২০২০ সালের লকডাউনে ভারতে কোটি মানুষ কর্মসংস্থান হারিয়েছিলো। ফলে এক লাফে ভারতে দারিদ্র বেড়ে গিয়েছিল দ্বিগুণ। করোনা মহামারীর প্রথম ধাক্কার পর ফের দ্বিতীয় তরঙ্গ আছড়ে পড়েছে ভারতে। এ নিয়ে সম্প্রতি বেঙ্গালুরুরর আজিম প্রেমজি বিশ্ববিদ্যালয়ের টেকসই কর্মসংস্থান কেন্দ্র একটি গবেষণা পরিচালনা করেছে। এতে দেখা গেছে, গত বছর মহামারিতে অতিরিক্ত ২৩ কোটি ভারতীয় দারিদ্র্যসীমার নিচে পড়ে গেছেন। দৈনিক ৩৭৫ রুপির কম আয় যাদের, তাদের দরিদ্র হিসেবে ধরা হচ্ছে।
গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে গত ৫ মে। এতে বলা হয়, মহামারির ক্ষয়ক্ষতি বিপুল। আর এতে দরিদ্ররাই বেশি বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েছেন।
তাদেরই একজন রশিদা জলিল। করোনার এই দ্বিতীয় ঢেউ চলাকালে ভয়ে আছেন তিনি। সাত সন্তানের মুখে খাবার তুলে দেবেন কী করে? করোনাভাইরাস মহামারিতে তার মতো অসংখ্য ভারতীয় নাগরিকই দারিদ্র্যের কবলে পড়ে গেছেন। ৪০ বছর বয়সী এ নারীর স্বামী আবদুল জলিল (৬৫) ও সন্তানেরা এক বেলা খেয়ে কোনোরকম দিন পার করছেন। নয়াদিল্লির ছোট্ট একটি ফ্ল্যাটের বাসিন্দা তারা। বার্তা সংস্থা এএফপিকে রশিদা বলেন, ‘আমরা যখন ক্ষুধার্ত ও তৃষ্ণার্ত থাকি, আমি দুশ্চিন্তায় অসহায় হয়ে পড়ি। স্বামী যেটুকু আয় করে, তা দিয়ে সংসার চালাতে হয়। কিন্তু তা যথেষ্ট নয়। নিজে না খেয়ে সন্তানদের মুখে খাবার তুলে দিতে হয়।’
গত আট সপ্তাহে ভারতে করোনায় এক লাখ ৬০ হাজার মানুষ মারা গেছেন। মহামারিতে দেশটির বহু ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দরিদ্র ভারতীয়দের মধ্যে ক্ষুধার মাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আরও সংকট দেখা দিতে শুরু করেছে।
রাইট টু ফুড কর্মসূচির পরিচালক অঞ্জলী ভরদ্বাজ বলেন, ভারতের দরিদ্ররা এখন দুটি সমস্যার মুখোমুখি: স্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিক। বিপুল সংখ্যক মানুষ স্বাস্থ্য সমস্যায় পড়ার পাশাপাশি চিকিৎসার প্রয়োজনে জীবনের সব সঞ্চয় খরচ করে ফেলেছেন।
দেশটির সেন্টার ফর মনিটরিং দ্য ইন্ডিয়ান ইকনোমির তথ্যানুসারে, গত এপ্রিলেই ভারতে ৭৩ লাখ মানুষ চাকরি হারিয়েছেন। এতে সংকট আরও প্রকট হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। যারা বেকার হয়ে পড়েছেন, তাদের বেশিরভাগ সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের বাইরে ছিলেন।
আজিম প্রেমজি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক অমিত বাসোল বলেন, গত বছর অনেক মানুষ দরিদ্র হয়ে পড়েছেন। তাদের ঋণ করে চলতে হচ্ছে। খাবার কমিয়ে দিতে হয়েছে। এরপর দ্বিতীয় ঢেউ অনিশ্চিত চাপযুক্ত পরিস্থিতির মধ্যেই চলে আসছে। গত বছর ভারতে ১০ কোটি মানুষ চাকরি হারিয়েছেন। বিধিনিষেধ উঠে গেলেও ১৫ শতাংশ মানুষ গত বছরের শেষ পর্যন্ত নতুন করে কোনো কাজ পাননি। তাদের মধ্যে ৪৭ শতাংশই নারীকর্মী।
ভারতে আক্রান্ত আরও দেড় লাখ
করোনা মহামারিতে বিপর্যস্ত ভারত যেন স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে শুরু করেছে। টানা দেড় মাসেরও বেশি সময় ধরে ভয়াবহ তাণ্ডবের পর দেশটিতে এখন প্রতিদিনই কমছে করোনায় নতুন সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা। ভারতে দৈনিক মৃত্যু নেমে এসেছে তিন হাজারের কাছাকাছি। একইসঙ্গে দৈনিক সংক্রমণও কমে দাঁড়িয়েছে প্রায় দেড় লাখে।
সোমবার (৩১ মে) ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে নতুন করে করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন ১ লাখ ৫২ হাজার ৭৩৪ জন মানুষ। গত দেড় মাসেরও বেশি সময়ের মধ্যে যা সর্বনিম্ন।
এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন সংক্রমিত রোগী কমেছে প্রায় ১৩ হাজার। সর্বশেষ এই সংখ্যাসহ মহামারির শুরু থেকে দেশটিতে করোনায় আক্রান্তের মোট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ কোটি ৮০ লাখ ৪৭ হাজার ৫৩৪ জনে। এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৩ হাজার ১২৮ জন। এতে দেশটিতে মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ২৯ হাজার ১০০ জনে।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৭০০
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ