নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি কামরুল ফারুকের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগের অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। অনুসন্ধান শুরুর বিষয়টি যুগান্তরকে নিশ্চিত করেছেন পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও নারায়ণগঞ্জ জেলার এসপি জায়েদুল আলম। কামরুলের বিরুদ্ধে জমি ও মার্কেট দখলে সহায়তা, ব্যবসায়ীকে নাজেহাল এবং চাঁদাবাজ-মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সখ্যের অভিযোগ রয়েছে। এসপি জায়েদুল আলম মঙ্গলবার বিকালে যুগান্তরকে বলেন, একজন অতিরিক্ত এসপিকে অনুসন্ধানের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হবে। মামলার তদন্ত শেষে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া সংশ্লিষ্ট ডিআইজির নির্দেশে এসপি অফিস থেকে পৃথক তদন্ত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি আসাদুজ্জামান।
২৪ সেপ্টেম্বর নরায়ণগঞ্জের এসপির কাছে ওসি কামরুল ফারুকের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেন সিদ্ধিরগঞ্জের কদমতলী এলাকার বাসিন্দা মোসা. রেজিয়া বেগম। এতে তিনি উল্লেখ করেন, ২০ সেপ্টেম্বর স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধির নেতৃত্বে শতাধিক সশস্ত্র ক্যাডার হামলা চালিয়ে আমার ভূ-সম্পত্তি দখল করে নেয়। কিন্তু পুলিশ ওই জনপ্রতিনিধির পক্ষ নেয়ায় ৪ দিন থানায় ঘুরেও জমি দখলের ঘটনায় মামলা করতে পারিনি।
এছাড়া ১৫ ও ১৬ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইজিপির কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন সিদ্ধিরগঞ্জের মিতালী মার্কেট দোকানদার সমিতির সদস্য দুলাল শেখ। লিখিত অভিযোগে দুলাল শেখ উল্লেখ করেন, সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি কামরুল ফারুকের মদদে প্রকাশ্যে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার এসআই কাজল মজুমদারের উপস্থিতিতে ৮ সেপ্টেম্বর সকাল ৯টার দিকে প্রতিপক্ষ বহিরাগত সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে মিতালী মার্কেটে হামলা চালায়। হামলাকারীরা দোকানদার সমিতির ট্রেড ইউনিয়নের অফিসে ভাংচুরসহ নগদ অর্থ ও গুরুত্বপূর্ণ কাগজ দলিলপত্র লুট করে নিয়ে যায়। মার্কেটের সভাপতি ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাজী ইয়াছিন মিয়া এ বিষয়ে ওসি কামরুল ফারুকের সহযোগিতা চান। ওসি ‘দেখছি, দেখব’ বলে কোনো প্রকার সহযোগিতা করেননি। উল্টো অবৈধভাবে প্রতিপক্ষকে সহায়তা করেন। বর্তমান কমিটি থানায় হাজির হয়ে এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ দিলেও তা আমলে নিতে গড়িমসি করতে থাকেন ওসি। এক পর্যায়ে ওসি কামরুল ফারুক হামলাকারীদের পক্ষ নিয়ে তাদের সঙ্গে মীমাংসার প্রস্তাব দেন। মীমাংসায় রাজি না হওয়ায় ওসি হামলাকারীদের পক্ষে একটি মামলা নেন। এ মামলায় আমাদের কয়েকজন কর্মকর্তা ও সদস্যদের আসামি করা হয়।
৬ জুলাই দুরন্ত সত্যের সন্ধানে (দুসস) নামে একটি মানবাধিকার সংগঠনের কর্মকর্তা মোহাম্মদ আহসান হাবিব ওসি কামরুল ফারুকের বিরুদ্ধে আইজিপির বরাবরে লিখিত অভিযোগ দেন। এতে তিনি বলেন, চোরাই তেল কারবারি, চাঁদাবাজ ও মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ওসির সখ্য রয়েছে। আহসান হাবিব যুগান্তরকে জানান, আইজিপির কাছে তার অভিযোগ দেয়ার খবর পাওয়ার পর সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি কামরুল ফারুক তার সংগঠনের কার্যালয়ে পুলিশ পাঠিয়ে হয়রানির চেষ্টা করেন। পরে সংগঠনের কর্মকর্তা জেলা পুলিশ সুপারের সঙ্গে মোবাইল যোগাযোগ করলে পুলিশ ফিরে আসে। রনি লাইন্স নামে স্থানীয় চুন কারখানার মালিক চাঁন মিয়া বলেন, কামরুল ফারুক গত বছরের আগস্টে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় যোগদানের পর আমাকে থানায় ডেকে নেন। বলেন, সব ব্যবসায়ীরা থানায় টাকা দেন। আপনাকেও টাকা দিতে হবে। আমি টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানাই। এতে ওসি আমার ওপর রুষ্ট হন। ১২ মার্চ আমি আমার বাড়ির সামনে রাস্তার কাজ (ঢালাই) করছিলাম। এ সময় একজন এএসআই এসে বলেন, আপনাকে ওসি স্যার এবং পরিদর্শক অপারেশন স্যার যেতে বলেছেন। আমি তাৎক্ষণিক থানায় গিয়ে প্রথমে পরিদর্শকের (অপারেশন) রুমে গেলে তিনি খুব খারাপ ব্যবহার করেন। পরে ওসির রুমে গেলে তিনি আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। হুমকি দিয়ে বলেন, তোর নামে ১২-১৪টি মামলা আছে। আরও ১২-১৪টি মামলা দিয়ে তোকে জেলখানায় ঢুকিয়ে দেয়া হবে। বিষয়টি নিয়ে আমি এসপির কাছে লিখিত অভিযোগ করি। কোনো প্রতিকার না পেয়ে তিনি ১১ মে ঢাকা রেঞ্জ ডিআইজি বরাবর অভিযোগ করি। ১৩ মে স্বরাষ্ট্র সচিব এবং ১১ জুন আইজিপির কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। এরপরও কিছু না হওয়ায় নারায়ণগঞ্জে প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন করি। জানতে চাইলে পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি আসাদুজ্জামান যুগান্তরকে বলেন, সিদ্ধিরগঞ্জের ওসির বিরুদ্ধে ব্যবসায়ী চাঁন মিয়ার দেয়া অভিযোগটি তদন্তের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন ডিআইজি হাবিবুর রহমান। এ জন্য নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত এসপি মোস্তাফিজুর রহমানকে বিশেষ দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তবে এ সংক্রান্ত ডিআইজির নির্দেশ এখন এসপি অফিসে পৌঁছেনি বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত এসপি মোস্তাফিজুর রহমান। অভিযোগের বিষয়ে ওসি কামরুল ফারুক যুগান্তরকে বলেন, আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে সবই মিথ্যা। মিতালী মার্কেটে দুটি গ্রুপ রয়েছে। সেখানে সব সময় পুলিশ পাহারায় থাকে। কোনো পক্ষই সেখানে ঢুকতে পারছে না। তিনি বলেন, জমিজমার ঝামেলার বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার এখতিয়ার পুলিশের নেই। তাই রেজিয়া বেগমের অভিযোগের ভিত্তি নেই। মানবাধিকার সংগঠনের নামে যে ব্যক্তি অভিযোগ দিয়েছেন, তিনি বিএনপির ক্যাডার ছিলেন। আর চাঁন মিয়া একটি ভুয়া টেলিভিশন চ্যানেলের মালিক সেজে অনেক মানুষের জমি দখল করেছেন। কয়েক বছর আগেও তার সংসার চলত না। এখন তিনি কমপক্ষে ৫০ কোটি টাকার মালিক।
আপনার মতামত জানানঃ