আন্তর্জাতিক বিশ্বে দ্বন্দ্বের মেঘ জমছে ফিলিস্তিন ও ইসরায়েল নিয়ে। ভারী হচ্ছে ফিলিস্তিনের পক্ষ। সমর্থন হারাচ্ছে ইসরায়েল। কাঁধে যুক্তরাষ্ট্রের হাত থাকলেও, দেশটির ইসরায়েল নিয়ে অন্তর্দ্বন্দ্ব সামনে আসছে। ইউরোপের প্রথম দেশ হিসাবে আয়ারল্যান্ড সরাসরি ইসরায়েলের বিরোধিতা করছে। বয়কটের দাবি জানিয়েছে নরওয়ের রাজধানী অসলোর বিশপ ক্যারি ভিতেবার্গ। অন্যদিকে ফিলিস্তিনের দিকে সাহায্যের হাত বাড়াচ্ছে বিভিন্ন দেশ। উদারতান্ত্রিকদলগুলো স্পষ্টভাষায় জানাচ্ছে ফিলিস্তিন সমর্থমের কথা। স্বাধীন দুই রাষ্ট্রের কথআ ভাবছেন জো বাইডেন।
ইসরায়েলের বিরোধিতায় ইউরোপের প্রথম দেশ
ফিলিস্তিনে দীর্ঘদিন ইসরায়েলি দখলদারিত্বের বিরোধিতা জানাল আয়ারল্যান্ড। পাশাপাশি ইসরায়েলের ওপর অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের একটি সংসদীয় প্রস্তাবে সমর্থন দিয়েছে আয়ারল্যান্ড।
এতে দেশটিতে নিযুক্ত ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কারের কথাও রয়েছে।
বার্তাসংস্থা আল জাজিরা জানিয়েছে, মঙ্গলবার আইরিশ আইনপ্রণেতাদের অনেকেই ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে ফিলিস্তিনের পতাকা বা চেকার্ড কেফায়া নকশার মাস্ক পরে সংসদে গিয়েছিলেন।
এদিন আইরিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইমন কোভেনি বলেছেন, বিরোধী দল সিন ফেইনের আনা প্রস্তাবটি আয়ারল্যান্ড-জুড়ে অনুভূতির গভীরতার সুস্পষ্ট সংকেত।
এ প্রস্তাব পাসের মাধ্যমে আয়ারল্যান্ডই হবে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রথম দেশ, যারা ইসরায়েলি দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চলেছে।
ফিলিস্তিনি ভূমিতে ইসরায়েলিদের বসতি স্থাপন প্রসঙ্গেও স্পষ্ট মন্তব্য করেছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তার মতে, ‘এটি কার্যত আত্মসাৎ’।
ফিলিস্তিনি ভূমিতে ইসরায়েলের দখলদারিত্ব নিয়ে ইউরোপীয় নেতাদের মুখে ‘আত্মসাৎ’ শব্দের উচ্চারণ এটিই প্রথম বলে মনে করা হচ্ছে।
দখলদার ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চলাকালে বিশ্বের অনেক শহরের মতো আয়ারল্যান্ডের রাজধানী ডাবলিনেও ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে বিক্ষোভ করেছেন হাজারো মানুষ।
ইসরায়েলকে বয়কটের আহ্বান
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার সাধারণ জনগণের ওপর দখলদার ইসরায়েলের বর্বর হত্যাযজ্ঞের বিরুদ্ধে সরব আন্তর্জাতিক অঙ্গনের সাথে কণ্ঠ মিলিয়েছেন নরওয়ের রাজধানী অসলোর বিশপ ক্যারি ভিতেবার্গ।
তিনি ইসরায়েলকে বয়কট করার জন্য নরওয়ের গির্জার প্রধানদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
বিশপ ভিতেবার্গ বলেছেন, আমি বিশ্বাস করি সাধারণ বয়কট আন্দোলন হতে পারে ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে সেরা অহিংস প্রতিরোধ আন্দোলন।
তিনি আরও বলেন, আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় ফিলিস্তিনি জনগণের জন্য আর্থিক সহায়তা করার নৈতিক ও আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। আমরা নরওয়ের গির্জাগুলোর প্রতি ‘ইসরায়েল বয়কট’ আন্দোলনে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানাই। আমরা মনে করি- সমস্যার সমাধান ও শান্তি আনার জন্য ইসরায়েল থেকে পুঁজি প্রত্যাহার এবং তেলআবিবের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ ভালো উপায় হতে পারে।
ক্ষমা চাইলেন জাতিসংঘ কর্মকর্তা
সম্প্রতি ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধ নিয়ে ইহুদিবাদী ইসরায়েলের পক্ষে কথা বলার ঘটনায় গাজাবাসীর কাছে ক্ষমা চাইলেন জাতিসংঘের ফিলিস্তিন শরণার্থীবিষয়ক ত্রাণ সংস্থা-আউএনআরডব্লিউএর পরিচালক ম্যাথিয়াস স্কামলে।
গাজাবাসীর কাছে ক্ষমা চাওয়ার পাশাপাশি তিনি এই অবরুদ্ধ উপত্যকায় ইসরায়েলের সাম্প্রতিক পাশবিক হামলায় নিহতদের প্রতি শোক ও সমবেদনাও জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, গাজার বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা করার কোনো ব্যাখ্যা থাকতে পারে না। গত দুই সপ্তাহ গাজা উপত্যকা ও সেখানকার অধিবাসীদের জন্য ছিল অত্যন্ত ভয়ঙ্কর।
এর আগে ইহুদিবাদী ইসরায়েলের পক্ষে কথা বলে প্রচণ্ড সমালোচনা ও নিন্দার মুখে পড়েন জাতিসংঘের এ প্রতিনিধি। তিনি গত সোমবার ইসরায়েলের ১২ নম্বর টিভি চ্যানেলকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে দাবি করেন, কয়েকটি ব্যতিক্রম ছাড়া ইসরায়েল গাজার বেসামরিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালায়নি।
গাজা নিয়ন্ত্রণকারী ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস তাৎক্ষণিকভাবে স্কামলের ওই বক্তব্যের নিন্দা জানায়। হামাস ঘোষণা করে, আউএনআরডব্লিউএর পরিচালকের দায়িত্ব ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া, ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর ইসরায়েলি পাশবিক হামলার ব্যাখ্যা দেওয়া নয়।
গাজা পুনর্গঠনে কাতারের সহায়তা
ফিলিস্তিনে ১১ দিনের যুদ্ধে ইসরায়েলের নির্বিচারে বিমান হামলায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে অবরুদ্ধ গাজা। মধ্যপ্রাচ্যের তেলসমৃদ্ধ দেশ কাতার গাজা পুনর্গঠনে ৫০০ মিলিয়ন (৫০ কোটি) ডলার দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যস্থতাকারী হিসেবেও বেশ কয়েকবার ভূমিকা রেখেছে। এ ছাড়া ফিলিস্তিনে দীর্ঘদিন ধরে শত শত কোটি ডলারের মানবিক ত্রাণ সহায়তা করে যাচ্ছে কাতার।
কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন আবদুল রহমান আল থানি এক টুইটবার্তায় বলেছেন, আমাদের ফিলিস্তিনি ভাইদের সহযোগিতায় আমরা সবসময় পাশে আছি। ফিলিস্তিনে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত আমাদের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।
যুদ্ধবিরতি পর্যবেক্ষণে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী
এদিকে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধবিরতি যথাযথভাবে কার্যকর হচ্ছে কিনা তা দেখতে মধ্যপ্রাচ্যে সফরে এসেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। গাজা ও ইসরায়েল সফর শেষে তিনি বুধবার মিসর এবং জর্ডানও যান।
জর্ডানের বাদশাহ দ্বিতীয় আব্দুল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী গাজা পুনর্গঠনে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার কথা পুনর্ব্যক্ত করেন। এ সময় তিনি কাতারের এ আর্থিক সহযোগিতার কথাও উল্লেখ করেন।
প্রসঙ্গত, গাজা উপত্যকার আবাসিক ও বেসামরিক অবস্থানগুলোর ওপর সাম্প্রতিক ইসরায়েলি ভয়াবহ বিমান হামলায় ২৫৩ ফিলিস্তিনি নিহত ও ১৯৪৮ জন আহত হন। এরপর গত ২১ মে রাত ২টায় মিসরের মধ্যস্থতায় উভয়পক্ষের সম্মতিতে গাজায় যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠিত হয়।
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/১৬৪৯
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ