথ চিকিৎসা এবং নির্যাতনের বিষয়ে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দেন শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালককে।
ওই নারী আসামির ভাই অভিযোগ করে জানান, মিথ্যা মামলা দিয়ে তার বোনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এরপর তাকে রিমান্ডের নামে থানায় নিয়ে শারীরিক এবং যৌন নির্যাতন করেন তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক মো. মাইনুল ও এক নারী কনস্টেবল। এ ঘটনা নিয়ে বাড়াবাড়ি না করার জন্য তাদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
যৌন হয়রানি আসলেই হয়েছে কি না তা নিয়ে ভিন্নমত
ওই নারী আসামির আইনজীবী অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান জানান, পুলিশ রিমান্ড চাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে আদালত দু’দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে সতর্কতার সঙ্গে আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু পুলিশ আসামিকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের নামে শারীরিক ও স্পর্শকাতর স্থানে নির্যাতন করেছে, যা যৌন হয়রানি ও নির্যাতনের শামিল। আদালত আসামিকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠালে সেখানেও পুলিশ প্রভাব খাটিয়েছে অভিযোগ তুলে তিনি এ ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেন।
তবে রিমান্ডের সময় ওই নারীকে শারীরিক ও যৌন নির্যাতন করার অভিযোগ সঠিক নয় বলে দাবি করেছেন উজিরপুর মডেল থানার ওসি জিয়াউল আহসান। এ ছাড়া রিমান্ডে নারী আসামির ওপর নির্যাতনের ঘটনা ঘটে থাকলে তদন্ত করে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছেন বরিশালের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শাহজাহান।
এদিকে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচ এম সাইফুল ইসলাম জানান, আদালত ওই নারী আসামিকে চিকিৎসা প্রদান এবং অন্যান্য (শারীরিক ও যৌন নির্যাতন) বিষয়ে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রতিবেদন চেয়েছেন। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী ওই নারীকে চিকিৎসা দেওয়ার পাশাপাশি তাঁর নির্যাতনের বিষয়ে যথাসময়ে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা বলেন তিনি।
এদিকে, গত শুক্রবার রাত ১০টার দিকে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় ওই নারী আসামিকে। পরে তাকে হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) পাঠানো হয়।
এসডব্লিউ/এমএন/ওজেএ/৪৭১৫
আপনার মতামত জানানঃ