মহামারি করোনাভাইরাসের মধ্যে সরকারের ভূমিকা নিয়ে লেখালেখির কারণে সারা দেশে ৮৫ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে। এছাড়া একই কারণে আটক একজন লেখকের কারাবন্দী অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে।
মঙ্গলবার (৮ জুন) ‘করোনাভাইরাস সংকট মোকাবিলা কোভিড–১৯ টিকা ব্যবস্থাপনায় সুশাসনের চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) গবেষণাপত্র উপস্থাপনের সময় এমন তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান সভাপতি হিসাবে সংযুক্ত ছিলেন। সংস্থাটির রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি রিসার্চ ফেলো মো. জুলকারনাইন গবেষণাপত্রটি উপস্থাপন করেন। চলতি বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩১ মে পর্যন্ত তথ্য–উপাত্ত নিয়ে গবেষণাপত্রটি তৈরি করা হয়েছে।
টিআইবি বলছে, ২০২০ সালে ২৪৭ জন সাংবাদিক আক্রমণ ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। কোভিড–১৯ অতিমারির সময়েও ৮৫ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে। করোনা পরিস্থিতিতে সরকারের ভূমিকা নিয়ে লেখালেখির অপরাধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে আটক লেখকের কারাগারে মৃত্যু হয়।
স্বাস্থ্যখাতের দুর্নীতি নিয়ে ধারাবাহিকভাবে প্রতিবেদন করা সাংবাদিক স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে তথ্য সংগ্রহের সময় নির্যাতনের শিকার ও আটক, তার বিরুদ্ধে অযৌক্তিকভাবে অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট, ১৯২৩–এ মামলা দায়ের ও কারাগারে পাঠানোর ঘটনা ঘটেছে।
কোভিড–১৯ মোকাবিলা কার্যক্রমে সংঘটিত অনিয়ম–দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘তদন্ত ও বিচারে ধীরগতি’ লক্ষ্য করা গেছে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্বাস্থ্য খাতের কোভিড–১৯ মোকাবিলা কার্যক্রমে বিগত এক বছরেও সংঘটিত অনিয়ম–দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে শৈথিল্য রয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে মামলা দায়ের ও কিছু ক্ষেত্রে কর্মকর্তাদের রদবদলের মধ্যে ব্যবস্থা গ্রহণ সীমাবদ্ধ ছিল। দুর্নীতিতে জড়িত ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলেও স্বাস্থ্য বিভাগের কোনও কর্মকর্তা–কর্মচারীকে আইনের আওতায় আনা হয়নি।
আইনের লঙ্ঘন করে অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় টিকা আমদানির মাধ্যমে জনগণের টাকা থেকে তৃতীয় পক্ষের লাভবান হওয়া সুযোগ তৈরি করে দেওয়া হয়েছে বলেও প্রতিবেদনে অভিযোগ করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, কৌশলগত ঘাটতি, ব্যবসায়িক গোষ্ঠীর প্রভাব ও রাজনৈতিক বিবেচনায় টিকা ক্রয়ের ক্ষেত্রে একক উৎসের ওপর নির্ভর করার কারণে চলমান টিকা কার্যক্রমে আকস্মিক স্থবিরতা নেমে এসেছে।
টিকাদান পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে ‘সমন্বয়ের ঘাটতির’ কথা উল্লেখ করে দুর্নীতি বিরোধী সংস্থাটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত জনগোষ্ঠীকে পরিপূর্ণভাবে টিকার আওতায় আনার ক্ষেত্রে উদ্যোগের ঘাটতি ও সম প্রবেশগম্য টিকা কার্যক্রম নিশ্চিত না করার ফলে অগ্রাধিকার পাওয়ার যোগ্য ঝুঁকিপূর্ণ ও সুবিধাবঞ্চিত অনেক জনগোষ্ঠী টিকার আওতার বাইরে রয়ে গেছে। টিকার নিবন্ধন ব্যবস্থা সমাজের সুবিধাপ্রাপ্ত জনগোষ্ঠীর অনুকূলে হওয়ার কারণে এলাকা, শ্রেণি, লিঙ্গ ও পেশাভিত্তিক বৈষম্য তৈরি হয়েছে। যা সার্বজনীন টিকাদান কর্মসূচির অর্জনকে ঝুঁকিপূর্ণ করছে। সর্বোপরি করোনা মোকাবিলা ও টিকা কার্যক্রমে সুশাসনের ঘাটতি করোনাভাইরাস নির্মূল বা নিয়ন্ত্রণকে দীর্ঘায়িত করছে।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৭০৩
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ