নিজের ইচ্ছাকে গুরুত্ব দিতে চেয়েছিলেন ইরানি চলচ্চিত্রকার বাবাক খোরামদিন। চেয়েছিলেন স্বাধীন ও মুক্তভাবে চলতে। নিজের ইচ্ছাই কাল হলো তার। ছেলের নিজের ইচ্ছাকে গুরুত্ব দিয়ে স্বাধীনভাবে চলাফেরাটাকে মেনে নিতে পারেননি বাবা মা। সমাজ ও ধর্মের কথায় গুরুত্ব দিতে গিয়ে শেষে খুন করেছেন নিজেরই প্রতিভাবান ছেলেকে। এই ঘটনায় পরিচালকের বাবা-মাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
জানা যায়, এক ইরানীয় পরিচালকের টুকরো করা দেহ পাওয়া গিয়েছে পশ্চিম তেহরানের একবাতান নামে একটি এলাকায়। অভিযোগ, নিজ বাবা-মা তাকে হত্যার পর মৃতদেহ খণ্ড-বিখণ্ড করে আবর্জনার স্তূপে ফেলে দিয়েছিলেন। ব্যাগের মধ্যে দেহ লোপাটের চেষ্টা করা হয়েছিল বলেই জানিয়েছে পুলিশ। এই ঘটনায় পরিচালকের বাবা-মাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তারা জেরায় নিজেদের অপরাধ স্বীকার করে নিয়েছেন বলেই খবর।
৪৭ বছর বয়সি ওই পরিচালকের নাম বাবাক খোরামদিন। লন্ডনে থাকতেন তিনি। সেখানেই পরিচালকের কাজ করতেন। কিছু দিন আগেই ইরানে নিজের বাড়িতে ফেরেন তিনি।
এই প্রসঙ্গে তেহরান ক্রিমিনাল কোর্টের প্রধান মোহাম্মদ শাহরিয়ারি জানান, জেরায় পরিচালকের বাবা অপরাধের কথা স্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘‘আমার ছেলে বিয়ে করেনি। ও আমাদের হেনস্তা করত। নিজের ইচ্ছা মতো সব কিছু করত। এতে সমাজে আমাদের সম্মানহানি হচ্ছিল। তাই আমি ও আমার স্ত্রী এই সিদ্ধান্ত নিই। প্রথমে ওকে ঘুমে ওষুধ খাওয়ানো হয়। তার পরে ছুরি মেরে ওকে খুন করি। তার পরে দেহ টুকরো করে ব্যাগে ভরে ফেলে দিয়ে আসি। এই কাজের জন্য আমাদের কোনও অনুশোচনা নেই।’’
বাবাক খোরামদিন নামের ওই পরিচালক যুক্তরাজ্যের লন্ডনে কাজ করতেন। অবিবাহিত জীবনযাপন করা নিয়ে বাবার সঙ্গে তর্কের রেশ ধরে তথাকথিত ‘অনার কিংলিং’ বা পারিবারিক মর্যাদা রক্ষার দোহাইয়ে খুনের শিকার হন তিনি।
ইরানের তেহরান ক্রিমিনাল কোর্টের প্রধান মোহাম্মদ শাহরিয়ারি জানান, বাবাকের বাবা আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন- তিনিই নিজ সন্তানকে হত্যা করে মৃতদেহ টুকরো-টুকরো করেছেন এবং তা ময়লার স্তূপে ফেলে দিয়ে এসেছেন।
তেহরানের পশ্চিমাঞ্চলের একবাতান শহরে ওই পরিবারের বসবাস। তাদের বাসার কাছেই ময়লার ব্যাগ ও একটি সুটকেসে গত শনিবার বাবাকের মৃতদেহের বিভিন্ন টুকরো পাওয়া যায়। ইরানি পুলিশ জানিয়েছে, তাদের বাসাতেই ওই হত্যার এভিডেন্স পেয়েছে তারা। এ সময় বাবাকের বাবা-মাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ইরানের পুলিশ জানিয়েছে, সম্প্রতি ইরানে কিছু ঘটনা সামনে এসেছে যেখানে সমকামী সন্তানকে তার বাবা-মা খুন করেছে। এই ধরনের অপরাধের জন্য ইরানে ১০ বছরের সাজা শোনানো হয়। এই সাজা আরও কড়া করা যায় কি না, সেই নিয়ে আলোচনা চলছে সে দেশের আইনমন্ত্রণালয়ে।
৪৭ বছর বয়সী বাবাক খোরামদিন ২০০৯ সালে তেহরান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সিনেমার ওপর একটি মাস্টার্স ডিগ্রি-সহ গ্রাজুয়েশন করেন। এক বছর পর লন্ডনে পাড়ি জমান তিনি।
মধ্যপ্রাচ্য বিশ্লেষক এবং ইরান ইন্টারন্যাশনাল টিভির সম্পাদক জ্যাসন ব্রডস্কি দ্য ডেইলি মেইলকে বলেন, ‘ইরানে পারিবারিক সহিংসতার যে সুদীর্ঘ প্যাটার্ন আমরা দেখে আসছি, আমার ধারণা, বাবাক খোরামদিনের ভয়ঙ্কর মৃত্যু সেটির স্রেফ একটি সাম্প্রতিকতম উদাহরণ।’
তিনি বলেন, ‘সমকামিতার দায়ে পরিবারের হাতে খুন হওয়া আলি ফাজেলি মনফারেদের মর্মান্তিক মৃত্যুসংবাদের রেশ ধরেই আমরা বাবাকের মৃত্যুর কথা জানলাম। গত বছর অনার কিলিংয়ের নামে বাবার হাতে শিরচ্ছেদের মাধ্যমে খুন হওয়া ১৪ বছর বয়সী কিশোরী রোমিনা আশরাফির ঘটনাও মনে আছে আমাদের।
ব্রডস্কি বলেন, ২০২০ সালে ইরানে একটি শিশু সুরক্ষা আইন পাস হওয়া সত্ত্বেও অনার কিলিং ও পারিবারিক সহিংসতা বন্ধ হয়নি। ইরানের এই বিষয়ের ওপর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নজর দেওয়া উচিত।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৮১৩
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ