দেশে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধী চীনের টিকা সিনোভ্যাকের অনুমোদন দিয়েছে সরকার। দেশে অনুমোদিত করোনা প্রতিরোধী পঞ্চম টিকা এটি। এ টিকার পরিবেশক হিসেবে কাজ করবে ইনসেপ্টা ভ্যাকসিন লিমিটেড।
আজ রোববার (০৬ জুন) ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়েছে। এর আগেও ২২টি দেশে এই টিকা ব্যবহারের জন্য অনুমোদন দেয়া হয়েছে। ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে সিনোভ্যাকের টিকার দুই ডোজ নিতে হবে। দুই থেকে চার সপ্তাহ ব্যবধানে এই দুই ডোজ টিকা নিতে হবে। টিকা সংরক্ষণ করতে হবে ২ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায়।
সিনোভ্যাকের টিকার অনুমোদনের জন্য আবেদন করেছিলো প্রতিষ্ঠানটির এ দেশীয় এজেন্ট ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড।
গতকাল শনিবার দুপুরে ঢাকায় চীন দূতাবাসের উপরাষ্ট্রদূত হুয়ালং ইয়ান জানান, বাংলাদেশকে দ্বিতীয় দফায় উপহারের জন্য যে ছয় লাখ টিকা দেয়ার কথা, তা ১৩ জুনের মধ্যে হস্তান্তরের জন্য তৈরি রয়েছে চীন।
তবে বাংলাদেশ কখন চীনের উপহারের টিকা নেবে, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। ১২ মে বাংলাদেশকে পাঁচ লাখ টিকা উপহার হিসেবে দিয়েছিল চীন। সিনোফার্মের তৈরি ওই টিকার ৩০ হাজার অবশ্য বাংলাদেশে কর্মরত চীনের নাগরিকদের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে। দ্বিতীয় দফায় যে ছয় লাখ টিকা বাংলাদেশকে চীন দিচ্ছে, সেটাও সিনোফার্মের তৈরি।
এর আগে করোনা রোধে সিরাম ইনস্টিটিউট উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা, রাশিয়ার স্পুটনিক-ভি, চীনের সিনোফার্মের টিকা এবং ফাইজারের টিকা জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দেওয়া হয়।
সিনোভ্যাকের এ টিকা চলতি বছরের ৯ ফেব্রুয়ারি ব্যবহারের অনুমোদন দেয় চীন। এরপর এটি আরও ২২টি দেশে অনুমোদন পায়। ১ জুন টিকাটির জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দেয় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
কোভ্যাক্সের টিকায় ঘাটতির শঙ্কা
চলতি জুন ও আগামী জুলাই মাসে কোভ্যাক্সের কোভিড–১৯ টিকায় ঘাটতি দেখা দিতে পারে বলে গত শুক্রবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) সতর্ক করে দিয়েছে। আশঙ্কা সত্যি হলে তা বৈশ্বিক এই টিকাদান কর্মসূচির কার্যকরিতাকে ক্ষুণ্ন করবে।
করোনা মহামারি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা হিসেবে বিশ্বে বিশেষত নিম্ন আয়ের দেশগুলোয় যাতে টিকার সুষম বণ্টন নিশ্চিত হয়, সে লক্ষ্যে কোভ্যাক্স নামের এ কর্মসূচি গ্রহণ করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। ইতিমধ্যে কর্মসূচির আওতায় ১২৯টি দেশ ও অঞ্চলে ৮ কোটি ডোজের বেশি টিকা সরবরাহ করা হয়েছে। কোভ্যাক্সের কর্মকর্তা ব্রুস আইলওয়ার্ড শুক্রবার সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা যে পরিমাণ টিকা চেয়েছি, তা থেকে এখন প্রায় ২০ কোটি ডোজ টিকার ঘাটতিতে আছি।’
ধনী রাষ্ট্রগুলো এ পর্যন্ত প্রায় ১৫ কোটি ডোজ টিকা অনুদান হিসেবে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তা যদি ঠিকঠাক পাওয়াও যায়, তবু টিকার সংকট মিটবে না।
আইলওয়ার্ড বলেন, ‘টিকার আগাম ডোজ না পেলে, আমরা ব্যর্থতার প্রমাণ রাখতে চলেছি। আমরা এখনো ঠিকভাবে এগোতে পারছি না। বিশ্বকে এ সংকট থেকে পরিত্রাণ দিতে আমরা আগাম ভিত্তিতে যথেষ্টসংখ্যক দেশের কাছ থেকে যথেষ্টসংখ্যক ডোজ টিকা দিতে পারছি না।’
কোভ্যাক্সকে অনুদান হিসেবে ১৫ কোটি ডোজ টিকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি এ কর্মসূচিকে ভালোভাবে শুরু করতে দারুণ সহায়তা করেছে। কিন্তু দুটি বড় সমস্যা রয়ে গেছে। প্রথমটি, জুন–জুলাই মেয়াদে প্রতিশ্রুত টিকার পরিমাণ খুব সামান্য। যার অর্থ, আমরা ঘাটতিতে পড়তে যাচ্ছি।’ তিনি বলেন, অপর সমস্যাটি যথেষ্টসংখ্যক মানুষকে সময়মতো টিকাদান কর্মসূচির আওতায় আনা নিয়ে।
দ্বিতীয় সমস্যা প্রসঙ্গে আইলওয়ার্ড বলেন, চলতি বছর বিশ্বের মোট জনসংখ্যার অন্তত ৩০–৪০ শতাংশকে টিকা দেওয়া গেলে আমরা লক্ষ্য অনুযায়ী এগোতে পারব।
করোনায় মৃত্যু ৩৭ লাখ ১৮ হাজার ছাড়িয়েছে
বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ১৭ কোটি ২৮ লাখ ছাড়িয়েছে। আর মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৩৭ লাখ ১৮ হাজার।
জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর সিস্টেম সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের (সিএসএসই) তথ্য অনুযায়ী, রোববার সকাল পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭ কোটি ২৮ লাখ ৬৫ হাজার ৮৭২ জনে। এদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৩৭ লাখ ১৮ হাজার ৭২০ জনের।
বিশ্বে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি যুক্তরাষ্ট্রে। রোববার সকাল পর্যন্ত দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা ৩ কোটি ৩৩ লাখ ৫৭ হাজার ৮০ জন। আর এই মহামারিতে দেশটিতে মৃত্যু হয়েছে ৫ লাখ ৯৭ হাজার ৩৭৭ জনের।
যুক্তরাষ্ট্রের পর মৃত্যু বিবেচনায় করোনায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ ব্রাজিল। আক্রান্তের দিক থেকে তৃতীয় ও মৃত্যু বিবেচনায় দেশটির অবস্থান দ্বিতীয়। লাতিন আমেরিকার এই দেশটিতে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ১ কোটি ৬৯ লাখ ৭ হাজার ৪২৫ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ৪ লাখ ৭২ হাজার ৫৩১ জনের।
আক্রান্তের দিক থেকে দ্বিতীয় স্থানে থাকা ভারত মৃত্যু বিবেচনায় আছে তৃতীয় স্থানে। এ পর্যন্ত দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা ২ কোটি ৮৬ লাখ ৯৪ হাজার ৮৭৯ জন। আর মৃত্যু হয়েছে ৩ লাখ ৪৪ হাজার ৮২ জনের।
মৃত্যু বিবেচনায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেশী মেক্সিকো চতুর্থ স্থানে আছে। আক্রান্ত বিবেচনায় দেশটির অবস্থান ১৫ নম্বরে। মেক্সিকোতে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ২৪ লাখ ৩১ হাজার ৭০২ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ২ লাখ ২৮ হাজার ৭৫৮ জনের।
মৃত্যু বিবেচনায় পেরু আছে পঞ্চম স্থানে। আর আক্রান্ত বিবেচনায় দেশটির অবস্থান ১৭ নম্বরে। পেরুতে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ১৯ লাখ ৭৬ হাজার ১৬৬ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ১ লাখ ৮৫ হাজার ৮১৩ জনের।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৪৩০
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ