করোনাভাইরাসের ভয়াবহতা প্রতিরোধের অন্যতম উপায় দেশের ৬০ থেকে ৭০ ভাগ মানুষকে টিকার আওতায় আনা। কিন্তু অনিশ্চয়তায় পড়েছে দেশের টিকাদান কার্যক্রম। ৫৮ লাখের কিছু বেশি মানুষকে টিকা দিয়ে গত ২৬ এপ্রিল দেশের টিকার প্রথম ডোজ দেওয়া স্থগিত করা হয়। বর্তমানে মজুদ টিকা দিয়ে সর্বোচ্চ সাড়ে চার লাখ দ্বিতীয় ডোজ টিকা দেওয়া সম্ভব হবে। এরপরও এই ডোজ থেকে বঞ্চিত হবেন প্রায় সাড়ে ১৪ লাখ (১৪ লাখ ৩৯ হাজার ৮২৪) মানুষ।
বাংলাদেশের হাতে এখন চীনের পাঁচ লাখ উপহারের টিকা রয়েছে। তারা আরো ২০ লাখ ডোজ উপহার হিসেবে দিবে বলে জানা গেছে। এর বাইরে চীন ও রাশিয়া থেকে টিকা কেনার চেষ্টা চলছে। তবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অদক্ষতার কারণে চীনের টিকা পেতে দেরি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। কিন্তু সেই টিকা আসলেও তা অক্সফোর্ডের টিকার দ্বিতীয় ডোজ হিসেবে ব্যবহার করার কোনো সুযোগ নাই। তার জন্য অক্সফোর্ডের টিকাই লাগবে।
সিরামের সাথে বেক্সিমকোর চুক্তি
ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট থেকে বাংলাদেশ বেক্সিমকোর মাধ্যমে তিন কোটি ডোজ টিকা কেনার চুক্তি করেছিলো। চুক্তি অনুাযায়ী প্রথম চালানের ৫০ লাখ টিকা আসে গত জানুয়ারি মাসে। ফেব্রুয়ারি মাসে আসে ২০ লাখ। এরপর সিরাম আর কোনো টিকা পাঠায়নি। কথা ছিলো, প্রতি মাসে ৫০ লাখ ডোজ টিকা পাঠাবে তারা। বাংলাদেশে এই চুক্তির বাইরে ভারত সরকারের কাছ থেকে শুরুতেই ২০ লাখ ডোজ টিকা উপহার হিসেবে পেয়েছে।
এছাড়া নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরের সময় উপহার হিসেবে পেয়েছে আরো ১২ লাখ। ভারতের সেনাপ্রধান বাংলাদেশের সেনাপ্রধানকে উপহার দিয়েছেন এক লাখ। সবমিলে বাংলাদেশ হাতে টিকা পেয়েছে এক কোটি তিন লাখ। দুই ডোজ করে এই টিকা ৫১ লাখ ৫০ হাজার মানুষকে দেয়া সম্ভব ছিলো।
টিকার জন্য অপেক্ষা
রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ড. মোশতাক হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, এখন টিকার জন্য অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই। এক্ষেত্রে মেধাস্বত্ব আইন শিথিল করে বিভিন্ন দেশে উৎপাদনের উদ্যোগ নেওয়া দরকার। কারণ যেসব দেশ টিকা উৎপাদন করে নিজেদের টিকাদান নিশ্চিত করছেন, তারাও ঝুঁকিতে পড়বেন। কারণ সারাবিশ্বের মানুষ যদি টিকা না পায় তাহলে কোনো একটি-দুটি দেশ সুরক্ষিত থাকতে পারবে না।
এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এমএনসি অ্যান্ড এইচ শাখার লাইন ডিরেক্টর ডা. মো. শামসুল হক বলেন, দেশে টিকার যে মজুত আছে সেটি শেষ হলে টিকা কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হবে। আগামী মাসে কোভ্যাক্সি থেকে এক লাখ টিকা আসতে পারে। তবে কবে আসবে সেটি সুনির্দিষ্ট করে বলা এই মুহূর্তে সম্ভব নয়। যদিও এই টিকার সিরিঞ্জ দেশে এসেছে। শিগগিরই ভারত, রাশিয়া বা চীন থেকে টিকা আসার কোনো সম্ভাবনা আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আপাতত তেমন কোনো সম্ভাবনা নেই।
প্রসঙ্গত, করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে গত ২৫ জানুয়ারি দেশে টিকাদান কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়। গত ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয় গণটিকা দান কার্যক্রম।
বিএসএমইউ’র সাবেক ভিসি অধ্যাপক ডা. কামরুল ইসলাম জানান, সর্বোচ্চ চার মাসের (১৬ সপ্তাহ) মধ্যে দ্বিতীয় ডোজের টিকা নিতে হবে। এরপর নিলে শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হবে না। এরপর আবার নতুন করে দুই ডোজই নিতে হবে। তবে দ্বিতীয় ডোজ না নিতে পারলে কোনো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হবে না।
তিনি আশা করেন, এখনো সময় আছে হয়তো যুক্তরাষ্ট্র থেকে অক্সফোর্ডের টিকা এরমধ্যে পাওয়া যাবে। আর অক্সফোর্ড আর ফাইজারের টিকার মিক্সিং করার গবেষণা প্রায় সফল। এভাবে আরো হলে সংকট কেটে যাবে।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৭১৩
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ