ধর্ষণ ইস্যুসহ নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে কিছুদিন আলোচনা বাইরে থাকার পর আবারো আলোচনায় ছাত্রলীগ। এবার পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ির দীঘিনালা-সাজেক পর্যটন এলাকায় তাণ্ডব চালিয়েছে সংগঠনটির স্থানীয় নেতাকর্মীরা। এ সময় সড়কে পর্যটকদের গাড়ি ভাঙচুর ও রাস্তা অবরোধ করে তারা। এ ঘটনায় ওই অঞ্চলে স্থানীয় পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। পর্যটক ও তাদের অভিভাবকরা পড়েছেন দুশ্চিন্তায়।
১৪ নভেম্বর ২০২০, রবিবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে এ হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় পুলিশ তিনজনকে আটক করেছে। এ সময় দীঘিনালা-সাজেক সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। বিক্ষোভ চলাকালে পর্যটকদের কয়েকটি গাড়িসহ স্থানীয়দের গাড়িও ভাঙচুরের সম্মুখীন হয়েছে। স্থানীয়দের দেয়া তথ্যমতে, কেবল হামলার শিকার পর্যটকবাহী বাসই হবে ১০টির মতো। আর স্থানীয়দের গাড়ি ও অন্যান্য জিনিসপত্র তো রয়েছেই।
জানা গেছে, শনিবার জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি টিকো চাকমা ও সাধারণ সম্পাদক জহির উদ্দিন ফিরোজ যৌথ স্বাক্ষরে দীঘিনালা ও মাটিরাঙা উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা করা হয়। এ কমিটি ঘোষণার পর দীঘিনালা উপজেলার ছাত্রলীগের পদবঞ্চিত নেতাকর্মীরা সকাল থেকে দীঘিনালা বাস টার্মিনাল এলাকায় অবস্থান নেন। তারা টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন। এক পর্যায়ে দেশের স্বনামধন্য এই পর্যটন অঞ্চলে আতঙ্ক সৃষ্টি হয় তাদের তৎপরতার জন্য।
পুলিশ জানায়, এই ঘটনায় আটককৃত তিনজন হলেন, পজেলা ছাত্রলীগ নেতা অপু চৌধুরী, রুবেল চক্রবর্তী (বাবু) ও আমানুর রহমান শান্ত। এদের মধ্যে অপু চৌধুরী নতুন ঘোষিত কমিটির সহ-সভাপতি, দীঘিনালা কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি রুবেল চক্রবর্তী (বাবু), আমানুর রহমান শান্ত নতুন ঘোষিত কমিটির দফতর সম্পাদক। এরা প্রত্যেকে পদবঞ্চিত ছাত্রনেতা।
খাগড়াছড়িতে মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা ছাত্রলীগ কমিটির সভাপতি টিকো চাকমা ও সাধারণ সম্পাদক জহির উদ্দিন ফিরোজের স্বেচ্ছাচারিতা, অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন জেলা ছাত্রলীগের নেতারা। এ সময় অভিযোগ করা হয়, শনিবার নিজেদের পছন্দের ব্যক্তিদের দিয়ে দীঘিনালা উপজেলা, দীঘিনালা সরকারি কলেজ, মাটিরাঙা উপজেলা, রামগড় উপজেলায় বিবাহিত, অছাত্র ও মাদক ব্যবসায় জড়িতদের দিয়ে উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা করে। সংবাদ সম্মেলনে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে শনিবার ঘোষিত কমিটি ও খাগড়াছড়ি জেলা ছাত্রলীগের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি বাতিলের দাবি জানানো হয়। দাবি পুরণ না হলে আবারও মাঠে নামার হুমকি দিয়ে রেখেছেন পদবঞ্চিত নেতারা।
দীঘিনালা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উত্তম কুমার দেব ভাঙচুরের কথা স্বীকার করে বলেন, পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তবে স্থানীয়রা বলছেন, সংগঠন হিসেবে ছাত্রলীগ জাতীয় পর্যায়ে যেমন, এই অঞ্চলেও তেমনি বিতর্কিত ও সমালোচিত। কিছুদিন ধরেই সম্মেলনকে কেন্দ্র করে ক্ষমতার দখল নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে বিরোধের আভাস মেলে। ছাত্রলীগ নেতাদের এমন অপতৎপরতা হুট করে ঘটেনি। তারা বিক্ষোভ করেছে, অবস্থান করেছে, তারপর ভাঙচুর করেছে। পুলিশ আগে থেকেই সক্রিয় হলে এবং প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নিলে এই ঘটনা ঘটত না। কিন্তু বরাবরই সরকারি দলের লোকদের অন্যায়-অপরাধকে পাশ কাটিয়ে যায় পুলিশ, এমন অভিযোগ পাহাড়ের স্থানীয় জনগোষ্ঠীগুলোর।
ফাআ/আরা/১৪৫০
আপনার মতামত জানানঃ