মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ থেকে সেনা সদস্য ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ‘প্যাট্রিয়ট অ্যান্টি-মিসাইল ব্যাটারি’ তুলে নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। শুক্রবার এক বিবৃতিতে এই তথ্য জানিয়েছে দেশটির সামরিক বাহিনীর সদর দফতর পেন্টাগন। শুক্রবার দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল ও এএফপির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বেশ কয়েক বছর ধরেই ইরাক, কুয়েত, জর্ডান ও সৌদি আরবের মতো মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে ‘প্যাট্রিয়ট মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেম’ মোতায়েন রেখেছে আমেরিকা। এছাড়া, ওই জায়গাগুলোতে ‘থাড মিসাইল সিস্টেম’ও রয়েছে। বিভিন্ন সেনঘাঁটিতে থাকা ওই হাতিয়ারগুলোর চালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বিপুলসংখ্যক সেনাসদস্য ও টেকনিশিয়ান রাখতে হচ্ছে আমেরিকাকে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাইডেন প্রশাসনের নির্দেশে মধ্যপ্রাচ্যের ইরাক, কুয়েত, জর্ডান এবং সৌদি আরবে মোতায়েন করা আটটি প্যাট্রিয়ট অ্যান্টি মিসাইল ব্যাটারি ইউনিট তুলে নিচ্ছে পেন্টাগন। এছাড়া সৌদি আরবকে উপহার হিসেবে ‘থাড’ নামে একটি মিসাইল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা প্রদান করা হবে বলেও জানানো হয়েছে বিবৃতিতে।
গত ২ জুন সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনের ফোনালাপের পর থেকেই এই প্রত্যাহার কার্যক্রম শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল।
ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা প্যাট্রিয়ট অ্যান্টি মিসাইল ব্যাটারির প্রতিটি ইউনিট পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণে শতাধিক সেনা সদস্য ও বেসামরিক কর্মীবাহিনীর প্রয়োজন হয়। সেই হিসেবে অল্প দিনের মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের এই চারটি দেশ থেকে হাজারেরও মার্কিন সেনা ও বেসামরিক কর্মীবাহিনী প্রত্যাহার করা হবে।
সংবাদ সংস্থা এএফপি সূত্রে খবর, এবার ওই সংখ্যা দ্রুত কমিয়ে আনতে চলেছে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন। জানা গেছে, আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই কুয়েত, ইরাক, জর্ডান ও সৌদি আরব থেকে বেশ কয়েকটি মিসাইল সিস্টেম সরিয়ে ফেলতে ‘ইউএস সেন্ট্রাল কমান্ডকে নির্দেশ দিয়েছেন মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব লয়েড অস্টিন।
এই বিষয়ে পেন্টাগনের মুখপাত্র কমান্ডার জেসিকা ম্যাকনাল্টি বলেন, কয়েকটি মিসাইল সিস্টেম অন্য দেশে মোতায়েন করা হবে। কয়েকটিকে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আমেরিকায় ফিরিয়ে আনা হবে। মিত্র দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে এবং আমাদের কৌশলগত প্রয়োজন বুঝেই এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে প্রতিনিয়ত পরিবর্তন আসছে। সেই অনুযায়ী আমাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থাতেও পরিবর্তন আসা স্বাভাবিক। তবে ভবিষ্যতে যদি মধ্যপ্রাচ্য থেকে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য নতুন হুমকি তৈরি হয়, সেক্ষেত্রে ফের সেখানে সেনা মোতায়েন করা হবে।’
ইমেইল বার্তায় জেসিকা ম্যাকনাল্টি জানান, মধ্যপ্রাচ্য থেকে প্রত্যাহার করে নেওয়া মার্কিন সেনাদের একটি অংশকে বিশ্বের অন্যান্য প্রান্তের মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে বদলি করা হবে। বাকিরা দেশের অভ্যন্তরে সশস্ত্র বাহিনী কমাণ্ডের অধীন থাকবেন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকে আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা ব্যবস্থায় কিছুটা রদবদল করেছে যুক্তরাষ্ট্র। সম্প্রতি আফগানিস্তান থেকে সব মার্কিন সেনাদের প্রত্যাহার করা হয়েছে। এর আগে ইরাক থেকে আড়াই হাজার মার্কিন সেনা প্রত্যাহার করা হয়েছিল।
ইরানের বিরুদ্ধে সংঘাতের আবহে মিত্র দেশগুলো থেকে মিসাইল সিস্টেম কেন সরাচ্ছে আমেরিকা— এর উত্তরে বিশ্লেষকদের একাংশ মনে করছেন, এবার ইরানের সঙ্গে সমঝোতার পথে হাঁটতে চাইছে ওয়াশিংটন। কারণ, চীন ও রাশিয়া এবার আমেরিকার মাথা ব্যথার প্রধান কারণ হয়ে উঠেছে। ইউক্রেনের হাত থেকে ক্রিমিয়া ছিনিয়ে নিয়ে ইউরোপে নিজের অভিসন্ধি সাফ করে দিয়েছে মস্কো। একইভাবে, দক্ষিণ চীন সাগরে আগ্রাসন চালিয়ে আমেরিকাকে বিপাকে ফেলেছে বেইজিং। ফলে ওই দুই দেশকে নজরে রেখেই মিসাইল মোতায়েন করতে চলেছে পেন্টাগন। তাই ইরানের সঙ্গে শান্তি আলোচনা চালিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের ফ্রন্টে আপাতত স্থিতাবস্থা বজায় রাখার পক্ষেই বাইডেন প্রশাসন।
যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরানের পরমাণু প্রকল্প বিষয়ক আলোচনায় অগ্রগতি এবং চীন ও এশিয়া-প্যাসিফিক এলাকা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য নতুন হুমকি হিসেবে দেখা দেওয়ায় এই পদক্ষেপ নিয়েছে বাইডেন প্রশাসন। তা ছাড়া মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নও এই পদক্ষেপ নেওয়ার অন্যতম কারণ।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৮৩০
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ