কানাডায় একটি মুসলিম পরিবারের ওপর ট্রাক উঠিয়ে দিয়ে চারজনকে হত্যা করেছেন একজন চালক। দেশটির পুলিশ এটাকে ‘পূর্বপরিকল্পিত’ হত্যাকাণ্ড বলে জানিয়েছে। কানাডার স্থানীয় সংবাদমাধ্যগুলোর বরাত দিয়ে গতকাল সোমবার এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম বিবিসি। খবরে বলা হয়েছে, রাস্তা পার হওয়ার জন্য ওই মুসলিম পরিবার সড়কের পাশেই অপেক্ষা করছিল। এ সময় গাড়িটি তাদের ওপর চালিয়ে দেওয়া হয়। এতে পরিবারটির চারজন নিহত হন।
এ ঘটনায় নাথানিয়াল ভেল্টম্যান নামের এক যুবককে (২০) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। রাস্তা পার হওয়ার জন্য ওই মুসলিম পরিবারের পাঁচজন সদস্য সড়কের পাশে অপেক্ষা করছিলেন। এ সময় তাদের ওপর নিজের গাড়ি চালিয়ে দেন ভেল্টম্যান।
সোমবার তাকে রিমান্ডে নেওয়ার পর আগামী বৃহস্পতিবার আদালতে তোলার কথা রয়েছে।
লন্ডন পুলিশ বিভাগের গোয়েন্দা পুলিশ সুপার পল ওয়েট রয়টার্সকে বলেন, “সন্দেহ নেই এটি একটি পরিকল্পিত এবং পূর্বনির্ধারিত বিদ্বেষমূলক অপরাধ”। তিনি বলেন, “হামলার শিকার হওয়া ব্যক্তিরা তাদের ইসলামিক মূল্যবোধের জন্যই এ ঘটনার শিকার হয়েছেন বলে আমরা মনে করছি”।
তবে আটককৃত অভিযুক্তের কোন পূর্ব অপরাধের রেকর্ড নেই এবং সে কোন ‘হেইট গ্রুপে’র সদস্য কিনা তাও এখন পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া যায়নি বলে পুলিশ জানিয়েছে। কোন রকম অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই তাকে পাশের একটি শপিংমলের পার্কিং লট থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এদিকে পুলিশ এখনও হতাহতের নাম প্রকাশ করেনি, তবে লন্ডন ফ্রি প্রেস জানিয়েছে যে নিহতদের মধ্যে সৈয়দ আফজাল (৪৬), তার স্ত্রী মাদিহা সালমান (৪৪) এবং তাদের ১৫ বছর বয়সী কন্যা ইয়ুমনাহ আফজাল রয়েছেন। সৈয়দ আফজালের ৭৪ বছর বয়স্ক মাও, এ হামলায় নিহত হয়েছেন।
পরিবারটির বেঁচে যাওয়া একমাত্র সদস্য তাদের ৯ বছরের ছেলে ফয়েজ আফজাল। সেও গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে। গণমাধ্যমের বিভিন্ন প্রতিবেদন অনুযায়ী, পরিবারটি প্রায় ১৪ বছর আগে পাকিস্তান থেকে কানাডায় আসে।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী পেইজ মার্টিন সাংবাদিকদের জানান, একটি কালো ট্রাক তীব্র গতিতে তাকে পাশ কাটিয়ে যায়। এরপর তিনি ঘটনাস্থলে এসে যা দেখতে পান ‘সেটি এমন কিছু যা কেউ কখনোই দেখতে চাইবে না’। ২০১৭ সালে কানাডার কুইবেক সিটির একটি মসজিদে গুলি করে ছয় মুসলিমকে হত্যার ঘটনার পর দেশটিতে মুসলিমদের বিরুদ্ধে এটিই সবচেয়ে বড় হামলা।
এক টুইট বার্তায় কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো লিখেছেন, ‘অন্টারিও প্রদেশের লন্ডনের খবর শুনে আমি মর্মাহত। গতকালের ঘৃণিত ঘটনায় যারা প্রিয়জনদের হারিয়েছেন, আমরা তাদের পাশে আছি। আমরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শিশুটিরও পাশে আছি। তার জন্য আমার হৃদয় ভেঙে যাচ্ছে। সুস্থ হয়ে উঠলে তুমি আমাদের অন্তরে ঠাঁই পাবে।’
হামলার ঘটনার তীব্র নিন্দা ও নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে অন্টারিও প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী ডগ ফোর্ড টুইটারে লিখেছেন, ‘ঘৃণা ও ইসলামবিদ্বেষের কোনো স্থান অন্টারিওতে নেই।’
লন্ডন শহরের মেয়রও এ ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। মেয়র এড হোল্ডার বলেন, এটি তার শহরে সংঘটিত হওয়া এখন পর্যন্ত সবচেয়ে নিকৃষ্টতম হত্যার ঘটনা। গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, “আমরা পরিবারটির জন্য শোক প্রকাশ করছি যার এক সাথে তিনটি প্রজন্মের প্রয়াণ হয়েছে’। এটি গণ হত্যার সামিল, মুসলমানদের বিরুদ্ধে, লন্ডনবাসীদের বিরুদ্ধে এবং যার মূল অনির্বচনীয় বিদ্বেষে প্রোথিত।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৪০৭
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ