অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন (কোভিশিল্ড) উৎপাদনের পর এবার ভারতে স্পুটনিক-৫ ভ্যাকসিন তৈরির জন্য ড্রাগ কন্ট্রোলার জেনারেল অব ইন্ডিয়ার (ডিসিজিআই) অনুমতি চেয়েছে সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া।
ভারতে এখন রাশিয়ার ওই টিকা তৈরি করছে হায়দরাবাদভিত্তিক ডক্টর রেড্ডিজ ল্যাবরেটরিজ। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, সেই টিকা তৈরির আগে পরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণের অনুমতি চেয়েছে সিরাম। বুধবার ডিসিজিআই-এর কাছে আবেদনপত্র পাঠিয়েছে সেরাম।
প্রতিষ্ঠান প্রধান আদর পুনাওয়ালা বলছেন, দেশে দুটি কোম্পানি টিকার উৎপাদন করলে টিকার জোগান আরও বাড়বে। এ কারণে তার প্রতিষ্ঠান রাশিয়ার উদ্ভাবিত এই টিকা তৈরির বিষয়ে আগ্রহী।
তিনি আরো বলেন, জুন মাসে ১০ কোটি কোভিশিল্ড ভ্যাকসিন তৈরি করতে পারবে সিরাম। আগামী দিনে কোভিশিল্ডের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা আরও বাড়বে বলেই জানিয়েছে তিনি।
যদিও এই বিষয়ে ড্রাগ কন্ট্রোলার জেনারেল অব ইন্ডিয়ার পক্ষ থেকে এখনও কিছু জানানো হয়নি। উল্লেখ্য, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় আর অ্যাস্ট্রাজেনেকা যৌথভাবে মহামারি করোনার যে টিকা উদ্ভাবন করেছে, কোভিশিল্ড নামে সেই টিকা তৈরি করছে সেরাম ইনস্টিটিউট।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউতে ভারতে ব্যাপক সংক্রমণের মধ্যে ভ্যাকসিনের সঙ্কটের ফলে আরও বেশি বিপর্যয়কর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ভ্যাকসিনের সঙ্কট নিয়ে রাজ্যগুলো বারবার সরব হয়েছে। পর্যাপ্ত ভ্যাকসিন না পাওয়ার কারণে অনেক রাজ্যে ১৮-৪৪ বছর বয়সীদের টিকাকরণ কর্মসূচি বন্ধ রাখা হয়েছে। ভ্যাকসিন সরবরাহ ও সঙ্কট নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে দিল্লি, পশ্চিমবঙ্গসহ একাধিক রাজ্য।
সরকার থেকে কোভ্যাক্সিন এবং কোভিশিল্ড ভ্যাকসিন সরবরাহ করা হচ্ছে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে। কিন্তু চাহিদার তুলনায় যথেষ্ট পরিমাণ ভ্যাকসিন উৎপাদন না হওয়ায় বিপাকে পড়তে হচ্ছে রাজ্যগুলোকে।
সব কোম্পানির জন্য সমনীতি চায় সেরাম
এদিকে ভারতে ফাইজার, মডার্নার পথে হাঁটলো সেরাম ইনস্টিটিউট। তাদের দাবি, শুধু বিদেশি নয়, ভারতের সব টিকা উৎপাদনকারী সংস্থার জন্যও যেন একই নীতি নেয় দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার। ক্ষতিপূরণের দায় থেকে যেন সবাইকে রেহাই দেওয়া হয়। অর্থাৎ, টিকা নিয়ে কেউ অসুস্থ হলে ভ্যাকসিন কোম্পানির কাছে ক্ষতিপূরণ চেয়ে কেউ যেন মামলা করতে না পারে।
সেরাম ইনস্টিটিউট–এর একটি সূত্র জানিয়েছে, শুধু তাদের সংস্থা নয়, ভারতের সব টিকা উৎপাদনকারী সংস্থাকে আইনি সুরক্ষাকবচ দেওয়ার পক্ষে সেরাম। প্রতিষ্ঠানটি চাইছে, যদি বিদেশি সংস্থাগুলোকে এই সুবিধা দেওয়া হয়, তাহলে ভারতের দেশীয় সংস্থাকেও একই সুযোগ দেওয়া হোক। সেরাম–এর প্রত্যাশা, নীতি সবার জন্য একই হবে।
ভারতে আপাতত কোভিড টিকা তৈরি করছে সেরাম ইনস্টিটিউট এবং ভারত বায়োটেক। এই দুইটি সংস্থাকে এখনও পর্যন্ত ক্ষতিপূরণের দায় থেকে ছাড় দেওয়া হয়নি। যদিও বুধবার ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, তারা ফাইজার ও মডার্নাকে এই সুবিধা দিতে প্রস্তুত। তারপরই সবার জন্য সমনীতির দাবিতে তুলেছে সেরাম।
এমন সময়ে সংস্থাটির পক্ষ থেকে এমন দাবি তোলা হলো যার কদিন আগেই সেরাম ইন্সটিটিউটের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আদর পুনাওয়ালার বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেন লখনৌয়ের এক বাসিন্দা। ওই ব্যক্তির অভিযোগ, সেরামের উৎপাদিত করোনার ভ্যাকসিন কোভিশিল্ড নেওয়ার পরও তার শরীরে কোনও অ্যান্টিবডি তৈরি হয়নি।
লখনৌয়ের আশিয়ানা থানায় অভিযোগ দায়ের করা ওই ব্যক্তির নাম প্রতাপ চন্দ্র। থানায় দায়ের করা অভিযোগে তিনি বলেছেন, ৮ এপ্রিল তিনি কোভিশিল্ডের প্রথম ডোজ নিয়েছিলেন। ২৮ দিন পর তার দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার কথা ছিল। সেই ডোজ নিতে তিনি কেন্দ্রে যান। সেখানে তাকে জানানো হয়, প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজের মধ্যে সময়সীমা ছয় সপ্তাহ বাড়ানো হয়েছে। পরে ওই সময় ১২ সপ্তাহ বাড়ানো হয়।
অভিযোগে তিনি দাবি করেন, টিকা নেওয়ার পর থেকেই তিনি সুস্থ বোধ করছিলেন না। সরকার অনুমোদিত পরীক্ষাগারে তিনি অ্যান্টিবডি পরীক্ষা করান। কিন্তু তার শরীরে কোনও অ্যান্টিবডি তৈরি হয়নি। বরং তার প্লাটিলেট কমে গেছে।
প্রতাপ চন্দ্র সেরামের সিইও আদর পুনাওয়ালা ছাড়াও ড্রাগস কন্ট্রোলার জেনারেল অব ইন্ডিয়া, ভারতের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব লব আগরওয়াল, আইসিএমআর-এর প্রধান বলরাম ভার্গব এবং জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের প্রধান অপর্ণা উপাধ্যায়ের বিরুদ্ধেও অভিযোগ করেছেন।
পুলিশ অভিযোগটি গ্রহণ করেছে। কিন্তু কোনও এফআইআর দায়ের করা হয়নি। পুলিশ বলছে, বিষয়টি স্পর্শকাতরতা বিবেচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়ার আগে শীর্ষ কর্মকর্তাদের অবহিত করা হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে সেরামের দায়মুক্তির দাবি তাৎপর্যপূর্ণ হিসেবে প্রতীয়মান হচ্ছে।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৮০৮
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ