পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলার মৌটুটিয়াখালীর ছ-আনি পাড়ার প্রায় তিন’শ বছরের পুরনো রাখাইন গ্রামটির ৬টি পরিবারকে উচ্ছেদের অভিযোগ উঠেছে পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। সূত্র মতে, উক্ত ছয়টি পরিবারকে উচ্ছেদের জন্য বার বার ক্রেন নিয়ে সেখানে গেলে, রাখাইন আদিবাসীরা প্রতিবাদ জানায়।
ওই ছয়টি পরিবারে প্রায় ২৮ জন সদস্য রয়েছে। পায়রা বন্দরের জন্য জমি অধিগ্রহণের সময় গ্রামটাকে বাদ দিতে দাবি জানিয়ে আসছিল পাড়াবাসী। কিন্তু কর্তৃপক্ষ তাদের দাবি তোয়াক্কা না করে কয়েক মাস আগে থেকে বারবার নোটিশ দিয়ে আসছিল।
এদিকে আরও অভিযোগ পাওয়া গেছে, নিয়ম অনুযায়ী অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণও দেয়া হচ্ছে না। উল্টো প্রতিদিন যন্ত্রপাতি নিয়ে একটু একটু করে গ্রামের বিভিন্ন জায়গা ভাঙা হচ্ছে বলে স্থানীয়রা জানায়।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে স্থানীয় ভুক্তভোগী চিংদামো রাখাইন গণমাধ্যমকে জানান, বন্দর কর্তৃপক্ষ ছ-আনি পাড়াবাসীকে বন্দরের জন্য নির্মিত গুচ্ছগ্রামে স্থানান্তরিত করতে চাইছে। সেই গুচ্ছগ্রাম বাঙালী অধ্যুষিত ধানখালীতে। যেখানে তারা থাকতে চাইছেন না। কেননা, আদিবাসীরা একটু নিরিবিলি নিজেদের মতো করে থাকেন। এবং শত বছরের পুরনো ঐতিহ্য, বটগাছ, বৌদ্ধ মন্দির এবং সাংস্কৃতিক নানা উপাদান ছেড়ে বাঙালি অধ্যুষিত সেই গুচ্ছগ্রামে থাকতে চান না। কিন্তু প্রশাসনকে তারা এটা জানালেও প্রশাসন নির্বিকার এবং সর্বশেষ গত ৮ জুন পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের পিডি ও ক্যাপ্টেন এম নুরুজ্জামান তাদেরকে ডেকে এক সপ্তাহের ভেতর গ্রাম ছেড়ে চলে যেতে নির্দেশ দেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
তিনি আরো বলেন, আমরা আমাদের বাপ-দাদার ভূমিতে বাস করতে চাই। সরকারের যদি খুব প্রয়োজন হয় তবে তারা আমাদেরকে পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ ও সময় দিক। আর যদি পুনর্বাসন করতে হয় তবে আমাদেরকে রাখাইন অধ্যুষিত পাড়ায় পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হোক। তবে আমাদের গাছ-গাছালি আর অন্যান্য সম্পত্তি বিক্রি এবং স্থানান্তরের জন্য পর্যাপ্ত সময় দেয়া হোক। এদিকে পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের নির্মাণ কাজের ফলে ক্রমান্বয়ে কর্তৃপক্ষের বালি এসে জায়গা-জমিতে এসে জমে গেছে এবং চাষযোগ্য জমিগুলো ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
এদিকে এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের কেন্দ্রীয় সদস্য মেইনথেইন প্রমিলা বলেন, যে গ্রামে উচ্ছেদের প্রক্রিয়া চলছে সেই রাখাইন গ্রামের পত্তন ১৭৮৪ খ্রিষ্টাব্দে। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্মের আগেও এই গ্রামের জন্ম। কাজেই সরকার এটিকে ‘ন্যাশনাল হ্যরিটেজ’ হিসাবেও সংরক্ষণ করতে পারতো। কিন্তু পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ যে কাজ করছে তার মাধ্যমে সরকার বা রাষ্ট্রের সম্মান কমবে বৈ বাড়বে না। কাউকে “উচ্ছেদ” করে করা উন্নয়ন ‘প্রকৃত উন্নয়ন’ হয় না বলেও অভিমত দেন এই আদিবাসী নারী নেত্রী।
তিনি আরো বলেন, একটি প্রভাবশালী মহল অনেক আগে থেকেই এই গ্রামের রাখাইনদের উচ্ছেদের পরিকল্পনা করে আসছে। এখন সেই প্রভাবশালী মহল এবং পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ মিলে এই উচ্ছেদ পরিকল্পনা করছে। জাতিসংঘের আদিবাসী বিষয়ক ঘোষণাপত্রের ১০ নং অনুচ্ছেদে স্পষ্ট উল্লেখ আছে আদিবাসী অধ্যুষিত জায়গায় কোনো উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহনের পূর্বে স্থানীয়দের মতামত নিতে হবে, সেটাও করা হয়নি।
তিনি আরও বলেন, যদি জোর পূর্বক উচ্ছেদ করে তবে জনগোষ্ঠীর উপর অবিচার করা হবে বলেও মনে করেন তিনি। তবে যদি উচ্ছেদই করতে হয়, ক্ষতিপূরণের প্রকৃত নিয়ম মেনে এবং ভুক্তভোগীরা যেখানে পুনর্বাসিত হতে চায় সেখানেই পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে।
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/১৮২০
আপনার মতামত জানানঃ