ভিয়েতনামে করোনাভাইরাসের একটি নতুন ধরন শনাক্ত হয়েছে। এটা ভারত এবং যুক্তরাজ্যে শনাক্ত হওয়া ভাইরাসের দুটি ধরনের হাইব্রিড বা মিশ্রণ। নতুন ওই ধরনটি বাতাসে দ্রুত ছড়ায়।
ভিয়েতনামের স্বাস্থ্যমন্ত্রী নগুয়েন থানহ লং গতকাল শনিবার করোনার এই মিউটেশনকে ‘খুবই বিপজ্জনক’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। করোনাভাইরাস প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হয়। পরিবর্তিত হয়ে নিজের নতুন নতুন ধরন তৈরি করে। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে করোনা শনাক্ত হওয়ার পর এখন পর্যন্ত এ ভাইরাসের হাজারো মিউটেশন চিহ্নিত করা হয়েছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, করোনার নতুন ধরনটি নিয়ে একটি সরকারি বৈঠকে কথা বলেন ভিয়েতনামের স্বাস্থ্যমন্ত্রী। বৈঠকে ভিয়েতনামের স্বাস্থ্যমন্ত্রী নগুয়েন বলেন, ভিয়েতনাম করোনার একটি নতুন ধরন শনাক্ত করেছে। ভারত ও যুক্তরাজ্যে প্রথম শনাক্ত হওয়া করোনার দুটি বিদ্যমান ধরনের একটি মিশ্র বৈশিষ্ট্য রয়েছে ভিয়েতনামে শনাক্ত করোনার নতুন ধরনটিতে।
নগুয়েন বলেন, আগে শনাক্ত হওয়া করোনার সংস্করণগুলোর চেয়ে নতুন এই হাইব্রিড ধরন বেশি সংক্রামক, বিশেষ করে বাতাসে। ভিয়েতনামে নতুন শনাক্ত হওয়া রোগীদের মধ্যে পরীক্ষা চালিয়ে করোনার এ ধরন পাওয়া গেছে বলে জানান নগুয়েন। তিনি বলেন, নতুন শনাক্ত ধরনের জেনেটিক কোড শিগগির প্রকাশ করা হবে।
ভারতে শনাক্ত করোনার নতুন ধরনটি ‘বি.১.৬১৭.২’ নামে পরিচিত। গত অক্টোবর মাসে এ ধরন শনাক্ত হয়। আর যুক্তরাজ্যে শনাক্ত করোনার নতুন ধরনটি ‘বি.১.১.৭’ নামে পরিচিত। যুক্তরাজ্যের চেয়ে করোনার ভারতীয় ধরনটি বেশি সংক্রামক বলে মত বিশেষজ্ঞদের।
ভারতে করোনার সংক্রমণের ‘বিস্ফোরণের’ জন্য নতুন ধরনকে অনেকাংশে দায়ী করা হয়। করোনার ভারতীয় ধরনকে ‘উদ্বেগজনক’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।
করোনা নিয়ন্ত্রণে ভিয়েতনামের সফলতার ইতিহাস আছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে ভিয়েতনামে করোনার সংক্রমণ বাড়তে দেখা যাচ্ছে। সম্প্রতি বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, করোনার ভারতীয় ধরনের বিরুদ্ধে ফাইজার ও অ্যাস্টাজেনেকার দুই ডোজ ভ্যাকসিন কার্যকর।
ভিয়েতনামে এখন পর্যন্ত করোনায় ৬ হাজার ৭০০ জনের বেশি করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। এ সংখ্যার মধ্যে অর্ধেকের বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে চলতি বছরের এপ্রিলের শেষ ভাগ থেকে শুরু করে বর্তমান সময় পর্যন্ত। দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনায় ৪৭ জন রোগীর মৃত্যু হয়েছে। করোনা নিয়ন্ত্রণে ভিয়েতনামে টিকাদান কার্যক্রম চলছে।
এদিকে করোনা ভাইরাসকে ঠেকাতে জার্মান সংস্থা বায়োএনটেকের সঙ্গে যৌথ ভাবে ইতোমধ্যে টিকা এনেছে মার্কিন ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি ফাইজার। তবে টিকাতেই থেমে নেই সংস্থাটি। করোনা প্রতিরোধে এবার দুটি ওষুধ তৈরি করছে ফাইজার। এর মধ্যে একটি ইনজেকশন এবং আর অন্যটি সাধারণ ওষুধের মতোই মুখে খাওয়ার ট্যাবলেট।
ফাইজার-বায়োএনটেকের করোনা টিকা ভাইরাস প্রতিরোধে ৯৫ শতাংশ কার্যকর বলে এর আগে জানিয়েছিল মার্কিন এই ওষুধ নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটি। যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেনসহ বিশ্বের একাধিক দেশ ইতোমধ্যেই তাদের টিকা অনুমোদন করেছে। এর মধ্যে ব্রিটেন সবার আগে টিকাটির অনুমোদন দিয়েছিল।
এবার ফাইজার গবেষণা চালাচ্ছে করোনার ওষুধের ওপর। আর সেই ওষুধ চলতি বছরের শেষ নাগাদ কিংবা আগামী বছরের শুরুতেই প্রয়োজনীয় অনুমোদনের পর বাজারে আসবে বলে আশা করছে সংস্থাটি। ইতোমধ্যে সেই ওষুধের প্রথম পর্যায়ের পরীক্ষা-নিরীক্ষাও শুরু হয়েছে।
সম্প্রতি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম সিএনবিসি’কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ফাইজারের সিইও আলবার্ট বোরলা জানিয়েছেন, ‘করোনা মোকাবিলায় আমরা এখন দু’টি ওষুধের ওপর গবেষণা চালাচ্ছি। এর মধ্যে একটি ইনজেকশনের সাহায্যে নিতে হবে। অপরটি ওরাল ট্যাবলেট। অর্থাৎ সাধারণ ওষুধের মতোই ট্যাবলেট আকারে পাওয়া যাবে এটি।’
তিনি আরও বলেন, সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী বছরের শুরুতেই সম্ভবত বাজারে আসবে এই ওষুধটি। আর আমাদের নজরও ওরাল ট্যাবলেটের দিকেই। কারণ এর সবচেয়ে বড় সুবিধা হল, এটা সরবরাহ করা এবং হাতের নাগালে পাওয়া, দুটোই খুব সহজ। হাসপাতালে না গিয়ে ওষুধের দোকান থেকে কিনে নিলেই হবে।
টিকার মতো মুখে খাওয়ার এই ওষুধটিও করোনা প্রতিরোধে কার্যকর হবে বলে আশাপ্রকাশ করেন তিনি।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৪৫৫
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ